...

আঁচিল দূর করার উপায়

আঁচিল হচ্ছে ছোট রুক্ষ প্রবৃদ্ধি যা চামড়ার উপর অনেকটা ফুলকপির মত বৃদ্ধি অথবা কঠিন ফোস্কার মত দেখায় । এটা সাধারণত মানুষের হাতে বা পায়ে অথবা শরীরের অন্যান্য স্থানে দেখা দেয়  । মানবদেহে ১০ রকমের আঁচিল বা ফুসকুড়ি হতে পারে, এর মধ্যে বেশিরভাগগুলোকেই নিরীহ বলে মনে করা হয় ।

আঁচিল এক প্রকার ভাইরাসজনিত সংক্রামণ। এটি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশে উঠতে দেখা যায়। আঁচিল কিছুটা ফোস্কার মত। মুখের ত্বকে উঠলে এটি খুব বিব্রতকর দেখায়। আঁচিল সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়। উঠলে যেন আর যেতেই চায় না। তাই আঁচিল দূর করার জন্য বিভিন্ন প্রকার ওষুধ খাওয়া হয়। এই ওষুধের পরিবর্তে আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে আঁচিল দূর করতে পারেন।

আঁচিল কাদের হয়?

আঁচিল হওয়ার প্রবনতার দিকে নারী-পুরুষ উভয়েই সমানে সমান। তবে, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আঁচিল হওয়ার হারও বেড়ে যায়, যেমনঃ মধ্যবয়সের পর আঁচিল হওয়ার প্রবণতা বেশি ।

শরীরের কোথায় আঁচিল হতে পারে?

আঁচিল শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে, তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ঘাড়ে, বগলে, কুঁচকিতে, বুকের উপরের দিকে ( নারীদের ক্ষেত্রে স্তনের নিচে) । এগুলো চোখের পাতায় এমনকি নিতম্বের ভাঁজেও হতে পারে। আপনার শরীরে আঁচিল একটা, দুইটা বা অনেকগুলো একসাথে হতে পারে।

আঁচিল কেন হয়?

ঠিক কি কারণে আঁচিল হয় তা এখনও জানা যায় নি। তবে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হচ্ছেঃ

আপনারা একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, শরীরের ভাঁজে ভাঁজে অর্থাৎ যেখানে ত্বকে-ত্বকে অথবা কাপড়ের মাধ্যমে চামড়ায় ঘর্ষণ সৃষ্টি হয়, সে সব স্থানেই আঁচিল জন্মাতে দেখা যায়।
যে সব মানুষের ওজন তুলনামূলক ভাবে বেশি এবং যারা স্থুলকায় তাদের আঁচিল হওয়ার হারও অনেক বেশি, কারণ তাদের শরীরের ভাঁজের সংখ্যাও বেশি।
অতিরিক্ত ওজন টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকি বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা যায়, যাদের এধরনের ডায়াবেটিস আছে তাদের আঁচিল অন্যদের চেয়ে বেশি হয়। যেহেতু, টাইপ-২ ডায়াবেটিস হলে রক্তে সুগার লেভেল বেশি থাকে, সেহেতু আমরা সহজে বলতে পারি আঁচিল এর সাথে ইনসুলিন নামক হরমোনের সম্পর্ক আছে (ইনসুলিন হরমোন রক্তে সুগার এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে) ।
ইনসুলিন মাংসের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং এটা ত্বকের কোষের প্রতিরুপ সৃষ্টিতেও ভুমিকা রাখে। এভাবে পরবর্তীতে আঁচিল বিকাশেও ভুমিকা রাখে। একারণে আঁচিল হওয়াকে ডায়াবেটিসের পূর্ব সতর্ক সংকেত হিসেবে ধরা হয়। সবার হবে তা কিন্তু নয়, তবে ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করে সচেতন থাকা উচিত।
গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে (second trimester) আঁচিল হতে দেখা যায়। ( গর্ভকালীন সময়ের ১৩-২৭ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কে second trimester বলা হায়। অর্থাৎ, ৪,৫,৬ নাম্বার মাস)
যাদের Crohn’s disease থাকে তাদের আঁচিল হওয়া মোটামুটি সাধারণ {এটা একধরণের chronic condition যেটা পরিপাক নালিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে অতিসার(diarrhea) , পেট ব্যথা(abdominal pain), খিঁচুনি( cramping) , কোষ্ঠকাঠিন্য( constipation), মলদ্বারে রক্তক্ষরণ (rectal bleeding) হয়ে থাকে }। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাদের Crohn’s disease আছে, তাদের আঁচিল সাধারণত পায়ু পথের মুখে হয়ে থাকে।
আঁচিল এর সাথে জিনগত একটা সম্পর্ক আছে, অর্থাৎ, একই পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরও হতে পারে।

পড়ুন  জাদুর মতোই স্থায়ীভাবে আঁচিল দূর করবে পান! জানুন পদ্ধতি

কিভাবে আঁচিলকে শনাক্ত করতে করবেন?

মনে আছে নিশ্চয়ই শুরুতে বলেছিলাম, আঁচিল বৃন্তের সাহায্যে চামড়ার সাথে যুক্ত থাকে। তাই আঁচিলকে চেনার প্রধান মাধ্যমই হচ্ছে এর বৃন্ত(peduncle)। বেশির ভাগ আঁচিল খুব ছোট হয়, আকারে ২ মিলি এর চেয়েও ছোট। তবে কিছু কিছু বড়ও হয়, আকারে কয়েক সেন্টিমিটার হতে পারে। আঁচিল হাত দিলে নরম লাগে। এরা নমনীয়, গোলাকার, বলিরেখার মতো( wrinkly) ও অপ্রতিসম হতে পারে। তবে, কিছু আঁচিল সুতোর মতো চিকন অথবা চালের দানার মতো হতে পারে। এদের রঙ সাধারণত ত্বকের রঙের (fleshed-colored) অনুরুপ হয়। অনেকসময় আঁচিলের রঙ আশেপাশের ত্বকের রঙ থেকে কালচে হয়ে থাকে। আর এটা হয়ে থাকে Hyperpigmentation এর জন্য।( Hyperpigmentation হচ্ছে এক ধরণের harmless condition যাতে শরীরের কিছু কিছু জায়গার রঙ অন্যান্য জায়গার চেয়ে কালচে হয়)। যদি কোনো আঁচিল মুচড়িয়ে যায়, তাহলেও এটা কালো হতে পারে, সেখানে রক্ত-প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য।

আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায়

১) কলার খোসা : কলার খোসার মাধ্যমে আঁচিল দূর করা সম্ভব। খোসার ভিতরের অংশটি বের করে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এখন আঁচিলের উপর লাগিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ুন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কলার খোসায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যা আঁচিল দূর করতে সাহায্য করে।

পড়ুন  নারকেল তেলের ৮টি স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিন

২) টি ট্রি অয়েল : টি ট্রি অয়েলে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে যা ত্বকের যে কোন ইনফেকশন দ্রুত দূর করতে সাহায্য করে। প্রথমে কিছু তুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এবার টি ট্রি অয়েলে ভিজিয়ে নিয়ে আঁচিলের উপর লাগান। কয়েক ঘন্টা এভাবে রেখে দিন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি দিনে তিনবার ব্যবহার করলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।

যৌনাঙ্গের আঁচিল

যৌনাঙ্গের আঁচিল

৩) রসুন : রসুনের মাধ্যমেও আঁচিল সহজে দূর করা যায়। কয়েকটি রসুনের কোয়া কুচি করে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্টটি ত্বকের আঁচিলের উপর লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে বেশিক্ষণ রাখবেন না, ক্ষতি হতে পারে।

৪) পেঁয়াজের রস : আঁচিল দূর করতে পেঁয়াজেরও প্রয়োজন রয়েছে। পেঁয়াজ কুচি করে কেটে নিন। পেঁয়াজ কুচি ও আধা চামচ লবণ মিশিয়ে সারাদিন ঢাকনা দিযে রেখে দিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি আঁচিলের উপর ব্যবহার করুন। পরদিন সকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিরাতে এটি ব্যবহার করুন দেখবেন আঁচিল দ্রুত সেরে গেছে।

৫) অ্যালোভেরা জেল : অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। আঁচিলের উপর কিছু পরিমাণ অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ম্যাসেজ করুন। ত্বকে জেল শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। এটি দিনে তিনবার ব্যবহার করলেই হবে।

পড়ুন  চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া কিছু উপায়

আঁচিল কীভাবে দূর করা যায় ?

এ ব্যাপারে চর্ম রোগ বিশেষেজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জিনান মেহরাজ বলেন,আঁচিল অনেকভাবেই দূর করা যায়। ক্রায়োসার্জারি মাধ্যমে দূর করা যায়। তবে দাগ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ক্রিমের মাধ্যমে দূর করা যেতে পারে (কিছু দিন ক্রিম মাখতে হয়)। আরেকটা হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড লেজার দিয়ে দূর করা যেতে পারে।

আঁচিল সারানোর চিকিৎসাপদ্ধতি

আঁচিল অপসারণের জন্য অনেক চিকিৎসা এবং পদ্ধতি বিদ্যমান রয়েছে । এর মধ্যে স্যালিসিলিক এসিড সম্পৃক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি অধিক কার্যকারিতা লাভ করেছে । ক্রায়োথেরাপি পদ্ধতিও স্যালিসিলিক এসিডের মতই কার্যকরী দৃশ্যমান হয়, তবে এ ক্ষেত্রে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও হয়নি ।

আঁচিল সারানোর থেরাপি ও অন্যান্য পদ্ধতি

ক্যারাটোলাইসিস পদ্ধতির মাধ্যমে ত্বকের মৃত কেষ|কোষগুলো সরিয়ে এ চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় ৷
ইলেকট্রোডেসিকেশান পদ্ধতি ।
ক্রায়োসার্জারী; এ পদ্ধতিতে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
সার্জারীর মাধ্যমে আক্রান্ত কোষকে কেটে অপসারন করার মাধ্যমে ৷
লেজার চিকিৎসা ৷
ইনফ্রা রেড কোয়াগুলেটার-এক্ষেত্রে অবলোহিত রশ্মির সাহায্যে আক্রান্ত কোষের চিকিৎসা করা হয় ৷ এটি কম ব্যয়বহুল চিকিৎসা ৷
ডাক্টটেপ অক্লুসন থেরাপি- এটি একটি থেরাপি পদ্ধতি যার মাধ্যমে আঁচিলের চিকিৎসা করা হয় ৷
গার্লিক এক্সট্রাক্ট থেরাপি- এ চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে ৫০ শতাংশরও বেশি ক্ষেত্রে উপকারিতা পাওয়া গেছে । এ ক্ষেত্রে রসুন থেতলিয়ে এর পুরু স্তর আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করা হয় ।

আঁচিল একবার হলে কি আবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

এরকম কখনো হয় নি যে, একবার অপসারণ করার পর আবার আঁচিল হয়েছে। তবে, যাদের আঁচিল হওয়ার হার বেশি তাদের এমনিতে আঁচিল হতে পারে, কিন্তু সেটা অপসারণের জন্য অবশ্যই না।

**মনে রাখবেন, বাসায় কেউ নিজে নিজে আঁচিল অপসারণের চেষ্টা করবেন না

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.