নতুন যে প্রাণ এক পরিবার ভরা মানুষের জীবনে অবিস্মরণীয় আনন্দের যে ছোঁয়া দিয়ে যায়, তার জুড়ি মেলা আসলেই ভার। কিন্তু এই নতুন সদস্যকে নিয়ে হতে হয় অনেক বেশি কৌশলী, কারণ তার জন্য আমাদের স্বাভাবিক পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়া হতে পারে অনেক কষ্টের একটি বিষয়। তাই সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পরিবারের সবাইকে, তথা মা বাবাকে হতে হবে অনেক বেশি সাবধানী। অনেকেই প্রথমবার মা বাবা হবার কারনে, অনেকে আবার সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে বুঝে উঠতে পারেন না যে তাদের নবজাতক সন্তানটি সুস্থ আছে কিনা। অনেক সময় অনেক সামান্য কারণে উদগ্রীব হয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটে যাওয়া হয়, তো কখনো কখনো আবার বড়সড় বিপদের চিহ্নও অনভিজ্ঞতার কারণে অবহেলিত রয়ে যায়। ফলে নবজাতককে সহ্য করতে হয় অনেক কষ্ট। বাচ্চার খাবারের ও খুমের সাথে মানিয়ে নিতে পারা যায় কিছু দিন পরেই, আবার গোসল দেয়াটা শিখে ফেলা যায় অনেক সহজে। কিন্তু নবজাতকের জন্মের পরপর তার শারীরিক অবস্থা কেমন হবে সে বিষয়ে জ্ঞান থাকেনা অনেকেরই। অথচ শিশুর জন্মের পরপর তার শারীরিক অবস্থাই নির্দেশ করবে যে কোন শারীরিক সমস্যা বা ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত কিনা আপনার আদরের সন্তান। তাই নবজাতকের জন্মের পর পর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সব অভিভাবকেরই পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা জরুরি। আসুন জেনে নেই নবজতকের জন্মের পরের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে-
নবজাতকের স্বাস্থ্য সচেতনতা জেনে নিন
⇒ নবজাতকের জন্মের পরপর সাধারণত তার রঙ একটু লালচেই হয়। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই লালচে ভাব কমতে শুরু করে। তবে পরবর্তীকালে যদি গায়ে লাল চাকা বা র্যাশ দেখা যায় এবং ২/১ দিনের মধ্যে না কমে তখন সাবধান হতে হবে। আমাদের দেশের আবহাওয়ার কারণে গরমে, অ্যালার্জির কারণে বা পোকা মাকড় বা মশার কারণে হতে পারে এসব র্যাশ। যদি র্যাশ বেশি হয়ে থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অযথা নিজের টোটকা ব্যাবহার করতে যাবেন না। এতে উপশম হবার থেকে ঝামেলাই বেশি হতে পারে।
⇒ এছাড়াও যদি শিশু জন্মের পরপর বা কিছু দিন পরে হঠাৎ করে নীল হয়ে উঠতে শুরু করে তবে তৎক্ষণাৎ সাবধান হতে হবে এবং ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। শিশুর নীল হয়ে যাওয়াটা অক্সিজেনের অভাবে, শ্বাসনালীর নানা সমস্যায় বা হৃৎপিণ্ডের নানা অসুখের কারণে হতে পারে। যদি এমন কোন অসুখ থেকে থাকে বাচ্চার তবে তা জন্মের কিছু দিনের মাঝেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাই এমন কোন উপসর্গ দেখা দিলে দেরি করবেন না ডাক্তারের পরামর্শ নিতে।
⇒ এছাড়াও শিশুর জন্মের ঠিক পরেই বা দুইতিন দিন পরে যদি চোখ-জিভ এবং দেহের চামড়া হলুদ মনে হয়, সঙ্গে হলুদ প্রস্রাবও হয়, তবে জন্ডিস হতে পারে বলে ধারনা করা যায়। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। দুই তিন দিন পর জন্ডিস দেখা গেলে তা সাধারণত মারাত্মক হয় না, পাঁচ ছয় দিন পর চলেও যায়। তবে জন্ডিস শিশুর যে বয়সেই দেখা যাক না কেন অভিভাবকদের উচিত নয় রোগটাকে হেলাফেলা করা। মালা পরিয়ে বা টোটকা-টাটকি করে জন্ডিস কমবেনা বরং কারণটা খুঁজে বের করে চিকিৎসা করিয়ে নিয়ে সন্তানের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন।
⇒ এছাড়াও শিশুর জন্মের পরপর প্রস্রাব পায়খানা ঠিক মত হচ্ছে কি না তা লক্ষ্য করুন। যদি জন্মের পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একবারও প্রস্রাব বা পায়খানা না করে থাকে শিশু সেক্ষেত্রে তখনই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। শিশুর জননাঙ্গের সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। সময় মত চিকিৎসা হলে বাচ্চা দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবে।
⇒ এছাড়াও জন্মের কিছুদিন পরে থেকে লক্ষ্য করুন শিশুর নড়াচড়ার প্রতি। নবজাতক খুব বেশি নড়াচড়া না করলেও যখন করবে তখন খেয়াল করবেন সে তার সব হাত পা বা অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নাড়াতে পারে কি না। কোনটা নাড়াতে সমস্যা হচ্ছে বা না নাড়াতে পারলে তাকে ডাক্তার দেখান ও চিকিৎসা নিশ্চিত করুন।