...

আপু আমি প্রেগন্যান্ট হলে সে বলে এই বাচ্চা অবৈধ…

বিচিত্র মানুষের জীবন আর এই বিচিত্র জীবনের বহু বাক, জীবন আছে বলেই সমস্যা আছে। এই সব সমস্যার সমাধান ও আছে। কিছু কিছু সময় এই সব সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে, মানুষের দ্বারা তৈরী কিছু সমস্যা মাঝে মাঝে জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।

সে

আপু আমি প্রেগন্যান্ট হলে সে বলে এই বাচ্চা অবৈধ…

এই সব ঝামেলা মোকাবেলা করে জীবনকে এগিয়ে নিতে হবে। আমি সোমা কামাল সবাইকে সবসময় এটাই বলে থাকি, জীবন আপনার এটাকে গুছিয়ে নেবার দ্বায়িত্ব আপনারই। দীর্ঘ সময় থেকে আপনাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে আমরা পরামর্শ দেবার চেষ্টা করছি, আশা করছি এই ধারা অব্যাহত থাকবে, আপনিও চাইলে আপনার যেকোন সমস্যার কথা আমাদেরকে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানাতে পারেন, আমাদেরকে লেখার ঠিকানা: www.facebook.com/apoardoctor
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।
“বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় ডিপার্টমেন্টেরই এক বড় ভাই এর সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয় ২০১০ সালের দিকে। ডিপার্টমেন্টে উনাকে প্রায় দেখতাম কিন্তু কক্ষনো কথা বলিনি । স্মার্ট আর ভাল ছেলে বলে ডিপার্টমেন্টে তার খুব সুনাম ছিল । যাই হোক , ২০১১ সালে আমাদের হঠাৎ একদিন দেখা হয় , একটা কাজের ব্যপারে। আর আগে আমদের ফেসবুকে টুকটাক কথাবার্তা হত। দেখা করার পর আমাদের দুজনের দুজনকে কীভাবে যেন ভাল লেগে যায় , এর আগে আমিও তাকে নিয়ে বিশেষ ভাবে কখনো ভাবি নি। কিন্তু দেখা করার দিন থেকে আমাদের প্রতিদিন কথা বলা শুরু হয়।
এইভাবে প্রায় ৬ মাস বন্ধুর মত কথা বলার পর, আমরা বুঝতে পারলাম আমরা একজন আরেকজনকে খুব ভালবাসি। ২০১১ এর শেষের দিকে সে আমাকে ভালবাসার কথা খুলে বলে। কিন্তু সে প্রায়ই বলত, তার মা নাকি আমাকে মেনে নেবে না এই ব্যাপারে তার ভয় হয়। উল্লেখ্য , তার বাবা নাই জন্মের পর থেকে, তাদের ৫ ভাই বোনকে তার মা একলা বড় করেছে হাজার দুঃখ কষ্টের মধ্যে। আমি সম্পর্ক ভেঙ্গে দিতে চাইতাম প্রায়ই । কারণ আমি চাইতাম না সম্পর্ক আর গভীর হোক, যত বেশি দিন যাবে আমরা তত বেশি জড়িয়ে পড়ব , কষ্টও বেশি পাব। কিন্তু সে আমাকে সম্পর্ক ভাঙতে দিত না। সবসময় যোগাযোগ রাখতো। হোস্টেলে থাকা অবস্থায় আমার পরিবারের চেয়েও বেশি টেক কেয়ার করত আমার। মোট কথা, আমার জন্য পাগল ছিল। আমাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও ছিল। কিন্তু মনের সম্পর্ক শরীরের সম্পর্কের উর্ধে ছিল।
সবকিছু ভালভাবেই চলছিল, ২০১৩ সাল পর্যন্ত। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমি হঠাৎ প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ি। দুজনেই খুব ভয় পেয়ে যাই , বিশেষ করে আমি শারীরিক ভাবে চরম অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমি বাচ্চা নষ্ট না করে , ওকে বললাম- চল , বিয়ে করে ফেলি । সে কোন মতেই রাজি হল না। বলল- এই বাচ্চা অবৈধ । এইটা রাখা যাবে না। নষ্ট করে ফেলতে হবে। আমি অনেক রিকুয়েস্ট করলাম তাকে। কিন্তু কোনভাবেই রাজি করাতে পারলাম না। শেষ মেশ বাচ্চা নষ্ট করে ফেললাম। এর পর থেকেই আমাদের সম্পর্কে একের পর এক দুর্যোগ আসতে থাকে ।
২০১৩ সালের জুন মাসে আমার ছোট বোন বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলে। তখন ফ্যামিলি আমাকেও বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্যে উঠে- পড়ে লাগে। আমি তখন তাকে বিয়ে করতে বললে সে বলে এই মুহূর্তে আমাকে বিয়ে করতে পারবেনা। ভাল ছেলে পেলে আমি যেন বিয়ে করে ফেলি! আমার কোন অনুনয়-বিনয় তার কান দিয়ে ঢুকত না, হাজার কান্না কাটিও না। আমি সরে এলাম তার কাছ থেকে ।
এর প্রায় ২/৩ মাস পর ফেসবুকে এক ছেলের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়। ওই ছেলে দেশের বাহিরে থাকতো। ওই ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার প্রায় ২০ দিনের মধ্যেই আমার বয়ফ্রেন্ড আবার আমার সাথে যোগাযোগ করে। প্রচুর কান্নাকাটি আর ইমোশোনাল কথাবার্তা বলতে থাকে। আমি তার কথা শুনে , তাকে খুব সহজ ভাবেই গ্রহন করি। আবার আমাদের সম্পর্ক শুরু করি। প্রবাসী ছেলেটার সাথেও কথা বলতাম , সে ফোন দিলে একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলত আমার সাথে। আর আমার ফোন বিজি পেলেই আমার বয়ফ্রেন্ড খুব রাগ করতো। আমার আম্মার কাছেও ওই ছেলেকে নিয়ে নালিশ করত। যাইহোক , প্রবাসী ছেলেটার সাথে মিশতে দেখে জেলাস হয়ে নাকি ভালবাসার কারণে সে আমাকে কাজি অফিসে বিয়ে করতে চায় । কিন্তু আমি রাজি হইনি। সোজা-সাপটা ভাবে বলেছি , আমাকে তোমার বিয়ে করতে হলে তোমার গার্ডিয়ান নিয়ে আসো , আমরা ধুমধাম করে বিয়ে করব। আমার ছোট বোন পালিয়ে বিয়ে করেছে, এখন আমিও যদি করি , তাহলে আব্বু আম্মু খুব কষ্ট পাবে। ওর বোধহয় , এইটা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয়েছে, আমি যে মেয়ে তাকে যে কোন উপায়ে বিয়ে করতে চেয়েছি , সে মেয়ে এত শক্ত ভাবে তাঁকে না করেছি। কারণ নিজেও ভাল করে জানে যে, সে তার গার্ডিয়ানদের মত কখনই পাবেনা আমাকে বিয়ে করার জন্য।

পড়ুন  তনু হত্যায় আটক হল এক যুবক, এই সেই উত্ত্যক্তকারী পিয়ার ??

 

 

২০১৪ সাল থেকে সে আস্তে আস্তে আমার কাছ থেকে আবার সরতে শুরু করে। প্রবাসি ছেলেটার সাথেও আমি আর কথা বলতাম না। তাকে গত ২টা বছর ধরে বুঝানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি । কিন্তু সে কোনভাবেই বুঝতে চাচ্ছে না আমাকে। তার এক কথা ভাল না লাগলে চলে যাও । এইদিকে আমিও মাস্টার্স শেষ করে ফেলেছি । বাসায় চলে আসতে হয়েছে হোস্টেল ছেড়ে । আমি ওকে প্রচণ্ড ভাবে ভালবাসি এবং কখনওই হারাতে চাইনা। কিন্তু তার মধ্যে আমাকে নিয়ে চরম উদাসিনতা। আগের মত সম্পর্ক ভাল রাখার কিংবা টিকিয়ে রাখার কোন চেষ্টাই তার মাঝে নাই । এর মাঝে বিয়ের কথা তুললেই সে আরও বিরক্ত হত। আমাদের মধ্যে এইটা নিয়ে প্রায় ঝগড়া হত । এক পর্যায়ে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার ৪ মাস পরে আবার দেখা হয়। দেখা হওয়ার পরে সে আবার আমাকে কথা দেয় যে আবার চেষ্টা করে দেখবে। এর পর আমরা মাস খানেক আবার কথা চালিয়ে যাই। কিন্তু , খেয়াল করলাম আমার সাথে প্রচুর মিথ্যা কথা বলছে সে টুকটাক নানা বিষয়ে , আবার অনেক কিছু লুকাতও । আমি কিন্তু সব কিছুর খবর ঠিকঠিকই পেয়ে যেতাম । তাঁকে কোন কিছু নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ক্ষেপে যেত, আর খারাপ আচরণ করত। তাও আমি মেনে নিতাম।

পড়ুন  আমার গর্ভের বাচ্চা কি বাঁচবে?

 

কিন্তু গত মাসখানেক আগে একদিন সামান্য একটা ব্যপার নিয়ে সে আমার সাথে খুব খারাপ ভাবে ঝগড়া করল। বলল, আমাকে নাকি সে ঘৃণা করে , তারপর আমি তাকে যেন আর বিরক্ত না করি এটা বলে ফোন কেটে দেয়। আমি এরপর থেকে আর তাকে কোন ধরনের কল , মেসেজ কিচ্ছু দেই ন। এই মুহূর্তে আমার কী করা উচিত? আমি তাকে এখনও ভালবাসি , প্রতিটা মুহূর্তে তাকে মনে পড়ে। নতুন করে কারো সাথে মিশতেও পারছিনা । সব ধরনের সোশ্যাল কমিউনিকেশন এর মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছি । তাও আমি শান্তি পাচ্ছি না। কোন জবও করিনা, সারাদিন বাসায় বসে থাকি । বের হতে ইচ্ছা করেনা । কীভাবে আমি তাকে ফিরিয়ে আনব , আমাকে একটু সাজেশন দিন।

 

স্যারের রুমে ঢুকতেই স্যার আমাকে… পড়ুন বিস্তারিত

পরামর্শ:
সকলকে পরামর্শ দিই বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক না করতে। সেটা নিয়ে প্রায়ই আমাকে অনেকেই নানান কথা বলেন। অনেকে সরাসরি চার্জ করেন যে যৌন সম্পর্ক করা দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের অধিকার, আমি কেন সেটায় বাঁধা দিই? আজ বলতে চাই যে, ঠিক এই কারণেই বাঁধা দিই যেটা আপনার সাথে হয়ে গিয়েছে। বিয়ের আগে গর্ভবতী হয়ে যাওয়া ও তাঁকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে গর্ভপাত করানো, এটা এমন একটি গতনা যেটা আমি চাই না কোন মেয়ের জীবনে ঘটুক। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে আমাদের নিজেদের ভুলের কারণেই এই ঘটনাটি ঘটে।
যাই হোক, অকারণ উপদেশ দিয়ে কথা বাড়াবো না। আপনার চিঠির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কখনোই আমার মনে হয়নি যে ছেলেটি আপনাকে খুব ভালবাসে বা আপনার জন্য যে কোন কিছু করতে পারবে। যদি তাই হতো, তাহলে গর্ভপাতের প্রয়োজন হতো না, আজ আপনাদের সুখের সংসার থাকতো। যে মানুষ নিজের সন্তানের জন্য লড়তে পারে না, সন্তানকে জন্ম পরিচয় দেয়ার সাহস রাখে না, সেই মানুষ আপনাকে কী ভালবাসবে বলুন তো আপু!

পড়ুন  আমার দুই কাজিন ছোটবেলায় আমার সতীত্ব নষ্ট…. (পড়ুন বিস্তারিত)

আব্বুই আমাকে অশ্লীল ভাবে স্পর্শ করে, জোরাজুরি করে…. পড়ুন বিস্তারিত
যে চলে গিয়েছে বা যে চলে যেতে চায় তাঁকে ফেরানো যায় না। আর ফেরানো টাকেই যায় যে ভালোবাসে। আপনি নিজেও জানে যে ছেলেটি আপনাকে ভালোবাসে না। এই সম্পর্কের ব্যাপারটা সম্পূর্ণই শারীরিক সম্পর্ক, ঈর্ষা আর অনেকদিনের অভ্যাসের ভিত্তিতে টিকে ছিল। আপনি নিজেও প্রবাসী ছেলেটির সাথে কথা বলে ঠিক করেন নি। এতে আপনার প্রেমিক আপনাকে দোষারোপ করার একটা বাহানা পেয়ে গেছে।
আমি বলবো, এই প্রেমিকের চিন্তা বাদ দিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করুন, আপু। একটি চাকরি বাকরিতে ঢুকে যান, নিজের একটা নতুন জগত তৈরি করুন। নিজের জীবনে কিছু করার চেষ্টা করুন। ব্যস্ত থাকলে আস্তে আস্তে নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করবেন। আর যত নিজেকে ফিরে পাবেন ততই কষ্ট কম হতে শুরু করবে। কিছু কষ্ট আমাদের মেনে নিতেই হয়, আপু। এটা আপনার জীবনের তেমনই এক কষ্ট।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
আমি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক বা আইনজীবী নই। কেবলই একজন সাধারণ লেখক আমি, যিনি বন্ধুর মত সমস্যাটি শুনতে পারেন ও তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। পরামর্শ গুলো কাউকে মানতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কেউ যদি নতুন কোন দিক নির্দেশনা পান বা নিজের সমস্যাটি বলতে পেরে কারো মন হালকা লাগে, সেটুকুই আমাদের সার্থকতা। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে দেখা করে বা কাউকে না জানিয়ে গোপনে পরামর্শ চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন এই পেজে। লিঙ্ক- www.facebook.com/apoardoctor

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.