...

চুইংগাম খাওয়ার মারাক্তক কিছু অপকারিতা জেনে নিন

চুইংগাম ।। Chewing Gum

মানুষ যেমন বিচিত্র ধরনের, রুচি যেমন তার বিচিত্র, তেমনি খাবারও আছে বিভিন্ন ধরনের। এর কোনটা চিবিয়ে গিলতে হয়। আবার কোনটা না চিবিয়ে গিলতে হয়। চিবিয়ে গিলে ফেলা হলো খাওয়া, না চিবিয়ে গিলে ফেলা হলো পান করা। কিন্তু যা মুখে নিয়ে আচ্ছাসে চিবানো হলো, কিন্তু সেটা না গিলে ফেলে দেওয়া হলো স্রেফ তার মজাটুকু নিয়ে এমন কি কোনো খাবার আছে? আছে। অনেক আছে। কিন্তু এর মধ্যে কোনটা আপনাদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের। সবাই নিশ্চয়ই এক শব্দে উত্তর দেবেন চুইংগাম। হ্যাঁ, চুইংগাম আজ সারা বিশ্বের শিশু কিশোরদের প্রিয় একটি খাবার। শুধু শিশু কিশোরদের বলি কেন বয়স্করাও পিছিয়ে নেই চুইংগাম খাওয়ায়। দেখেন না খেলার মাঠে ক্রিকেটাররা খেলতে খেলতেও কেমন চুইংগাম চিবায়! সবার প্রিয় চুইংগাম বর্তমানের রূপ পেতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। সেটাও এক মজার গল্প। সেই গল্পই শুনি।
চুইংগাম

চুইংগাম

কেমন করে কোথা থেকে এলো চুইংগামঃ
প্রাচীন গ্রীক জাতি ম্যাসটিক গাছ (mastic tree) এর আঁঠালো উপাদান (কষের মতো) ম্যাসটিচ (Mastiche) খুব পছন্দ করতো। সম্ভবত মানুষের ইতিহাসে সেটাই প্রথম চুইংগাম। খ্রিস্ট্রিয় প্রথম শতাব্দিতে এক গ্রীক চিকিৎসক ও উদ্ভিদবিদ ম্যাসটিক গাছের আরোগ্য সহায়ক ক্ষমতা বর্ণনা করেন। তবে বর্তমানে কেবল গ্রিকরা নয় মধ্যপ্রাচ্যেও ম্যাসটিক গাছের রস ও মৌমাছির মোম একসাথে মিশিয়ে তৈরি চুইংগাম খাওয়ার ব্যাপক চল রয়েছে। গ্রিক ভাষায় ম্যাসটিচ শব্দের অর্থ হলো ‘চিবানো’। এদিকে মধ্য আমেরিকান মায়া জাতির মধ্যেও চুইংগাম চিবানোর প্রথা প্রচলিত ছিল। গবেষণায় দেখা যায়, তারা স্যাপোডিলা (Sapodilla) গাছের রস থেকে তৈরি চুইংগাম চিবাতো। অবশ্য তাদের ভাষায় এটার নাম ছিলো ‘চিকল’ (Chickle)। একসময় এই শিকল চিবানো তাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে যায়।

পড়ুন  ওজন বাড়ানোর জন্য ৬ উপায়

 

৮০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে মায়া সভ্যতার উপাসনালয়, নির্মিত রাস্তা, ক্যালেন্ডার, বিশাল বিশাল শহরগুলো অজ্ঞাত কারণে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও উনবিংশ শতাব্দি পর্যন্ত মায়া জাতির উত্তরসূরিদের মধ্যে একমাত্র ঐতিহ্য হিসেবে এই চুইংগাম খাওয়ার প্রবণতা টিকে ছিলো। নিউ ইংল্যান্ডে বসবাসকারী আমেরিকান ইনডিয়ানরা স্প্রুস গাছের রস থেকে তৈরি চুইংগাম খেত। আমেরিকার জন্মলগ্ন থেকেই চুইংগাম চিবানোর প্রথা বৃদ্ধি পেতে থাকে। উনবিংশ শতকের শুরু পর্যন্ত স্প্রুসগাম-ই ছিল প্রথম গাম প্রডাক্ট যা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হতো। এরপর স্প্রুসগামের স্থান দখল করে প্যারফিন মোম গাম। প্যারফিন মোম গাম মুখের উষ্ণতা ও আর্দ্রতাকে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করে। একে চিবানোর ক্ষেত্রে মানানসই করে বলেই অন্যান্য গামের পরিবর্তে এ গামই বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানেও মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত প্যারাফিন মোম চুইংগাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

 

বর্তমান সময়ের চুইংগামের ব্যবহার শুরু হয় ১৮৬৯ সালে। মেক্সিকান জেনারেল অ্যান্তেনিও লোপেজ ও ডি সান্তা আনরা রাবারের বিকল্প খুঁজছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন চিকল হতে পারে রাবার এর বিকল্প।। তাই এ বিষয়ে তিনি আমেরিকান বিজ্ঞানী টমাস এডামস এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু এডামস দেখেন যে চিকল রবারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়। তাহলে? চিকল রাবারের বিকল্প না হোক অন্য কাজে কি একে ব্যবহার করা যায় না? এডামস সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলেন অচিরেই। একদিন এডামস এক মেয়েকে প্যারাফিন বেইজড গাম চিবাতে দেখেন। তখনই তার মাথায় আসে যে চিকল হতে গাম উৎপন্ন করা যায়। এরপর চিকল হতে গাম উৎপন্ন শুরু হয়। পরে বানিজ্যিকভাবে চুইংগাম তৈরি করতে এই চিকল ব্যবহার শুরু হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, বর্তমানের চুইংগাম আসলে মায়া জাতির সেই চিকল চিবানোর কথাই মনে করিয়ে দেয়। তাই অন্য কথায় বলা যায়, চুইংগাম মায়া জাতির চিকলের পুনঃআবিষ্কার।

Loading...
পড়ুন  ওজন বাড়ায় যেসব পানীয়

 

চুইংগামের প্রকারভেদ:
চুইংগাম বানিজ্যিকভাবে উৎপাদনের পর ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানান রকম ও নানা স্বাদের চুইংগাম তৈরি করতে শুরু করে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলো হচ্ছেঃ
বল গামঃ এটা দেখতে অনেকটা বলের মতো তাই এরকম নাম। সাধারণত বিভিন্ন দেশের ভেন্ডিং মেশিনে এই বল গাম পাওয়া যায়। আমেরিকায় একে গাম বল এবং ইংল্যান্ডে একে স্ক্রু বল বলে।
বাবল গামঃ এই গামকে চিবাতে চিবাতে একসময় কায়দা করে ফুলিয়ে বেলুনের মতো করে ফেলা যায়, তাই এরকম নাম।
ক্যান্ডি গামঃ আসলে এটা চুইংগাম এবং ক্যান্ডির সংমিশ্রণ।
চিকলেট গামঃ এই চুইংগামের চারিদিকে ক্যান্ডির প্রলেপ দেয়া থাকে।
এছাড়া আরও কিছু চুইংগামের নাম শোনা যায়। সেগুলো হলো ফাংশনাল গাম, মেডিকেটেড গাম, পাউডার্ড গাম, স্টিক গাম, রিবন গাম, টিউব গাম বা স্প্যাগেটি গাম ইত্যাদি।

 

চুইংগামের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক। চুইংগাম দাঁতে ক্ষত তৈরি করে। তাই দন্ত বিশেষজ্ঞরা চিনিহীন চুইংগাম খাওয়ার পরামর্শ দেন। আবার যে চুইংগামগুলোতে চিনি ব্যবহার করা হয় না সেগুলোতে এক ধরনের সুইটনার এক্সিটোল ব্যবহার করা হয়। যেটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

 

লাইফস্টাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাই জানিয়েছে অতিরিক্ত চুইংগাম খাওয়ার কিছু অপকারিতার কথা।

 

দাঁতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
চুইংগাম খুব বেশি চিবানো দাঁতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর মধ্যে থাকা চিনি দাঁতের ক্ষয় করতে পারে। অন্যদিকে এর মধ্যে থাকা অম্ল জাতীয় উপাদান ও প্রিজারভেটিভ দাঁতের ভাঙন ও ক্ষয় করে।

 

মাথা ব্যথা বাড়ায়

বেশি চুইংগাম চিবানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চোয়ালের ধারাবাহিক নড়াচড়া মাথায় চাপ তৈরি করে এবং ব্যথা তৈরি করে। মাইগ্রেনের ব্যথার সঙ্গেও এর যোগ রয়েছে।

পড়ুন  Health benefits of walking - হাঁটার সাস্থ্য উপকারীতা

 

পেটে সমস্যা তৈরি করে

চুইংগাম চিবানোর মাধ্যমে কিছুটা বাতাস গেলা হয়। এটি পেটের ব্যথা এবং পেট ফোলাভাব তৈরি করে। এটি ইরিটেবল বাউল সিনড্রমের (আইবিএস) কারণ হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, চুইংগাম চিবানোর সময় মুখ বেশি খোলা রাখবেন না।

 

চোয়ালের সমস্যা করে

দীর্ঘক্ষণ ধরে চুইংগাম চিবালে চোয়ালে সমস্যা হয়। এতে টেমপোরোমেন্ডিবুলার জয়েন্ট ডিজঅর্ডার (টিএমজে) হতে পারে। এ ছাড়া টানা চুইংগাম চিবালে চোয়ালের পেশি ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। এটি কান ও মাথা ব্যথা তৈরি করে।

 

ওজন বাড়িয়ে দেয়

চুইংগাম ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। মানুষ ক্ষুধা দূরে রাখার জন্য চু্ইংগাম চিবায়। তবে গবেষণায় বলা হয়, চুইংগামে যে ধরনের উপাদান থাকে সেটি ক্ষুধা আরো বাড়িয়ে দেয়। এটি চিপস বা ফাস্টফুড খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। আর বেশি খাওয়া তো ওজন বাড়িয়েই দেয়। তাই না?

 

বিপাক ব্যাহত করে

চুইংগাম স্যালিভা উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে উদ্দীপকের ভূমিকা পালন করে। এটি একপর্যায়ে বিপাক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। এটি আরেকটি স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ।

 

ভ্রূণের ক্ষতি করে

গর্ভাবস্থায় চুইংগাম খাওয়া খুবই অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে রয়েছে সিনথেটিক উপাদান। এটি ভ্রূণের বৃদ্ধিতে বাজে প্রভাব ফেলে।

জেনে নিন মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ৮ টি কারণ

 

যে কোন স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের জানান দিতে আপনার ডক্টর রয়েছে আপনাদের পাশে।জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করার জন্য নিয়মিত ভিজিট করুন আপনার ডক্টর health সাইটে।মনে না থাকলে আপনি সাইট আপনার ব্রাউজারে সেভ করে রাখুন।ধন্যবাদ

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.