...

ইম্প্রুভ করুন আপনার ত্বকের ইলাস্টিসিটি

ত্বকের ইলাস্টিসিটি মানে হল স্কিনের সঙ্কোচন প্রসারণ করা এবং তাৎক্ষনিক তা নরমাল অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা। সাধারণ ভাষায় ত্বক লুজ হয়ে যাওয়া। কখনও খেয়াল করে দেখেছেন আমাদের নানি দাদির মুখের চামড়া কেমন যেন ঝুলে গেছে। কারণ তাঁদের চামড়ার ইলাস্টিসিটি কমে গেছে আর এটি ১ দিনে হয়নি। অনেক আগে থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। এর থেকে স্থায়ী ভাবে পরিত্রাণের উপায় নেই। কিন্তু ত্বকের নিয়মিত যত্ন নিয়ে ত্বকের ভাঁজ পড়ার প্রক্রিয়াটিকে একটু দেরি করানো যায়। কম বয়সী ছেলে মেয়েদের ডারমিসের পুরুত্বের কারণে ইলাস্টিসিটি অনেক ভালো। অপরদিকে একটু বয়স হলেই ডারমিসের কার্যকারিতা কমে যায়। ত্বকের(Skin) ইলাস্টিসিটি লস হওয়া প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। এটি এজিং এর সাইন। একে ইলাসটোসিস বলা হয়। কিছু কারণ আছে যার কারণে বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিন তার ইলাস্টিসিটি লুজ করে। সেগুলো হল –ত্বকের

ইম্প্রুভ করুন আপনার ত্বকের ইলাস্টিসিটি

০১ স্ট্রেসঃ

অনেক বেশি স্ট্রেসের কারণে হরমোনাল ইমব্যালেন্স দেখা দেয়, যার প্রভাব ত্বক এবং শরীরের ওপর পড়ে। হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে প্রোটিন রিডাকশন হতে থাকে, আর এটিই ত্বকের ইলাস্টিসিটির জন্য দায়ী।

০২ U.V রেডিয়েশনঃ

এই ক্ষতিকারক রেডিয়েশন ত্বকের অনেক সমস্যার জন্য দায়ী। যেমন ট্যানিং , রিঙ্কেল , ইলাস্টিসিটি লুজ।

০৩ জীনসঃ

সম্ভভবত এটিই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর স্কিন লুজ করার জন্য। এই জীনই ফয়সালা করে কখন এবং কীভাবে আপনার ত্বক ইলাস্টিসিটি হারাবে, ঝুলে পড়বে আর রিঙ্কেল হবে।

০৪ ডায়েটঃ

পড়ুন  ভাতের স্বাস্থ্য উপকারিতা

অনেক বেশি চিনি খেলে মুখের ত্বক ঝুলে পড়ে। অস্বাস্থ্যকর খাবার ত্বকের অনেক অসুস্থতার কারণ। তার মধ্যে ইলাস্টিসিটি হারানো একটি।

কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিঃ

০১. গোলাপ জল ও গ্লিসারিনঃ

শুষ্ক ত্বক হল লেস ইলাস্টিক। তাই আগে শুষ্ক ত্বকের ট্রিটমেন্ট করতে হবে। ৩ ভাগ গ্লিসারনের সাথে ১ ভাগ গোলাপ জল মিশিয়ে প্রতিদিন ৩/৪ বার মাখুন। এভাবে ১৫ দিন করবেন। এতে আপনার ত্বক নরম, ময়েশচারাইজ হবে। ফলে ত্বক থাকবে টানটান, জৌলুসময়।

০২. নারকেলের তেলঃ

নিয়মিত নারকেল তেল ত্বকের লাগানোর অভ্যাস করুন। নারকেলের তেল ৯২ ভাগ saturated, তাই অনেক বেশি stable। যেহেতু stable সেহেতু অ্যান্টি – অক্সিড্যাণ্ট হিসেবে কাজ করে আর আমাদের ক্ষতিকর ফ্রি রেডীক্যাল থেকে রক্ষা করে। এবাবেই ত্বকের ইলাস্টিসিটি-ও ভালো অবস্থায় আনে।

০৩. অলিভ অয়েলঃ

মোট কথা সব ধরনের ময়েশচারাইজার আপনার ত্বককে ঝুলে পড়া থেকে রক্ষা করবে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে যদি হালকা হাতে অলিভ অয়েল(Olive oil) ম্যাসেজ করে মুখে লাগান তাহলে খুব তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যাওয়া থেকে আপনি বেঁচে যাবেন।

০৪. লেবুর রসঃ

লেবুর রসে আছে ভিটামিন সি এক চামচ ময়দা বা বেসনের সাথে মধু, লেবুর রসের প্যাক আপনার ত্বকের জন্য অনেক বেশি কার্যকর হবে। তবে খেয়াল রাখবেন প্যাক লাগিয়ে কথা বলবেন না। তাহলে ত্বকের ভাজ না কমে আরও বরং বেড়ে যাবে।

০৫. ভিটামিন ইঃ

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার তো খাবেনই সেই সঙ্গে একটি প্যাক লাগাবেন। পাকা পেঁপে নিন। এর সাথে টক দই, অল্প চালের গুঁড়ো মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে যখন টানটান অনুভব করবেন তখন ধুয়ে ফেলবেন। এবাবে মাস খানেক করুন।

পড়ুন  ত্বকের জেল্লা বাড়িয়ে তুলতে এবং প্রাণবন্ত লুক আনতে প্রতিদিন ব্যবহার করুন এই ফেসিয়াল সিরাম

০৬. বাদামঃ

সারারাত বাদাম পানিয়ে ভিজান। সকালে ভালো ভাবে বেঁটে নিন। এর সাথে ২ চামচ ডিম, অল্প লেবুর রস(Lemon juice) দিয়ে বানানো প্যাকটি লাগান নিয়মিত।

০৭. কফি স্ক্রাবঃ

আমরা সবাই জানি স্ক্রাবিং এর ফলে আমাদের ত্বকের মরা কোষ ঝরে যায়। এর সাথে যদি ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোন উপাদান মেলানো যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১/৩ চা চামচ কফি, ১ চা চামচ মধু এক সাথে মিশিয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করে প্রতিদিন ব্যবহার করুন।

০৮. আনারস তো এখন বাজারে অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক টুকরো আনারস অথবা জুস ১০-১৫ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এই সিম্পল রেসিপি আপনার টোন ও টেক্সচার ধরে রাখবে বহু দিন।

০৯. মুখ পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন তারপর ১৫ টেবিল চামচ মধু(Honey) ও গাজরের রস মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। এরপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

১০. একটি ডিমের কুসুম ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এর সাথে দুই টেবিল চামচ ওট মিল, এক চা চামচ বাদামের তেল, এক চা চামচ কমলার রস মিশান। পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি হল ন্যাচারাল উপায়ে ত্বক টানটান রাখার আরেকটি রেমিডি।

পড়ুন  শীতে রুক্ষ ত্বকের যত্ন

দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তনঃ

০১. ভিটামিন ই এবং সি যুক্ত খাবার বেশি করে খাবেন। এগুলো ত্বকের ইলাস্টিসিটি রক্ষার জন্য উপকারী। যেমন কমলা, মিষ্টি আলু, গাজর, জাম্বুরা ইত্যাদি।

০২. বাইরে যাবার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাবেন।

০৩. প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন। পানি ত্বকের সেলে আর্দ্রতা যোগায় আর ইলাস্টিসিটি ইমপ্রুভ করে।

০৪. প্রোটিন গ্রহণ করবেন নিয়মিত। এটি আমাদের ত্বকের কোলাজেন আর ইলাস্টিসিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় মাছ ও বাদাম রাখুন।

০৫. প্রতিদিন ৩০ মিনিটের ব্যায়াম(Exercise) আপনার ত্বকের দ্রুত কুঁচকে যাওয়া রোধ করে আর এটি তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে ব্যায়াম আমাদের শরীরের সব organ এর সুস্থতার জন্য উপকারী।

০৬. খুব প্রয়োজন না হলে গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন না। কেননা গরম পানি চামড়া শুষ্ক করে দেয়।

০৭. প্রমানিত হয়েছে পালং শাক, ডিমের কুসুম, অ্যান্টি –অক্সিডেণ্ট যুক্ত খাবার ত্বকের ইলাস্টিসিটির সমস্যা ২০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।

০৮. মাছের তেল যুক্ত ক্যাপসুল যদি প্রতিদিন গ্রহণ করা যায় তবে আপনার হার্ট তো ভালো থাকবেই সেই সঙ্গে ইলাস্টিসিটি রক্ষার জন্য অনেক উপকারী হবে।

সব শেষে কথা দিয়ে গেলাম আপনি যদি অতিরিক্ত ওজন(Weight) কমার কারণে বা উল্টা পাল্টা খাদ্যাভ্যাসের কারণে ত্বকের ইলাস্টিসিটি হারিয়ে ফেলেন তাহলে উপরের টিপস এবং রেসিপিগুলো অ্যাপ্লাই করে দেখুন অবশ্যই উপকার পাবেন।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About পূর্ণিমা তরফদার

আমি পূর্ণিমা তরফদার আপনার ডক্টরের নতুন রাইটার। আশাকরি আপনার ডক্টরের নিয়ামিত পাঠকরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করবেন ও আমার পোষ্টগুলো পড়বেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.