...

চুলের যত্ন নিতে যে তেলগুলো ব্যবহার করবেন

দীঘল লম্বা চুলের যুগ থেকে শর্ট ব্যাংস হেয়ার স্টাইল পর্যন্ত চুলের যত্ন নিতে সব সময়ই একটা বিষয় প্রাধান্য পেয়ে আসছে আর তা হল সুস্থ চুল। সুস্থ চুল হল নিয়মিত যত্নের ফসল। চুলের যত্নের না নিলে চুল অচিরেই ফাটে এবং ভেঙে যায়। আর চুলের যত্নের প্রাথমিক উপাদান হল তেল। শুধু কি নারকেল তেল দিয়েই সেরে ফেলেন সব হেয়ার কেয়ার? চুলের যত্নের উপাদানও সময়ে সময়ে পরিবর্তন করা উচিত। তাই নারকেল তেলের সাথে অনান্ন্য তেল ব্যাবহার করে চুলের যত্ন করা যায়।

চুলের যত্ন

চুলের যত্ন নিতে যে তেলগুলো ব্যবহার করবেন

গোসলের আগে এটুকু সময় মাথায় তেল রাখতে পারলেই হবে। তবে মাথায় শুধু তেল লাগালেই হবে না। মাসাজও করতে হবে। এতে করে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালেও লাভ পাবেন। মোটা তোয়ালে গরম পানিতে চুবিয়ে নিংড়ে নিন। এরপর তেল লাগানো চুলে পেঁচিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। গরম ভাপ লোমকূপগুলো খুলে দিতে সাহায্য করে। এতে ভেতরের ময়লা বের হয়ে আসে এবং তেলের পুষ্টিগুণ ভেতরে যেতে পারে।

 

চুলের যত্ন নিতে চুল পরিষকার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত আর এজন্য চুলে শ্যাম্পু  করতে হয়।  শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল লাগালে ফল ভালো হয়। কারণ, তখন মাথার ত্বকের ভেতর থেকে ময়লা উঠে আসে। শুষ্ক চুলের অধিকারীদের সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন তেল দেওয়া ভাল। তেলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে নিতে পারেন। মেথি চুলের শুষ্কতা কমিয়ে আনে। শুষ্ক চুলে শ্যাম্পু ব্যবহারের পর কন্ডিশনার ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

কোঁকড়া চুলের যত্ন নিবেন কীভাবে?

তৈলাক্ত চুলে খুশকি বেড়ে গেলে তেলের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে লাগাতে পারেন। চার টেবিল চামচ তেল নিলে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মেশাতে হবে। তেলটা একটু গরম করে নিতে পারেন। চুল পড়া কমাতে তেলের সঙ্গে আমলকীর রস মেশান। এগুলো করার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

পড়ুন  সিল্কি চুলের গোপন রহস্য কি?

চুলের যত্ন নিতে নিজের চুলের ধরনের উপর বিবেচনা করে ব্যাবহার করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের তেল, এগুলো হল:

 

নারকেল তেল
চুলের যত্নে সবার প্রথমে আসে নারকেল তেল। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন দামের নারকেল তেল পাওয়া যায়। নারকেল তেল চুলের যত্নের জন্য আবশ্যক। ব্যস্ত থাকলে বাড়ি ফিরে গোসলে যাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে নারকেল তেল লাগান। ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সময় থাকলে চুলের গোড়ায় এবং চুলে ভালো করে নারকেল তেল লাগান। একটা শুকনো টাওয়েল কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে পুরো মাথার চুল ঢেকে মুড়িয়ে রাখুন। ৪০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। নারকেল তেল লাগিয়ে ঘরে বানানো যে কোনো ধরনের হেয়ার প্যাক লাগাতে পারেন।

Loading...

 

আলমন্ড অয়েল বা বাদাম তেল
নারকেল তেলের মতো বাদাম তেল চুলের জন্য অনেক উপকারী হলেও আমাদের দেশের বাজারে বাদাম তেলের প্রাপ্যতা কম। চুলের যত্ন  নিতে বাদাম তেল অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় ধুলাবালি লেগে চুল অনেকটা নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের শাইন বাড়াতে বাদাম তেল ব্যবহার করুন। শুষ্ক চুলের যত্নে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার বাদাম তেল ব্যবহার করা উচিত। কালার কিংবা রিবন্ডিং করা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বাদাম তেল কাজে দেয়। চুল আয়রন করালে চুলকে সুস্থ রাখতে ম্যাসাজ করে লাগান বাদাম তেল। যদি বাদাম তেলে অ্যালার্জি থাকে তাহলে এই ধরনের তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

পড়ুন  স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের যত্নে ৫টি জাদুকরি তেল

 

চুলের যত্ন নিতে আমলা বা আমলকীর তেল

চুলের যত্নে আমলা বা আমলকীর তেলের গুণাগুণের শেষ নেই। আমলা তেল সহজেই চুলের গোড়ায় প্রবেশ করতে পারে। চুল পেকে যাওয়া রোধ করে। রয়েছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ যা চুলে খুশকি, উকুন এবং ইনফেকশন হওয়া প্রতিরোধ করে।

রিবন্ডিং চুলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কি কি? কিভাবে এই চুলের যত্ন নিতে হয়?

ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েল খুব ঘন এক ধরনের আঠালো তেল। একে মূলত হালকা কোনো তেল যেমন নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়। শুষ্ক স্ক্যাল্পে ময়েশ্চার জোগাতে এই তেল ব্যবহার করা উচিত। এতে থাকে প্রচুর মিনারেলস এবং ভিটামিন। চুলের ফেটে যাওয়া রোধ করতে ক্যাস্টর অয়েল উপকারে আসে। শুষ্ক চুল এবং স্ক্যাল্পের জন্য এই তেল সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করা উচিত। তবে চুল খুবই তৈলাক্ত হলে এই তেল বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।

 

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
আপনি হয়তো চুলের যত্ন নিতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করেছেন, কিন্তু চুলের আসল উপকার করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। এই তেলের ব্যবহার চুল পড়া কমায়। চুল বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। চুলের শাইন বাড়ায়। বিভিন্ন হেয়ার প্যাকের সঙ্গে মিশিয়েও এই তেল লাগানো যায়। চুলের থিকনেস বাড়ায়। তবে খেয়াল রাখুন এই তেল কখনও গরম করে লাগাবেন না। গরম করলে এই তেলের সব গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

পড়ুন  ডালপুরি তৈরী করার সহজ পদ্ধতি

 

সরিষার তেল
বহুকাল ধরে আমাদের দেশে ত্বক এবং চুলের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শীতকালে নারকেল তেলের পাশাপাশি মাঝে মাঝে মাথার তালুতে সরিষার তেল ম্যাসাজ করা খুবই উপকারী। তবে সরিষার তেল দেয়ার পর চুল ভালো কোনো সুগন্ধযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে যেন তেলের গন্ধ এবং ঝাঁজ না থাকে।

 

চুলের যত্ন নিতে তিলের তেল
ছোট ছোট সাদা ফুল থেকে হয় কালচে তিলের দানা। এ দানার গুণাগুণের শেষ নেই। এ থেকে হয় তিলের তেল। তিলের তেলের ব্যবহারে ত্বক হয় সজীব। যাদের ত্বকে রোদে পোড়া ভাব রয়েছে, তাদের ওই পোড়া দাগ দূর করতে পারেন এ তেল ম্যাসাজের মাধ্যমে। এই তেল ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়। মাথাও ঠাণ্ডা থাকে। শীতের সময় রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য কর্পূর তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করলে উষ্ণতা পাওয়া যায়। তিলের তেল চুলের খুশকিও দূর করে। এজন্য সপ্তাহে একবার নারকেলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলে ম্যাসাজ করতে পারেন।

 

সূর্যমুখী তেল
চুলের যত্ন নিতে সূর্যমুখী তেলও গুরুত্বপূর্ণ ভীমিকা পালন করে। তৈলাক্ত চুলের জন্য উপযোগী এই তেল। এই তেল অনেক হালকা হয় তাই চুলে ম্যাসাজ করলে চুল তেলতেলে হয় না। উপরের তেলগুলোর ছোট ছোট বোতল কিনে রেখে দিন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার করে বিভিন্ন তেল দিয়ে চুলের যত্ন নিন। তবে কখনোই চুলে তেল লাগিয়ে বেশি সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পড়বেন না। এতে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল আরও বেশি পড়তে পারে।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.