...

পেপের উপকারিতা গুলো জেনে রাখুন

বাংলাদেশের এমন কোন জায়গা পাওয়া যাবে না যেখানে পেঁপে পাওয়া যায় না।পেপের উপকারিতা অনেক।পেঁপে একটি সবজি বা ফল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী । কাঁচা অবস্থায় পেঁপে সবজি আর পাকা অবস্থায় ফল। এই জন্য পেঁপেকে ফলের রাজা বলা হয়। পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল, অ্যানটিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। শুধু তাই নয়, পেঁপেকে ভিটামিনের স্টোর বলা হয়।জেনে নিন পেপের উপকারিতা গুলো।

পেপের উপকারিতা

পেপের উপকারিতা গুলো জেনে রাখুন

পেপের উপকারিতা ১ঃব্রণ ও কালো দাগ তুলতে

পাকা পেঁপে কালো দাগ দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। পাকা এক টুকরো পেঁপে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ভালো করে ঘষে দিন। আধা ঘণ্টা রাখুন, তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৩/৪ বার এভাবে করতে থাকেন। পেঁপেতে থাকা প্যাপিন মরা কোষ দূর করে ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করে তোলে।

চলুন জেনে নেই রূপচর্চায় পেঁপে কি কি উপকার করে

পেঁপেতে আছে ভিটামিন এ এবং এক ধরনের প্রোটিন যা ত্বকের মৃতকোষ দূর করতে সাহায্য করে।
কাঁচা পেপে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পুরো মুখে নিয়মিত লাগালে ব্রণের সমস্যা কমবে এবং ব্রণের দাগ চলে যাবে।
পেঁপে বাটা পায়ের ফাটা দূর করে পাকে মসৃণ করতে সাহায্য করে। পেঁপের খোসা মুখের ত্বকে, হাতে কিংবা পায়ে লাগিয়ে রাখতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠবে।
মুখের ত্বকে নিয়মিত পেঁপের রস লাগালে ত্বকে বয়সের ছাপ দূর হবে।
পেঁপে বাটা ও মধু এক সাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখতে হবে। ত্বকের শুষ্কতা চলে যাবে ও ত্বক কোমল হবে।
চুল শ্যাম্পু করার আগে চুলে পেঁপে বাটা বা পেপের রস লাগালে খুশকি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

পেপের উপকারিতা ২ঃহজমশক্তি বাড়াতে

হজমের গোলমাল একটি ব্যাপক সমস্যা। হজমশক্তি কমে গেলে অম্বল হয়ে যায়, মুখে চোকা ঢেকুর ওঠে, পেট ব্যথা শুরু হয়। কখনো চিনচিনে ব্যথা, কখনো ভয়ঙ্কর ব্যথা হয়। কখনো কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় না আর কখনো পেট খারাপ হয়। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, শরীরে অবসাদ দেখা দেয়। পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম আছে যা খাবার হজমে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও প্রচুর পানি ও দ্রবণীয় ফাইবার আছে। যার ফলে হজমের সমস্যায় যে সকল মানুষ ভুগে থাকেন তাঁরা নিয়মিত পাকা বা কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে পেঁপে খুব উপকারি।

পড়ুন  ভিটামিন বি পাবেন যে ১৭টি খাবারে জেনে রাখুন

পেপের উপকারিতা ৩ঃরক্ত আমাশয়

রক্ত আমাশয় দেহের অনেক বড় সমস্যা। প্রত্যেহ সকালে কাঁচা পেঁপের আঠা ৫/৭ ফোঁটা ৫/৬ টি বাতাসার সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। ২/৩ দিন খাওয়ার পর রক্তপড়া কমতে থাকবে।

পেপের উপকারিতা ৪ঃক্রিমি

যে কোনো প্রকারের ক্রিমি হলে, পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এরপর আধা ঘন্টা পরে উঞ্চ পানি আধ কাপ খেয়ে তারপরে ১ চামচ বাখারি (শসা-ক্ষীরার মতো এর স্বাদ) চুনের পানি খেতে হয়। এভাবে ২ দিন খেলে ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে। ক্রিমি বিনাশের ক্ষেত্রে পেঁপে এটি ফলপ্রদ ওষুধ।

পেপের উপকারিতা ৫ঃআমাশয়

আমাশয় ও পেটে যন্ত্রনা থাকলে কাঁচা পেঁপের আঠা ৩০ ফোঁটা ও ১ চামচ চুনের পানি মিশিয়ে তাতে একটু দুধ দিয়ে খেতে হবে। একবার খেলেই পেটের যন্ত্রনা কমে যাবে এবং আমাশয় কমে যাবে । আমাশয় থেকে মুক্তি পাওয়ার অদ্ভুত শক্তি আছে কাঁচা পেঁপের আঠায়।

পেপের উপকারিতা ৬ঃযকৃত বৃদ্ধিতে

এই অবস্থা হলে ৩০ ফোঁটা পেঁপের আঠাতে এক চামচ চিনি মিশিয়ে এক কাপ পানিতে ভালো করে নেড়ে মিশ্রণটি সারাদিনে ৩বার খেতে হবে। ৪/৫ দিনের পর থেকে যকৃতের বৃদ্ধিটা কমতে থাকবে, তবে ৫/৬ দিন খাওয়ার পর সপ্তাহে ২ দিন খাওয়াই ভালো। এভাবে ১ মাস খেলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।

পেপের উপকারিতা ৭ঃরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও ই। এই ভিটামিন গুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এছাড়া পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা চোখের জন্য উপকারী।

পড়ুন  জেনে নিন চকলেটের অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো

পেপের উপকারিতা ৮ঃডায়াবেটিস প্রতিরোধে

চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি আর্দশ ফল। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেঁপে রাখা উচিত। পেঁপে ডায়াবেটিস হওয়া প্রতিরোধ করে।

পেপের উপকারিতা ৯ঃহাড়ের ব্যথা রোধে

পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে, নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় যা হাড় মজবুত করে ব্যথা হ্রাস করে।

পেপের উপকারিতা ১০ঃস্ট্রেস হ্রাস করতে

সারাদিন ক্লান্তি এক নিমিষে দূর করে দিতে পারে এক প্লেট পেঁপে। এতে থাকা ভিটামিন সি স্ট্রেস হ্রাস করে। University of Alabama এর মতে প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আমাদের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।

পেপের উপকারিতা ১১ঃক্যান্সার প্রতিরোধক

কাঁচা পেঁপে শরীরের জন্য খুব উপকারী। এতে রয়েছে প্রোটিওলাইটিক এনজাইম। এই উপাদানটি প্রটিন হজম করতে সাহায্য করে । ক্যান্সার নিরাময়েও ভূমিকা রাখে, এই জন্য পেঁপে রান্নার পরিবর্তে কাঁচা খাওয়াটাই উত্তম। পেঁপেতে আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনোক্সিড যা দেহে ক্যান্সারের কোষ তৈরিতে বাঁধা দেয়। Harvard School of Public Health’s Department এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পেঁপের বিটা কেরোটিন উপাদান কোলন ক্যান্সার, প্রোসটেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

পেপের উপকারিতা ১২ঃশরীর শুকিয়ে গেলে

কোনো কারণ নেই অযথা শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে, এমন অবস্থায় মুখোমুখি অনেককেই হতে দেখা যায়। বিশেষ করে অল্পবয়সীদের ক্ষেত্রে এ উপসর্গের প্রকোপ বেশি। শরীরে অবসাদজনিত ক্লান্তি, একটা মনমরা ভাব, পড়াশোনা বা কাজকর্মে অনীহা প্রভৃতি উপসর্গ এর সাথেই আসে। প্রায়ই এর সাথে জড়িয়ে থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য। এক্ষেত্রে পেঁপে খুবই ফলপ্রসূ। কাঁচা বা পাকা যে অবস্থায়ই হোক। সকালে ও বিকেলে প্রতিদিন কয়েক টুকরো করে খেতে হবে। অন্তত এক মাস নিয়মিত খেতে হবে।

পড়ুন  যে অভ্যাস গুলোর কারণে ওজন বৃদ্ধি পায়

পেপের উপকারিতা ১৩ঃউচ্চরক্তচাপ কমাতে

কাঁচা পেঁপে আমাদের দেহের সঠিক রক্ত সরবরাহে কাজ করে। আমাদের দেহে জমা থাকা সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে যা হৃদপিণ্ডের রোগের জন্য দায়ী। বেশিভাগ চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছরের পর থেকে মানুষের রক্তচাপসংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়। হয়তো রক্তচাপ বাড়ে নয়তো কমে। রক্তচাপ বাড়লে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। হঠাৎ পড়ে গেলে শরীরের কোন অংশ অকেজো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, শরীরে অসাড়তা দেখা যায়। উচ্চরক্তচাপ আক্রান্তরা কাঁচা বা পাঁকা পেঁপে ব্যবহার করতে পারেন। দুটোই উপকারী। তবে খাবেন কয়েক টুকরো এবং নিয়মিত। কয়েক মাস খেয়ে যেতে হবে। আশা করা যাই নিয়মিত পেঁপে খেলে উচ্চ রক্ত চাপের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এমনকি এতে করে হৃদপিণ্ড জনিত যে কোনো সমস্যার সমাধান হয়।

পেপের উপকারিতা ১৪ঃফাইলেরিয়া রোগ হলে

ফাইলেরিয়া মশাবাহিত রোগ। ফাইলেরিয়ার বিভিন্ন উপসর্গ নিরাময়ে পেঁপে গাছকে ব্যবহার করা যায়। কয়েকটি পেঁপে পাতা সংগ্রহ করে সেগুলোকে গরম পানিতে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। এবার পাতাগুলোকে গরম অবস্থায় সেঁকে নিয়ে নিয়মিত কয়েক দিন সেঁক দিলে ফাইলেরিয়ার উপসর্গ অনেকটা কমে যাবে।

পেপের উপকারিতা ১৫ঃঅনিয়মিত মাসিক পরিএাণ করতে

পেঁপে খাওয়ার ফলে আপনার অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়ে যাবে। সুতরাং যাদের মাসিকের সমস্যা আছে, তারা নিয়মিত পেঁপে খেতে পারেন।

পেপের উপকারিতা ১৬ঃশ্বাস- প্রশ্বাসের আরোগ্য

শ্বাস- প্রশ্বাসের আরোগ্য ক্ষেত্রে পেঁপের ভূমিকা অনেক। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শ্বাস- প্রশ্বাসের সমস্যা কমে যায়।

পেপের উপকারিতা ১৭ঃকোলেস্টেরল হ্রাস করে

পেঁপেতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ধমনীতে কোলেস্টেরল জমতে বাঁধা প্রদান করে। ধমনীতে চর্বি জমার কারণে হার্ট অ্যাটাকের মত ঘটনাও ঘটতে পারে। সাথে কাঁচা পেঁপে খেলে মেদ কমে, এতে কোনো খারাপ কোলস্টেরল, চর্বি বা ফ্যাট নেই। মোটা মানুষ দুশিন্তা মুক্ত হয়ে খেতে পারেন।

 

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About Deb Mondal

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.