ক্যান্সার! নামটা শুনলে প্রথমেই প্রিয়জনকে হারানোর ভয় হয়। আবার তারপর হয় নিজের মৃত্যুর আশংকাও। ইংল্যান্ডের ‘ক্যান্সার রিসার্চ’ এর গবেষণামতে সংক্রামক রোগের মতন ভ্যাকসিন ব্যবহার করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় না। আবার সব ক্যান্সার আগে থেকে প্রতিরোধযোগ্যও নয়। কিন্তু সামান্য সতর্কতা আর নিয়ম মেনে চললে ক্যান্সারের মত মারাত্মক একটি রোগের ঝুঁকি কমে যায় অনেকাংশেই। আপনি নিজে একটুখানি খেয়াল রাখলেই নিজের কিংবা পরিবারের সবার বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারেন। আসুন জেনে নেই ক্যান্সারকে দূরে রাখার অসম্ভব প্রয়োজনীয় আর উপকারি কিছু বিষয়-
ক্যান্সার মুক্ত থাকার ২০টি সহজ উপায় জেনে নিন
১- পরিবারে সবার মাঝে প্রচুর পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সকালে খালি পেটে তো বটেই, সারাদিনের কাজের ফাঁকেও পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
২- সূর্য থেকে যতটা সম্ভব আপনার ত্বককে নিরাপদ রাখুন। ছাতা, সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন।
৩- প্রচুর তাজা ফলমূল, সবুজ শাক, লতাপাতা জাতীয় খাবার এবং তাজা সবজি খান। অরগানিক ফলমূল, শাকসবজি কিনতে চেষ্টা করুন ।
৪- অতিরিক্ত ওজন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। আপনি যদি ভীষণ মোটা হন,তবে নিয়মিতভাবে ওজন কমিয়ে BMI ঠিক রেখে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারবেন।
৫- ধূমপানের কারনে ফুসফুস, কিডনি, গলা ও মু্খের ক্যান্সার হয়। আপনার জীবন বাঁচানোর সব চাইতে কমন এবং দরকারি উপায় সিগারেট বর্জন। এর পরোক্ষ ধোঁয়া আরও বেশি বিপজ্জনক। নিজের সাথে সাথে আপনি আসলে নিজের পরিবারের উপর ছড়িয়ে দিচ্ছেন ক্যান্সারের বিষ।
৬- আপনার ফ্রাইং প্যানটি কি পুরনো হয়ে গেছে? দাগ পড়ছে? বুঝে নিন যে এর মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। আর তাই এখুনি বদলে ফেলুন। চেষ্টা করুন ননসটীক, দাগ পড়ে না এমন সব বাসন-কোসন ব্যবহার করতে।
৭- শুধু শুধু পয়সা নষ্ট হবে ভেবে অবহেলা করবেন না। বছরে অন্তত একবার রুটিন ক্যান্সার চেক আপের জন্য যান। ক্যান্সার ধরা পরার পর চিকিৎসার চাইতে প্রথম পর্যায়ে ক্যান্সারের উপসর্গ ধরতে পারলে তা দশ গুণ সহজে নিরাময় যোগ্য। তাই শরীরে ক্যান্সারের বীজ থাকলে রেগুলার চেক আপের মাধ্যমে অনেক আগেই প্রতিরোধের সুযোগ নিন।
৮- শারীরিক পরিশ্রম ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কিন্তু এটি আপনার সম্পূর্ণ দেহের জন্যই স্বাস্থ্যকর। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে দৈনিক ৩০ মিনিটের হাল্কা ব্যায়াম কি খুব বেশি কষ্টকর?
৯- আপনার পছন্দের সাবান, লিকুইড সোপ কিংবা বডিকেয়ার সামগ্রী গুলোতে Triclosan নামের উপাদানটি আছে কিনা দেখে নিন। থাকলে তা অবশ্যই ব্যবহার বন্ধ করুন। Triclosan ভরা এইসব পণ্য ক্যান্সারের কারন হতে পারে। এমনকি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবানের বদলে সাধারন সাবান ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
১০- নিজ পরিবারের মেডিক্যাল ইতিহাস জানতে চেষ্টা করুন। কোলন, স্তন এবং ওভারিয়ান ক্যান্সারের মত বিশেষ ধরনের ক্যান্সার পরিবারের মধ্যে সঞ্চালিত হয়।
১১- আপনার পরিবারে ক্যান্সারের কোনো ধরনের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। ডাক্তারের পরামর্শ,যথার্থ স্ক্রীনিং এবং সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ভীষণ।
১২- মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন। কোন কারনেই অতিরিক্ত টেনশন করবেন না।
১৩- প্রযুক্তি ব্যবহারে নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য করুন। আপনার সেলফোন থেকে নির্গত ফ্রিকোয়েন্সি মস্তিষ্কের ক্ষতির কারন হতে পারে। তাই শুধু ছোট কল বা টেক্সট এর ব্যবহারে নিজেকে অভ্যস্ত করুন। অন্যান্য মুক্ত ডিভাইস ব্যবহার করুন, যার মাধম্যে সরাসরি সেলফোনের প্রভাব থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন।
১৪- সব সময় খাদ্যতালিকায় মাংস আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাতকরা মাংস এর পরিবর্তে মাছ বা মুরগির মাংস বেছে নিন। যদি খেতেই হয়, অল্প পরিমানে খান ।
১৫- খুব ভাল করে বাজার থেকে আনা ফল ও সবজি ধুয়ে নিন। ফল ও সবজিতে প্রচুর কীটনাশক স্প্রে করা হয়। ভাল ভাবে না ধুয়ে এসব কীটনাশক সমৃদ্ধ খাবার খেলে তা আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
১৬- অপ্রয়োজনীয় মেডিক্যাল স্ক্যান এড়িয়ে চলুন । যদিও সিটি স্ক্যান ও X-রে মেডিক্যাল পরীক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ, কিন্তু এসব ডায়গনিস্টিক সরঞ্জাম থেকে যে উচ্চ-রে বের হয়, তা লিউকেমিয়ার কারন হতে পারে। তাই অপ্রয়োজনীয় স্ক্যান এড়িয়ে চলুন।
১৭- খাবার পানি খুব ভাল ভাবে ফিল্টার করুন।
১৮- কখনই শরীরকে অবহেলা করবেন না।
১৯- শরীরের যে কোন ধরনের ব্যথায় দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। কোন কোন ক্যান্সারের পূর্ব উপসর্গ হিসেবে শরীরে বিভিন্ন রকম ব্যাথা হয়।
২০- মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ। সামুদ্রিক মাছে ক্যান্সার প্রতিরোধক অনেক জরুরি উপাদান থাকে। তবে মাছের শুঁটকি খাবেন না।