...

পবিত্র মাহে রমজানে সুস্থ্য থাকতে চাই স্বাস্থ্যস্মমত ইফতার ও সেহরি

বছর ঘুরে আবারো আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। এ মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত, নাজাত আর অসংখ্য ফজিলতের মহান বার্তা নিয়েই এভাবে প্রতি বছর ফিরে আসে। তাই এই মাসে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাত ফজিলত অর্জন করার সচেতন প্রয়াস চালানো। রমজান মাসে আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে যায়|খাবারের, ঘুমের ও ব্যায়ামের সময় অনেক পরিবর্তিত হয়|এবারের রোজা শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকাল থেকেই। রোজায় একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ্য মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রেখে সারা মাস কিভাবে রোজা রাখা যায় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেয়া উচিত| রমজানে স্বাস্থ্যসম্মত ইফতার ও সেহরি নিয়ে হেলথ বার্তা ডট কম’এ লিখেছেন মোঃ নাহিদ নেওয়াজ জোয়ার্দার। চলুন জেনে নেই এই বিষয়ে:

ইফতারি

স্বাস্থ্যস্মমত ইফতার ও সেহরি

ইফতার
আমাদের ইফতার হওয়া উচিৎ সুষম,হালকা ও পুষ্টি সমৃদ্ধ। আপনি ইফতার শুরু করতে পারেন কিছু খেজুর ও এক গ্লাস ফলের রস বা এক গ্লাস দুধ দিয়ে, এতে করে আপনার সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। ইফতারিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন, কম করে হলেও ৩৫০ মিলি লিটার পানি পান করুন। পারলে ডাবের পানি পান করুন, এটি দারুন হাইড্রেটিং।
বেশী করে রসালো ফল যেমন তরমুজ,বাঙ্গি,আম,লিচু,জাম্বুরা, ডালিম,জাম, কামরাঙা, কমলালেবু, আঙ্গুর ইত্যাদি খান। এগুলো শরীরের পানি ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে এবং শরীরের জন্য প্রয়জনিয় ভিটামিন ও মিনারেলের যোগান দেয়। ইফতারিতে অবশ্যই রঙ্গিন ফল ও সব্জির সালাদ খান। টক দই, কলা ও চিড়া খেতে পারেন।
অনেকে মনে করেন ইফতারে ভাজা পোড়া না থাকলে ইফতারই হবে না| ইফতারিতে অনেকেরই কমন আইটেম হল; সিঙ্গারা, চপ, পিয়াজু, সমচা, বেগুনি, জিলাপি, বুন্দিয়া ইত্যাদি সহ হরেক রকমের ভাজা পোড়া। এগুলো অধিক তেলযুক্ত হওয়ায় খেতে দারুন মজা লাগে সাময়িক ভাবে খেতে ভাল লাগে। কিন্তু সারাদিন রোজা রাখার ফলে পাকস্থলীর ভিতরের মিউকাস আবরনি সংকুচিত অবস্থায় থাকে, ফলে যদি কোনো ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত, গুরুপাক খাবার হঠাত করে পেটে পড়ে, তবে পেটে জ্বালা পোড়া করতে পারে এবং হজমে গণ্ডগোল হয়।
ফলে পরেরদিন রোজা রাখতে বেশ বেগ পেতে হয়। আমারা অনেকেই ইফতারি কিনতে রাস্তার পাশের দোকান বা বাইরের রেস্তরাঁতে ভিড় জামায়। এসব জায়গায় ভাজা-পোড়া(সিঙ্গারা,চপ,পিয়াজু,সমচা,বেগুনি, জিলাপি বুন্দিয়া ইত্যাদি) ভাজতে ব্যাবহার করা হয় আংশিক হাইড্রজিনেটেট তেল। কারণ এই তেল দামে সস্তা ও এদের বিটা-প্রাইম ফর্মুলার জন্য যা ভাজা-পোড়াকে অধিক মচমচে ও কুড়মুড়ে করে তুলে। আংশিক হাইড্রজিনেটেট তেল ট্রান্সফ্যাট তৈরি করে।
তাছাড়া সিঙ্গারা,চপ,পিয়াজু,সমচা,বেগুনি,জিলাপি বুন্দিয়া ইত্যাদি ভাজা হয় অনেক ক্ষণ ধরে এবং অধিক তাপে, ফলে এই তেলে ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয়।
কথায় আছে “হোটেলের তেল ফুরায় না” অর্থাৎ একই তেল বারবার ব্যাবহার করা হয় এইসব ভাজতে। আগের দিনে বাবহৃত ট্রান্সফ্যাটওয়ালা তেলের সাথে নতুন কিছু তেল মিশিয়ে আবারও সিঙ্গারা,চপ,পিয়াজু,সমচা,বেগুনি ইত্যাদি ভাজা হয়। আবার আগের দিনে বিক্রি না হওয়া সিঙ্গারা,চপ,পিয়াজু,সমচা,বেগুনি ইত্যাদি পরের দিন পুনরায় ভেজে বিক্রি করা হয়। এই ট্রান্সফ্যাট রক্ত নালিতে জমা হয়ে সাভাবিক রক্ত প্রবাহে বাঁধা দেয়।
এছাড়া এটি শরীরের জন্য উপকারি HDL এর পরিমাণ রক্তে কমিয়ে দেয় এবং আমাদের জন্য ক্ষতিকর LDL এর পরিমাণ রক্তে বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, মুটিয়ে যাওয়া ও টাইপ-২ ডায়বেটিকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাছাড়া এই ট্রান্সফ্যাট কে ক্যানসারোতপাদক (carcinogenic) হিসেবেও ধরা হয়।
তাছাড়া এটি পেটে আসিডিটি ও বদ হজমেরও সৃষ্টি করে এবং মুখে ব্রন ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যার জন্যও এগুলো দায়ী। তাছাড়া অনেক ব্যবসাহীরা রঙিন ও আকর্ষণীয় ইফতারি তৈরিতে নিম্ন মানের ক্যামিকাল রং ব্যাবহার করে থাকেন যা টেক্সটাইল শিল্পে ব্যাবহার করা হয়। যা কিডনি ও লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
সেহরি
সেহরিতে উদর পূর্তি করে খাবেন না। সেহরিতে অধিক চর্বি ও মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অধিক চর্বিযুক্ত গরু, খাসির মাংস, পরোটা, হরেক রকমের ভাজি খাবেন না। চামড়া ছাড়া মুরগীর মাংস, বড় মাছ, সালাদ ও সবজি খান। তরকারিতে বেশী লবণ ব্যাবহার করবেন না এবং ভাতের সাথে লবণ খাবেন না।
জটিল শর্করা ও অধিক আঁশসমৃদ্ধ খাবার যেমন- বাঁধাকপি, ফুলকপি, চালকুমড়া, বেগুণ, করলা, লাউ, পটল, ঝিঙা, চিচিংগা, ধুন্দল, কাঁচা পেঁপে, ওল, টমেটো, সজনে ডাটা, উচ্ছে, শসা, মুলা, কাঁচা কলা, ব্রবতি, কাকরোল ও ইঁচড় ইত্যাদি খান। কারণ এগুলো পাস্থলিতে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে এবং আস্তে আস্তে হজম ও আত্তীকৃত হয়। ফলে আপনি দিনের বেলায় কম ক্ষুধার্ত অনুভব করবেন এবং আপনার শরীরে অনেকক্ষণ ধরে শক্তির যোগান দেবে।
সেহরিতে এক গ্লাস দুধ বা টক দই খেতে পারেন। সেহরিতে অধিক মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবেন না। ইফতার এবং সেহরির মাঝখানের সময়টাতে কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করুন,সারদিনের পানির ঘাটতি পুশিয়ে নিতে। সেহরিতে চা বা কফি পান করবেন না। কারণ এগুলো ডাইউরেটিক,যা দিনের বেলায় প্রসাবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে শরীর দ্রুত পানি শূন্য হয়ে যায়

পড়ুন  সরু কোমর তৈরীর সূত্র

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.