...

আম্মুর সব কাজেই দুলাভাই খুঁত ধরে, তাঁর নিজেরও অনেক কুকীর্তি…..

আম্মুর

আম্মুর সব কাজেই দুলাভাই খুঁত ধরে, তাঁর নিজেরও অনেক কুকীর্তি…..

বিচিত্র মানুষের জীবন আর এই বিচিত্র জীবনের বহু বাক, জীবন আছে বলেই সমস্যা আছে। এই সব সমস্যার সমাধান ও আছে। কিছু কিছু সময় এই সব সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে, মানুষের দ্বারা তৈরী কিছু সমস্যা মাঝে মাঝে জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এই সব ঝামেলা মোকাবেলা করে জীবনকে এগিয়ে নিতে হবে। আমি সোমা কামাল সবাইকে সবসময় এটাই বলে থাকি, জীবন আপনার এটাকে গুছিয়ে নেবার দ্বায়িত্ব আপনারই। দীর্ঘ সময় থেকে আপনাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে আমরা পরামর্শ দেবার চেষ্টা করছি, আশা করছি এই ধারা অব্যাহত থাকবে, আপনিও চাইলে আপনার যেকোন সমস্যার কথা আমাদেরকে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানাতে পারেন, আমাদেরকে লেখার ঠিকানা: www.facebook.com/apoardoctor
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।
“আমার বাবা মারা গেছেন এক যুগ আগে। আমরা তিন বোন। আমি সবার ছোট। আপুদের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বড় আপু,দুলাভাই আর আমি-আম্মু একসাথে থাকি। আমি অবশ্য চার বছর যাবত পড়াশোনার জন্য ঢাকাতে আছি। আম্মুর কিছু শারীরিক অসুস্থতা,অর্থনৈতিক অসুবিধার জন্য আপুকে একসাথে থাকার জন্য বলেছিল। আপুও চাকরি করত, তাই সবার সুবিধার কথা ভেবে একসাথে আমরা থাকা শুরু করি।
সমস্যা হল,আমার দুলাভাই আম্মুর সবকিছুতে দোষ ধরে। আপু দুলাভাই সারাদিন কাজে বাইরে থাকত,আম্মু ঘরের রান্নাবান্না সহ সব কাজ একা করত। বুয়া থাকলেও আম্মু বেশী কাজ করে। দুলাভাই আম্মুর রান্না থেকে শুরু করে প্রতিটা কাজে খুঁত ধরে আর আজেবাজে কথা বলে,চরম দুর্ব্যবহার করে। আপু মাঝেমধ্যে এক দুইবার প্রতিবাদ করলেও বেশিরভাগ সময় আম্মুকেই দোষারোপ করে আর সবচেয়ে দুঃখের বিষয়,সেও চরম খারাপ ব্যবহার করে। আম্মু ভুল করতেই পারে কিন্তু এতটা খারাপ আচরণ সে কেন পাবে এটা অনেকেই আপুকে বুঝিয়েছে। কিন্তু আপু উলটা সবার সাথে আম্মুর নামে নালিশ করে। আমি আগে ছোট ছিলাম তাই কিছু বলতে পারতাম না। এখন ভালভাবে বুঝিয়ে বলা এমনকি প্রতিবাদ করতে গেলেও কোন কাজ হয় নাই। বরং আপু বলে আমরা কেউ তাকে বুঝিনা, তাকে প্রেশার দেই। মাঝেমাঝে আপু আম্মুর কাছে মাফ চেয়ে নেয়,কিন্তু এইসব অন্যায় আচরণ কি ভুলা যায়?
আম্মু প্রায় সময় অসুস্থ থাকে,এইসব অপমান সহ্য করতে না পেরে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবুও যেন ওদের একটু মায়া হয়না। অনেক সময় বাইরের লোকজন,আত্মীয়দের সামনেও একইভাবে দুর্ব্যবহার করতে থাকে দুইজন মিলেই। আম্মুর আলাদা থাকা সম্ভব না, তাই বেচারিকে ওদের সাথেই থাকতে হচ্ছে। এই সমস্যার কোন সমাধান হবে কিনা জানিনা। দুলাভাইর কিছু কুকীর্তি আছে,এতকিছু এখানে লিখছি না। আমার বোন তার স্বামীর বিরুদ্ধে কিছু শুনতে পারেনা। আপু আপাতত কিছু করছে না,বাচ্চা হয়েছে তাই। আমার ইচ্ছা আছে,দেড় বছরের মধ্যে আম্মুকে ঢাকা নিয়ে এসে একসাথে থাকব। সেভাবেই এগোচ্ছি। এমনকি বিয়ের সময়ও স্বামী-শ্বশুরবাড়িকে বলে নিব আম্মু আমার সাথেই থাকবে। তাতে বিয়ে না হলেও আমার আপত্তি নাই। কিন্তু আম্মুকে এই বিপদ থেকে আমার উদ্ধার করতেই হবে। ওদের সাথে বেশিদিন থাকলে আম্মুর কী যে হবে আমি ভাবতেও পারিনা।
আপু এটা বোঝে যে কিছুদিন পর আম্মু আমার সাথে থাকবে। তাতেও রাগ করে। আমার আরেক আপু আলাদা থাকে সংসার নিয়ে। সে আম্মুর কোনরকম দায়িত্ব নেয়ার মধ্যে নাই। আমার বড় বোনকে আমি আম্মুর মতই ভালবাসতাম। কিন্তু এসব কারণে ওর উপর আমার অনেক রাগ। আমি জানি আপু আপনিও ওকে অনেক খারাপ ভাবছেন। কিন্তু বাস্তব তো এটাই। সবসময় আল্লাহর কাছে বলি,সবকিছু ঠিক থাকুক,সবাই ভাল থাকুক,তবুও এইসব সমস্যা চলছেই। যখনি দেখি বা শুনি আম্মু আপু মিলেমিশে আছে,কত যে ভাল লাগে। কিন্তু সেটা খুবই কম। আম্মু যতদিন ওদের সাথে আছে,এই সমস্যা মিটবে বলে মনে হয়না। আম্মুকে ও বুঝায়ে বলি সব কথা কানে না নিতে,কিন্তু এত্ত খারাপ ব্যবহার কীভাবে ইগ্নোর করা যায়?

পড়ুন  বড় ভাই দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হই, দুইবার খুন করার চেষ্টাও করি…

এই মুহূর্তে আমি কিছু করতে পারছিনা,অনেক কষ্ট নিয়ে আপনার কাছে সমাধান চাইলাম আপু। আপনি পারলে একটা সমাধান বলবেন প্লিজ। কী করলে বা কাকে কীভাবে বললে আম্মুর সাথে এই অন্যায় বন্ধ হবে?”

পরামর্শ:
প্রথমেই বলি আপু, আপনার পরিবারে আর কে আছে, আত্মীয় স্বজন কারা কারা আছে বা তাঁদের সাথে আপনাদের কেমন সম্পর্ক সেসব কিছু লেখেন নি। তাই আমি আসলে বুঝতে পারছি না যে কাকে বললে বা কীভাবে বললে আপনাদের সমস্যার সমাধান হবে। আর তাছাড়া এই বিষয়টি এমনই একটি বিষয় যে থানা পুলিস করে তো আর এর সমাধান হবে না।

আমি যেটুকু বুঝি আপু, আপনার মায়ের উচিত হচ্ছে না মেয়েদের সংসারে থাকা, যেহেতু তাঁর মেয়ের জামাই বিষয়টা পছন্দ করছে না। আপনি একটু সহজ করে ভাবুন, আপনার বোন স্বামীর পক্ষ না নিয়ে কী করবে? বোন এখন চাকরি করছে না, এদিকে বাচ্চা হয়েছে, আপনাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। এমন সময়ে স্বামী যদি বোনকে ছেড়ে দেয় বা স্বামীর সাথে বোনের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়, তাহলে বোন কোথায় যাবে? বাবা বেঁচে নেই যে বাবার কাছে যাবে, মা নিজেই আশ্রিতা। তাহলে? এই জন্যই হয়তো আপনার বোন এমন করে। তিনি বুঝতে পারছেন না এটা করা কত বড় অন্যায়, সবার ওপরে মায়ের স্থান।

পড়ুন  স্বামীর বয়স ৪০ আমার বয়স ১৭, তাই দেবরের সাথেই আমি…

যাই হোক, বোন যদি নিজের জীবনে সুখী থাকতে চায় থাকুক। স্বামীর কুকীর্তিও একান্তই তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। সমস্যাটা যখন একত্রে থাকা নিয়ে, সেক্ষেত্রে একত্রে না থাকাই উচিত। থাকতে গেলে সমস্যা হবেই। আপনি যেহেতু বলছেন যে দেড় বছরের মাঝে মাকে নিয়ে থাকবেন, চেষ্টা করে দেখুন ততদিন মাকে অন্য কোথাও রাখা যায় কিনা। নানা বাড়ির দিকের কোন আত্মীয়ের বাসায়, মাত্র এটা বছরেরই তো ব্যাপার। প্রয়োজনে আপনি একটু কষ্ট করে হলেও মায়ের খাওয়া খরচটা দিলেন। আর যদি সেটা করা সম্ভব না হয়, তাহলে আপাতত সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই, আপু। পৃথিবীতে সব সমস্যার চটজলদি সমাদান থাকে না। আপনি কী করেন বা আপনার কোন উপার্জন আছে কিনা জানি না। আপনার নানা বাড়ির দিকে কারা আছেন বা আপনার মেয়ের সামান্য কিছু হলেও সম্পদ আছে কিনা তাও জানি না। যদি থেকে থাকে, সেগুলো কাজে লাগান।
আপনার উপার্জন থাকলে মাকে এনে বছর খানেকের জন্য একটা মহিলা হোস্টেলে রাখতে পারেন, খরচ কমানোর জন্য আপনি হলে থাকলেন। পরে দুজনে মিলে বাসা নিলেন যখন সামর্থ্য হয়। আরেকটি কাজ করা যেতে পারে, আপনি আপনার আরেক বোনের সাথে কথা বলুন। তিনি মায়ের দায়িত্ব দীর্ঘ মেয়াদে নিতে পারবে না। কিন্তু কয়েক মাসের জন্যও কি পারবে না? আগামী দেড়টা বছর মা যদি স্থায়ী ভাবে কারো সাথে না থেকে দুই মেয়ের কাছে অল্প অল্প করে থাকেন, তাহলে কারো ওপরেই চাপ পড়বে না, ফলে মায়ের সাথেও খারাপ ব্যবহার বন্ধ হবে।
এগুলোর কোনটাই করা সম্ভব না হলে শেষ একটা কাজই করা যায়, আপু। সেটা হলো খুব কষ্ট করে হলেও আপনি মাকে হাত খরচের টাকা পাঠাবেন। মাকে বলবেন সেই টাকা দিয়ে আপু দুলাভাইয়ের সংসারে এটা সেটা বাজার করতে। হাতে টাকা থাকলে সবাই দাম দেয়। মা খরচ করতে শুরু করলে দুলাভাইয়ের ব্যবহারও একটু নমনীয় হয়ে আসবে, বোনও উঁচু গলায় কিছু বলতে সাহস পাবে না। কোনরকমে সময়টুকু পার করে ফেলা কেবল।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
আমি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক বা আইনজীবী নই। কেবলই একজন সাধারণ লেখক আমি, যিনি বন্ধুর মত সমস্যাটি শুনতে পারেন ও তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। পরামর্শ গুলো কাউকে মানতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কেউ যদি নতুন কোন দিক নির্দেশনা পান বা নিজের সমস্যাটি বলতে পেরে কারো মন হালকা লাগে, সেটুকুই আমাদের সার্থকতা। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে দেখা করে বা কাউকে না জানিয়ে গোপনে পরামর্শ চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন এই পেজে। লিঙ্ক- www.facebook.com/apoardoctor

পড়ুন  আমি বুঝতে পারছি না, আংকেল সুযোগ পেলেই আমার সাথে….

সূত্র: প্রিয়ডটকম

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.