...

৩০ দিনে ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়

মাত্রাতিরিক্ত ওজন একজন মানুষকে দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলে। মিডিয়া এবং সমাজ থেকে আমাদের প্রতিনিয়ত একটা কথাই শুনতে হয় তা হল “অস্থুল বা পাতলা ধরনের হওয়াই সুন্দর”। কিন্তু মূল কথা হল সকল স্বাস্থ্য গড়নই সুন্দর। অতিরিক্ত ওজনে আপনাকে দেখতে কেমন দেখাবে সেটা মূল সমস্যা না, মূল সমস্যা হল আপনার স্বাস্থ্য। কিন্তু শুধু অনুশীলন করা এবং অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সবসময় চিন্তা-ভাবনা আপনাকে তেমন কোন ভালো ফল দিবে না। ওজন কমানোর জন্য আপনাকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।ওজন

৩০ দিনে ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়

প্রথমতঃ আপনাকে মেনে নিতে হবে যে আপনার ওজন স্বাভাবিক নয় এবং মানুষের গড় ওজন থেকে অনেক উপরে।

দ্বিতীয়তঃ অতিরিক্ত ওজন কমানর জন্য নিজেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করা এবং শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাওয়া যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করেন।

যদি কেউ এই পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করেন এবং সঠিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গিকার করেন তাহলে ৩০ দিনে ওজন কমানোর জন্য একটি খাদ্য পরিকল্পনা আছে যা আপনাকে সত্যিই ৩০ দিনে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

কিভাবে আপনি ৩০ দিনে ওজন কমাবেন?
ওজন কমানোর জন্য সবসময় একটি স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি থাকে। খুব দ্রুত বা কঠোরভাবে ওজন কমানো এবং বাড়ানো একজন ব্যক্তির জন্য এবং তার শরীরের জন্য বিপদজনক। এরকম ওজনে উঠা-নামা করা দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং খনিজ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং ব্যক্তিকে আরো অসুস্থ এবং রোগাক্রান্ত করে দিতে পারে। এখানে ওজন কমানোর জন্য একটি পরিকল্পিত এবং পূরনাঙ্গ পথ আছে যার মাধ্যমে আপনি কি খাচ্ছেন এবং কখন খাচ্ছেন তা লক্ষ্য রাখতে পারবেন।

৩০ দিনে ওজন কমানর একটি সহজ খাদ্যপরিকল্পনা নিম্নে তুলে ধরা হলঃ

১. সত্য স্বীকার করার মানুষিকতা
এক মাসে ওজন কমানোর জন্য আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল আপনাকে সত্যটা স্বীকার করতে হবে যে আপনি আপনার ওজন বাড়িয়ে ফেলেছেন এবং আপনার ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি। হয়তো ইতিমধ্যে আপনি অতিরিক্ত স্বাস্থ্যের অধিকারী এবং বর্তমানে কলেজ বা কর্মক্ষেত্রে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। পরিস্থিতি যেরকমই হোক না কেন, সবসময় মনে রাখবেন যে যখন থেকে আপনি পরিস্থিতি স্বীকার করার মানুষিকতা দেখানো শুরু করবেন ঠিক তখনি আপনি নিজেকে এবং নিজের সব কিছু পরিবর্তন করতে পারবেন। সুতরাং, নিজেকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে পরিবর্তন শুরু করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন এই মুহূর্তে আপনার ওজন কতটুকু এবং একটি লক্ষ্য আছে যেটি এই এক মাসে আপনাকে পুরন করতেই হবে। এটির জন্য আপনার নিজেকে ঘৃণা করতে হবে না। অতীতে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। অতীত পরিবর্তন করার জন্য আপনি কিছুই করতে পারবেন না, কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে আপনি আপনার জীবনধারা পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন এবং নিজেকে সারাজীবনের জন্য পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারেন।

২. লক্ষ্য স্থির করুন
দ্বিতীয় যে জিনিষটি আপনাকে করতে হবে তা হল কিছু লক্ষ্য স্থির করতে হবে যা বাস্তববাদী বা গ্রহনযোগ্য। আমি জানি এখানে এমন কিছু কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত অদ্ভুত খাদ্যপরিকল্পনা আছে যা আপনাকে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ওজন কমানোর নিশ্চয়তা দেয়। এটি সত্যিই খুব হাস্যকর। যদি একটি খাদ্যপরিকল্পনা আপনাকে ৭ দিনে ৭ পাউন্ড কমাতে সাহায্য করে তাহলে এটি অবশ্যই আপনার স্বাস্থের জন্য ভালো না। আসলে, এটি একটি অস্থায়ী পরিকল্পনা এবং এটি একটা সময়ের পরে আপনাকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে। আপনার অবশ্যই ধৈর্য্য থাকতে হবে এবং লক্ষ্যগুলো স্থির করতে হবে যা বাস্তবসম্মত। একটি মোটামোটি সহজ লক্ষ্য হল এক মাসে ২-৩ কেজি ওজন কমানো এবং এই লক্ষ্যটি যথাসময়ে পুরন করা সম্ভব এবং এর লক্ষণ আপনার শরীরেও দেখাবে। একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করার আগে এভাবেই চিন্তা করুন।

৩. কার্ডিও (Cardio) করার চেষ্টা করুন
তৃতীয় পদক্ষেপটি হল আপনার দৈনন্দিন কর্মসূচিতে কার্ডিও অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। নতুনদের জন্য সপ্তাহে ৫ বার ৩০ মিনিট ব্যায়াম করাই যথেষ্ট। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনি ৪০ মিনিট বা তার থেকেও বেশি সময় ব্যায়াম করতে পারবেন। এটা সবসময় আপনার সাচ্ছন্দ্যতার স্তরের উপর নির্ভর করে। মনে রাখবেন, আপনি যেই ব্যায়াম রুটিন অনুশীলন করেন সেই ব্যায়াম রুটিনই সবসময় অনুশীলন করবেন। আপনার ব্যায়াম করার দিন গুলো থেকে একটি দিনও ছুটি নিবেন না। সবসময় মনে রাখবেন যখন আপনি ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তখন প্রতি ক্যালোরি গণনা করা হচ্ছে। আপনি দুই মিনিট শরীর গরম করার মাধ্যমে শুরু করতে পারেন এবং শরীর কিছুক্ষণ প্রসারণের মাধ্যমে শেষ করতে পারেন। যদি আপনি কিভাবে কার্ডিও ব্যায়াম অনুশীলন করতে হবে তা বুঝতে না পারেন তাহলে ইউটিউবে ভিডিও দেখার মাধ্যমে চেষ্টা করতে পারেন।

পড়ুন  বুকে জমা কফ দূর করার উপায় জেনে নিন

৪. সঠিক সময়ে খাবার গ্রহন করুন
সঠিক খাবার খাওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সঠিক সময়ে খাবার খাওয়াও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। রাত ৮ টার পর রাতের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং রাতের খাবার খাওয়ার পর ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই কিছুক্ষণ কাজ করে নিবেন।

৫. নাস্তা গ্রহণে সতর্ক থাকুন
বেশিরভাগ ওজন বাড়ার প্রধান কারন হচ্ছে অতিমাত্রায় ভারী নাস্তা গ্রহণ করা! প্রতিটা আহারের মাঝখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের যেকোন কিছু এবং সবকিছু খাওয়ার স্বাধীনতা দেই। জলখাবার বা নাস্তা খাওয়া খারাপ নয়, কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। বিস্কুটের বদলে রোস্টেড বাদাম অথবা সালাদ খান। যতটা সম্ভব ক্যাফেইন গ্রহণ করা হ্রাস করুন।

৬. নিজের বল প্রশিক্ষণ
বল প্রশিক্ষণ এমন একটি জিনিষ যা আপনি অনুশীলনের সময় কখনই হাত ছাড়া করতে চাইবেন না। কার্ডিও প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর ১০ মিনিট সময় বল প্রশিক্ষণে ব্যয় করুন। এক্ষেত্রে ডাম্ববেলস খুব ভালো একটি বিকল্প, কিন্তু যদি আপনার ঘরে ডাম্ববেলস না থাকে তাহলে এটির পরিবর্তে ভারী পানির বোতল ব্যবহার করতে পারেন। কিছু সংখ্যক মহিলা বালু ভরতি বোতলও পছন্দ করেন। এই প্রশিক্ষণ আপনার অনুশীলনকে আরো কার্যকরী করে তুলবে। এতে নিশ্চিতভাবে আপনার শরীরকে একটি সুন্দর আকৃতি দিবে এবং আপনার বাহু, অ্যাবস এবং নিতম্বকে দৃঢ় করবে।

৭. হাঁটুন
কার্ডিও এর পরিবর্তে হাঁটাকে আপনি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না। ওজন কমানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই হাঁটা এবং কার্ডিও দু’টিই সমন্বয় করে করতে হবে। আপনি কি জানেন এটা আপনার জন্য কতটা কার্যকর? সকালে ৪৫ মিনিটের জন্য হাঁটা আপনার শরীরের ১৬০ ক্যালোরি পর্যন্ত খরচ করতে পারে। যদি আপনি আরো দ্রুত হাঁটতে পারেন তাহলে এটি অবশ্যই আপনাকে আরো বেশি ক্যালোরি খরচ করতে সাহায্য করবে। এটি মেটাবলিজম (metabolism) বৃদ্ধি করে এবং আরো দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

যদি আপনার কাছে হাঁটা কিছুটা বিরক্তিকর মনে হয় তাহলে আপনার সকল পছন্দের গান গুলো নিয়ে একটি প্লেলিস্ট তৈরি করুন, আপনার মুঠোফোনে ডাউনলোড করুন এবং যখন হাঁটবেন তখন শুনতে থাকুন। এটা অবশ্যই আপনাকে ব্যায়াম করতে উৎসাহ জোগাবে।

৮. সিঁড়ি আরোহণ
বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, যারা নিয়মিত সিঁড়ি আরোহণ করেন তারা অন্যদের তুলনায় দ্রুত ওজন কমাতে সক্ষম। যদি আপনি দিনে ৫ মিনিট শুধু সিঁড়ি আরোহণে ব্যয় করতে পারেন, তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবে কিছু অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ করতে পারবেন। উপরের দিকের সিঁড়িতে উঠার উপকারিতা হচ্ছে এটি আপনার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেবে এবং আপনাকে মুহূর্তের মধ্যে ঘামিয়ে দিবে। আপনি দিনে ৩ বার এই অনুশীলনটি করতে পারেন এবং মাসের শেষে আপনার শরীরে একটি পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

৯. টিভি দেখার সময় প্রশিক্ষণ
এখন, আপনাদের মধ্যে কতজন আসলেই এটি সম্পর্কে শুনেছেন? অনেকেই বলে টিভি দেখার সময় ব্যায়াম করা নিজেকে অলসতা এবং শ্রমবিমুখতা থেকে দূরে রাখার একটি দুর্দান্ত উপায়। সারাদিন হাঁটা এবং ব্যায়ামের পর টিভি দেখার সময় বিজ্ঞাপন বিরতিতে আপনি যদি কিছুক্ষণ লাফাতে থাকেন, বুকডাউন এবং শরীর প্রসারণ করতে থাকেন তাহলে এটি আপনার কোন ক্ষতি করবে না। বরং এটি আপনি যা খেয়েছেন তা হজম করতে সাহায্য করবে! এই কৌশলটি আপনার ওজন এক মাসের মধ্যে ৩ কেজি কমাতে অবশ্যই সাহায্য করবে।

১০. প্রোটিন
ওজন হ্রাস করা সবসময়ই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সাথে সম্পর্কিত। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আপনি ওজন হ্রাস করতে পারবেন না। যদি আপনি আপনার শরীরে কোন পরিবর্তন দেখতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই আপনার খাদ্যাভাস এবং জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে। আপনার সম্পূর্ণ খাদ্যতালিকাটি এমন সব খাবার দিয়ে সাজান যেগুলোতে অনেক প্রোটিন আছে। অর্থাৎ, আপনার খাদ্যতালিকাতে ফল, শাক-সবজি, ডাল, ডিম এবং চর্বিহীন মাংস এগুলো রাখতে পারেন। ফলের তালিকা থেকে আম এবং কলা দূরে রাখুন কারন এগুলো সামান্য হলেও ওজন বাড়িয়ে দেয়। আপনি দিনে একটির বেশি কলা কখনই খাবেন না। আলু অথবা মিষ্টি আলু খাবেন না কারন এরাও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। দিনে একটির বেশি ডিম খাবেন না এবং গরুর মাংস এবং ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এগুলোর থেকে মুরগির মাংস অপেক্ষাকৃত বেশি স্বাস্থ্যকর। আপনার খাদ্য তালিকাতে ডালও খুব ভালো সংযোজন হতে পারে।

পড়ুন  ওজন কমানোর ৬টি জাদুকরী উপায় জেনে নিন

১১. অস্বাস্থ্যকর খাবার নয়
পরবর্তী যে জিনিষটি আপনাকে করতে হবে তা হল আপনার তালিকা থেকে অস্বাস্থ্যকর/ভাজা-পোড়া খাবার বাদ দিতে হবে। আপনাকে সাদা খাবার থকে দূরে থাকতে হবে, যেমন নুডলস, পাস্তা এবং সাদা পাউরুটি। এগুলোর পরিবর্তে আপনি বাদামি পাউরুটি বা মাল্টি-গ্রেইন পাউরুটি খেতে পারেন। মাঝে মাঝে গমের পাস্তা খাওয়াও ভালো। রাস্তার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন কারন এগুলো নিম্ন মানের তেল দিয়ে রান্না করা হয়।

১২. চিনিকে না বলুন
ওজন কমানোর জন্য আপনাকে আরেকটি জিনিষ অবশ্যই করতে হবে আর তা হল চিনি থেকে দূরে থাকতে হবে। এটি সম্পূর্ণভাবে না তো না-ই। কেক থেকে শুরু করে মাফিন, বিস্কুট এবং আইস্ক্রিম, এদের সব গুলোই আপনার শত্রু। এই খাবার গুলো আপনার মেটাবলিজম কমিয়ে ফেলে এবং আপনার ওজন হ্রাস করা বন্ধ করে দেয়। যেহেতু তারা প্রচুর ক্যালোরিপূর্ণ, তাই এরা কিছুদিনের মধ্যেই আপনাকে অলস এবং মোটা বানিয়ে দিবে। বেশিরভাগ গবেষক বলেছেন, ডায়েট থেকে বিরত থাকার দিনেও মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকাই ভালো। যতদিন পর্যন্ত আপনি ওজন হ্রাস করার পরিকল্পনা করবেন, মনে রাখবেন আপনার খাদ্য তালিকা থেকে অবশ্যই মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে!

১৩. গ্রিন টি
গবেষকদের মতে, গ্রিন টি পান করা ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। যদি আপনি দিনে ৩-৪ কাপ গ্রিন টি পান করেন, তাহলে আপনি আপনার মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং অতিরিক্ত ওজন গুলো দ্রুত ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন। ব্যায়াম করার সময় এটা আপনাকে আরো ক্যালোরি ঝরাতে সাহায্য করবে। এবং আপনাকে এই পানীয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না কারন এর কোন ক্যালোরি নেই। এটি পানির মতই নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। সকালে এক কাপ, সন্ধ্যায় হালকা নাস্তার সাথে আরেক কাপ এবং সবশেষে রাতের খাবারের পর আরেক কাপ পান করুন।

১৪. পানি পান করুন
যদি আপনি এক মাসের মধ্যে আপনার ওজন দ্রুত কমাতে চান তাহলে প্রতিদিন ২ লিটার পানি পান করুন। এটি আপনার শরীর থেকে সকল দূষিত পদার্থ বের করে দিবে এবং আপনার শরীর সবসময় বিশুদ্ধ রাখবে। এমনকি যখনই আপনি খেতে বসবেন প্রতিবারই ছোট বোতলের এক বোতল পানি পান করবেন। এটি আসলে আপনাকে কম খেতে সাহায্য করবে। খাওয়া শেষে আরো এক গ্লাস পানি পান করুন। এইভাবে আপনি খাবার থেকে অনেক কম কম ক্যালোরি গ্রহন করবেন এবং অবশেষে আপনার ওজন আরো কমতে থাকবে।

১৫. সুষম খাবার
কোন খাবার খেলে আপনি এক মাসের মধ্যে ওজন কমাতে পারবেন, এই ব্যাপারটি নিয়ে আপনি কি খুব বেশি চিন্তিত? আমি আপনাকে একটি ছোট পরামর্শ দিচ্ছিঃ

প্রাতরাশঃ এক কাপ দুধ, ফল, দুইটি রুটির সাথে ডিম এবং গ্রিন টি।

মধ্যাহ্নভোজঃ ভাত, দুই পিস মাংস/মাছ, এক বাটি সবজি।

সান্ধ্যভোজনঃ ঘরে তৈরি মুরগির স্যুপ/ভাতের সাথে মুরগি/ভাতের সাথে সবজি এবং ডাল।

নাস্তাঃ চিনি মুক্ত বিস্কুট/টোস্ট।

১৬. টিভি দেখার সময় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
টিভি দেখার সময় যতটা সম্ভব চেষ্টা করবেন না খেতে। কারন এই সময় আপনি যতটুকু খেতে পারেন তার থেকেও বেশি খেয়ে ফেলেবেন। এমনকি যখন আপনি খাবেন তখন খাওয়ার দিকেই মনোযোগ দিন এবং আস্তে আস্তে খান। খাবারের প্রতিটি গ্রাস উপভোগ করুন। এটি প্রকৃতপক্ষে আপনাকে ঠিকমত খেতে সাহায্য করবে এবং ওজন কমানোর জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খেতে সাহায্য করবে।

১৭. সপ্তাহে একবার ডায়েট থেকে বিরত থাকুন
আপনি সপ্তাহে একবার ডায়েট করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। আর এটি শুক্রবার করার চেষ্টা করুন। এই দিনে আপনি যে খাবারটি খেতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন তা খেতে পারবেন। যাই হোক, অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা থেকে বিরত থাকবেন অথবা সারাদিন ধরে খেয়ে যাওয়া থেকে দূরে থাকবেন। এর জন্য একবারের ভোজই যথেষ্ট।

পড়ুন  এই গরমে বেস মেকআপ করার টিপস

১৮. ব্যায়াম করার আগে কফি পান করুন
ব্যায়াম করার ১ ঘন্টা আগে আপনি এক কাপ গরম কফি পান করতে পারেন। অবশ্যই এটি চিনিবিহীন হতে হবে। যে সকল মানুষ এই কৌশলটি অনুসরণ করেছে তারা সকলেই এক মাসের মধ্যে নিজেদের শরীরে অনেক গুলো পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে।

১৯. আরো একটু বেশি ঘুমান
ওজন কমানোর সবচেয়ে বড় গোপন বিষয়টি হল ভালো ঘুম। আপনি যদি প্রতিদিন ৮ ঘন্টার মত ঘুমান তাহলে আবশ্যই আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। কারন শরীর তখনি খুব ভালো কাজ করে যখন বিশ্রামে থাকে। যদি আপনি নিয়মমাফিক বিশ্রাম নেন তাহলে ওজন হ্রাস করা আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসবে।

২০. কোন প্রকার কঠোর খাদ্যতালিকা অনুসরণ করবেন না
ওজন কমানোর সময় কখনোই কোন কঠোর খাদ্যতালিকা অনুসরণ করবেন না। সবসময় মনে রাখবেন, আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার জন্য শরীর সুরক্ষিত রাখতে হবে। যদি আপনি এই কথাটি মনে রাখেন তাহলে আপনি এত দ্রুত আপনার লক্ষ্য গুলো অর্জন করতে পারবেন যা আপনার কল্পনার বাহিরে।

২১. নিজেকে দৃঢ়বদ্ধ এবং অনুপ্রাণিত রাখুন
ওজন কমানোর সর্বশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হলো অনুপ্রেরণা এবং দৃঢ়তা। আপনি যদি উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন এবং আপনার লক্ষ্যে মনোযোগী হতে পারেন, তাহলে কেউ আপনাকে ওজন কমানো থেকে দূরে সরাতে পারবে না।

২২. সপ্তাহে একবার নিজের ইচ্ছামত খান
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মানে এই না যে আপনি নিজেকে সুস্বাদু খাবার থেকে বঞ্চিত করবেন। আপনার সকল ইচ্ছাপূরণে নিজেকে নিজে বাধা দিবেন না। সপ্তাহে একবার আপনার পছন্দের খাবার গুলো খান যেগুল আপনি খুব উপভোগ করেন। কিন্তু যতটুকু খাবার আপনার পেট গ্রহন করতে পারে ঠিক ততটুকুই খাবেন। অতিরিক্ত খাওয়া বর্জন করুন এবং আপনার শরীর সক্রিয়, স্বাস্থ্যকর এবং মেটাবলিজম স্তর উন্নত রাখতে আপনি প্রতিদিন ৪৫ মিনিট শারিরিক পরিশ্রম করছেন তা নিশ্চিত করুন।

সত্যিকার অর্থে আপনার কতটুকু খাওয়া উচিত?
আমাদের ওজন তখনি বৃদ্ধি পায় যখন আমরা আমাদের দেহের প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাই। আপনার প্রতিদিন কতটুকু ক্যালোরি লাগবে তা জানতে আপনাকে একজন ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে। ডাক্তার আপনার দৈনিক রুটিন, কাজের ধরণ, দৈনন্দিন জীবনধারা অভ্যাস, খাদ্য অভ্যাস, ভ্রমণ অবস্থা এবং শারিরিক কার্যকলাপ দেখে আপনার প্রতিদিনের ক্যালোরির চাহিদাগুলির মূল্যায়ন করতে সহায়তা করবে। আপনার কতটুকু ক্যালোরি লাগবে তা জানার পর দ্বিতীয় ধাপ হল- আপনি কি খাবেন তা পরিকল্পনা করা।

আপনি যদি আপনার ক্যালোরির সীমা অতিক্রম করতে না চান তাহলে আপনাকে যতটা সম্ভব ঘরের খাবার খেতে হবে। সকল প্রকার প্যাকেটজাত খাদ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং ফাস্ট ফুড পরিত্যাগ করতে হবে। বাহিরে খাওয়া এবং বাহিরের প্যাকেটজাত খাবার খাওয়াকে একেবারেই না! বলতে হবে। এছাড়াও, যখন ঘরে রান্না করবেন তখন কম তেল ব্যবহার করবেন।

আপনার ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য নিম্নে একটি তালিকা দেওয়া হলো যা আপনাকে অনুসরন করতে হবেঃ

১. ওজন কমানোর জন্য কাঁচা শাক-সবজি, ফল এবং সালাদ খাওয়া সবচেয়ে ভাল।

২. অলিভ অয়েল এবং সয়াবিন তেল রান্না করার জন্য খুব ভাল।

৩. চর্বি অপসারণের জন্য দুধ দুইবার জ্বাল দিবে্ন।

৪. মিষ্টি খাওয়া পরিহার করুন, ঘরে বানালেও তা পরিহার করুন।

৫. নাস্তা খাওয়ার সময় হারবাল চা মধু দিয়ে পান করুন।

সবশেষে, সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন কিন্তু পাতলা নয়। আপনার গড়ন যেমনই হক না কেন আপনি সুন্দর। যখন আপনি ভিতর থেকে সুস্থ অনুভব করা শুরু করবেন, তখনই অল্প একটু মেদ আপনাকে প্রভাবিত করবে না। এবং যদি আপনি আপনার দেহ আরো সুগঠিত করতে চান তাহলে আপনি এগিয়ে যান এবং অনুশীলন শুরু করুন।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About পূর্ণিমা তরফদার

আমি পূর্ণিমা তরফদার আপনার ডক্টরের নতুন রাইটার। আশাকরি আপনার ডক্টরের নিয়ামিত পাঠকরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করবেন ও আমার পোষ্টগুলো পড়বেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.