...

মেদ নিয়ন্ত্রণে করনীয়

বর্তমান যুগে নারী-পুরুষ উভয়ই স্বাস্থ্য সচেতন কিন্তু তারপরও বিভিন্ন কারণে অথবা ব্যস্ততায় নিজের শরীরের যত্ন সঠিকভাবে নেয়া হয় না। ব্যস্ত নাগরিক জীবনে কয়জনই বা পারে সময় করে ব্যায়াম করতে বা খাওয়াদাওয়ার নিয়ম মেনে চলতে, অনেকে আবার আলসেমির কারণেও নিয়মিত ব্যায়াম করেন না। পরবর্তীতে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে মেদ জমে বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে, শরীর আনফিট হয়ে যায়। ফিটিং কোনো জামা-কাপড় পরেও স্বস্তি নেই, বেরসিক ভুঁড়িটা যেনো জামা ভেদ করে উঁকি দেয়। এই মেদভুঁড়ি শুধু যে দৃষ্টিকটু তাই নয়, এটা শরীরেরও অনেক ক্ষতি করে। বিশেষ করে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে তা হৃৎপিন্ড, শ্বাসযন্ত্র, গলব্লাডার এমনকি মস্তিস্কও ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। এই অতিরিক্ত মেদের কারনে আমাদের হার্ট অ্যাটাক, ডিমেনশিয়া (মস্তিকের রোগ), ডায়াবেটিস, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মেদ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। এর জন্য খুব বেশি কিছু করতে হবে না, শুধু দরকার ইচ্ছাশক্তি ও নিয়ম মেনে চলার মানসিকতা।

মেদ নিয়ন্ত্রণে করনীয়

মেদ জমে কোথায়
অনেকে মনে করেন পেটে ভুঁড়ি থাকলেই বুঝতে হবে শরীরে মেদ জমেছে। কিন্তু এটা সব ক্ষেত্রে সত্যি নয়। মেদ দুই ধরনের এবং তা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় হতে পারে। ১. এক ধরনের মেদ হয় ঠিক ত্বকের নিচে যেমন উরু,কোমর, নিতম্ব ও পেটে। এসব জায়গায় মেদ জমলে তা সহজেই দৃশ্যমান। ২. আরেক ধরনের মেদ জমে ত্বকের অনেক গভীরে দেহের প্রধান যন্ত্র গুলোতে যেমন- হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, পাচকনল ও যকৃতের চারপাশে। এই মেদ দৃশ্যমান নয়, এটা বোঝা যায় দেহে ইনসুলিন বা কোলেস্টোরেলের মাত্রা বেড়ে গেলে।

পড়ুন  পেটের মেদ কমানোর সহজ উপায় জেনে নিন

কেনো হয় এই মেদ
মানুষের দেহে মেদ জমে তার বংশগত জিনের প্রভাবে, জীবন যাত্রার ধরনের উপর, মানসিক চাপের কারনে, অতি নিদ্রা বা অনিদ্রার কারনে, অনেকের আবার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে। অনিয়মিত জীবন যাপন অর্থাৎ খাওয়া দাওয়া ও হাঁটাচলায় অনিয়ম করলে শরীরে মেদ জমতে থাকে। আবার চল্লিশের বেশি বয়স হলে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মেদ জমার সম্ভাবনা বেশি থাকে আর নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের সময় ওজন বেড়ে যায়।

মেদ নিয়ন্ত্রণের উপায়
মেদভুঁড়ি নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য যে আপনাকে রাতদিন দৌড়াতে হবে বা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে ডায়েট করা শুরু করে দিতে হবে এমন কিন্তু নয়। যা করতে হবে তা হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পরিমিত ঘুম, শরীরচর্চা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ।

পর্যাপ্ত ও সুষম খাবার
পর্যাপ্ত খাবার মানে ঠিক যতটুকু খাবার বা ক্যালোরি আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজন সেইমতো খাবার খাওয়া। এটা আপনার বয়স বুঝে খাবারের পরিমাণটা ঠিক করতে হবে। আর খাবার গ্রহণের সময় অবশ্যই চর্বি ও তেল জাতীয় খাবার তুলনামূলকভাবে কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন এবং সুষম খাবার যেমন অঙ্কুরিত ছোলা, আঁশ জাতীয় খাবার, সবুজ ফল ও শাক-সবজি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখবেন। বাইরের ভাজা-পোড়া খাবার বা ফাস্টফুড এড়িয়ে চলবেন। একসাথে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে দিনে কয়েকবার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। খাবারের শুরুতে এবং খাবারের শেষে অন্তত দুই গ্লাস পানি পান করবেন, এতে করে পানি দিয়ে পেট ভর্তি থাকলে আপনার খাবারের পরিমাণ ঠিক থাকবে এবং বেশি খাবার খেয়ে ক্যালোরি জমার ভয়ও থাকবে না।

পড়ুন  আপনার ওজন বাড়ছে কিছু অদ্ভুত এবং অজানা কারণে

নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা
আমাদের শরীরে মেদ জমার অন্যতম কারন হলো আমরা যতটুকু ক্যালোরি প্রতিদিন গ্রহন করি সেই পরিমাণ ক্যালোরি প্রতিদিন বার্ন হয়না বা ক্ষয় হয় না। এতে করে ক্যালোরি জমতে জমতে একসময় বেঢপ সাইজের একটা মেদভুঁড়ি হয় বা শরীরে মেদ জমে যায়। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম তাই অপরিহার্য। আমরা সবাই জানি হাঁটা সর্বোৎকৃষ্ট ব্যায়াম তাই আপনি যদি প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট হাঁটেন (জোরে হাঁটতে পারলে ভালো) তাহলে আপনার বাড়তি ক্যালোরি বার্ন হবে এবং সাথে সাথে মাংসপেশিও মজবুত হবে।হাঁটার পাশাপাশি দৌড়ানো, বাগান করা, লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করা, ইয়োগা করা অর্থাৎ কায়িক পরিশ্রম হয় এমন কাজ করলেও শরীর ফিট থাকবে এবং বাড়তি মেদ ঝরে পড়বে। পাশাপাশি সাইক্লিং বা সাঁতার কাটতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।

অতিনিদ্রা বা অনিদ্রা নয়
মেদ জমার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘুম বা কম ঘুম দুটিই খুব ক্ষতিকর। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা গড়ে ৪-৫ ঘন্টা ঘুমান বা যাদের পর্যাপ্ত ঘুম হয়না তাদের রয়েছে মেদ জমার আশংকা আবার যারা ৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঘুমান তাদেরও স্থূল আকৃতির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মেদ নিয়ন্ত্রনে রাখতে হলে ৮ ঘণ্টার কম বা বেশি ঘুমানো যাবে না। যাদের দিনে ঘুমানোর অভ্যাস আছে তারা এই অভ্যাস পরিত্যাগ করে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।

পড়ুন  ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা গুলো জেনে নিন

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
আমাদের দেহ ও মন একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। তাই মনের চাপ অনেক সময় শরীরের উপরও পরে। অনেক ক্ষেত্রে মানিসিক চাপ বা উদ্বেগ বৃদ্ধির সাথে সাথে ওজনও যেন পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। কারণটা আর কিছু নয় মানসিক অবসাদ বা নিয়ম মেনে চলার প্রতি অনীহা। যখন মানুষের মন বিষাদগ্রস্ত থাকে তখন দেখা যায় অনেকের ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং মাত্রাতিরিক্ত খাবার খেতে থাকে, অনেকে ব্যায়াম করা ছেড়ে দেয়, অনিদ্রায় ভোগে- এর প্রতিটিই মেদ জমতে সাহায্য করে। তাই যখন আপনি মানসিক চাপের মধ্যে থাকবেন তখন বাসায় বসে কিছু ছোটখাটো ইয়োগা প্র্যাকটিস করতে পারেন অথবা হালকা মিউজিক ছেড়ে অ্যারোবিক্সও করতে পারেন। সর্বোপরি মন খুলে হাঁসার চেষ্টা করবেন এবং ভালো চিন্তা করবেন তাহলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যাবে ও শরীরের উপরও এর প্রভাব পড়বে না।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About পূর্ণিমা তরফদার

আমি পূর্ণিমা তরফদার আপনার ডক্টরের নতুন রাইটার। আশাকরি আপনার ডক্টরের নিয়ামিত পাঠকরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করবেন ও আমার পোষ্টগুলো পড়বেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.