...

স্তন ক্যানসার রূখতে সচেতনতা বাড়ান

স্তন

স্তন ক্যানসার রূখতে সচেতনতা বাড়ান

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দিন দিন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নারীরা এই ক্যানসারেই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবমতে, বাংলাদেশে ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত।

 

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল গত নয় বছরে এ ক্যানসারে আক্রান্ত ৫ হাজার ৩১১ জন রোগীর ওপর গবেষণা করে। এতে দেখা গেছে, আমাদের দেশের রোগীরা পশ্চিমা নারীদের তুলনায় কম বয়সে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত ২৫ শতাংশ রোগীর বয়স ৪০ বছরের নিচে। এমনকি ৫ শতাংশ রোগী ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী। ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের হার সবচেয়ে বেশি—৩৫ শতাংশ। শুধু নারীদের নয় পুরুষদের ও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা আছে। তবে তা খুবই কম—মাত্র ১ শতাংশ। পুরুষদের সাধারণত ৬০ বছর বয়সের পরে হয়ে থাকে।
ক্যানসারে আক্রান্ত কিনা প্রাথমিকভাবে নিজে নিজেই তা শণাক্ত করা যায়। প্রায় সবাই প্রথম দিকে স্তনে চাকা বা গুটি অনুভব করেন।

৯৯ শতাংশ রোগী অন্য কোনো উপসর্গ যেমন ব্যথা, জ্বালাপোড়া—এসব টের পান না। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ৫৫৪ জন রোগীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, চাকা অনুভব করা থেকে রোগ শনাক্ত হতে সময় পার হয়ে যায় তিন মাস থেকে ৬০ মাস (পাঁচ বছর)। এতে গড়ে ১৮ মাস দেরি হয়ে যায়।
রোগ শনাক্ত হতে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে পাওয়া যায়, ৫০ শতাংশ রোগী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নেন; ২০ শতাংশ এটি স্বাভাবিক পরিবর্তন মনে করেন; ১৫ শতাংশ লজ্জায় কারও কাছে বলেন না; ১০ শতাংশ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক অসহযোগিতার কারণে আসেন না এবং অন্যান্য কারণ ৫ শতাংশ।
ইতিমধ্যে স্তনের চাকাটি বিকট আকার ধারণ করে, স্তনের ওপরের ত্বক, বগলের গ্রন্থিতে প্রবেশ করে এবং বুকের সঙ্গে লেগে থাকে ওপরে ঘা হয়। রক্তক্ষরণ হয়। এ ছাড়া এ রোগ অন্যান্য অঙ্গ যেমন হাড়, ফুসফুস, যকৃৎ, মস্তিষ্ক বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যায়। ব্যথাসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। তাই ৭০ শতাংশের রোগ তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে শনাক্ত হয়। এ জন্য রোগ নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসা স্তন ক্যানসার রোগীদের (গবেষণায় অংশগ্রহণকারী) মধ্যে ৪৪ শতাংশ নিরক্ষর, ৪০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় পাস। তাঁদের স্বাস্থ্যশিক্ষা নেই বললেই চলে। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আগে ৮০ শতাংশ রোগী এ রোগের নামই শোনেননি। কোনো রোগী তাঁর নিজের স্তনযুগোল  নিজে কখনো পরীক্ষা করে দেখেননি।

পড়ুন  নারীদের স্তন ঝুলে ও ঢিলে হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষার উপায়

সব নারীর কমপক্ষে তিনটি বিষয় জানা খুব প্রয়োজন।

* নারী হওয়া স্তন ক্যানসারের একটি ঝুঁকি।
* ২০ বছর বয়স হলে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করতে শেখা এবং সারা জীবন তা চালিয়ে যাওয়া।
* কোনো সমস্যা মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
আজকাল শিক্ষিত নারীদের কাছে ‘স্তন ক্যানসার’ একটি আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। স্তনে সমস্যা হলে সব নারী—কি কিশোরী কি বৃদ্ধা, স্তন ক্যানসার ভেবে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। স্তনে ক্যানসার ছাড়াও বিভিন্ন কারণে সমস্যা হতে পারে। তবে স্তনে চাকা, বিশেষ করে ব্যথাহীন চাকা স্তন ক্যানসারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। তবে সব স্তনের চাকাই ক্যানসার নয়। চাকা অনুভূত হওয়া প্রতি ১০০ জনে একজন ক্যানসারে আক্রান্ত হন।
কখনো কখনো স্তনের চাকায় ব্যথা হতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীদের স্তনে ব্যথার উপসর্গ থাকে না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগ শনাক্তকরণের সময় মাত্র ১ দশমিক ২ থেকে ৬ শতাংশ স্তনে ব্যথার উপসর্গ থাকে। শারীরিক পরীক্ষায় যদি স্তনে কোনো অস্বাভাবিকতা না থাকে এবং বিভিন্ন রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা যেমন ম্যামোগ্রাফি, আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টও যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে শুধু  ব্যথা নিয়ে ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার ঘটনা বিরল।
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে এ রোগ নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। সচেতন হলেই এ রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় হয়। সচেতন হতে হলে এ রোগের ঝুঁকিগুলো জানা জরুরি।
এই ক্যান্সার  কেন হয়, তা সঠিকভাবে না জানা গেলেও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত হয়েছে।

পড়ুন  দুধ টিপার নিয়ম কি?

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিও বাড়ে

* পরিবারে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় যেমন মা, বোন, খালা, ফুপু, নানি, দাদির স্তন ক্যানসার থাকলে
* অল্প বয়সে মাসিক শুরু হয়ে এবং বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হলে
* কখনো সন্তানধারণ না হলে বা বেশি বয়সে সন্তান হলে
* শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ালে
* অতিরিক্ত ওজন, মেদ, পেট মোটা, বিশেষ করে মেনোপোজের পর
* কোনো ধরনের পরিশ্রম না করা বা ব্যায়াম না করা
* অতিরিক্ত লাল মাংস ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া
* দীর্ঘদিন মেনোপজ—এমন নারীরা হরমোন বড়ি সেবন করলে
* রাত জাগার অভ্যাস থাকলে

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে

* শরীরের ওজন সারা জীবন স্বাভাবিক থাকলে
* নিয়মিত ব্যায়াম করা বা শারীরিক পরিশ্রম করা হলে
* লাল মাংস ও চর্বি-জাতীয় খাবার কম খাওয়া হলে। টাটকা শাকসবজি, তরকারি, দেশীয় ফল খাওয়া হলে
* শিশুকে কমপক্ষে ছয় মাস বুকের দুধ খাওয়ালে
* মেনোপজ নারীরা হরমোন বড়ি না খেলে
* রাত জাগার অভ্যাস ত্যাগ করলে

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About Deb Mondal

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.