...

ছেলে বা মেয়ে হবার জন্য Y ক্রোমোজোমের ভূমিকা কি?

ক্রোমোজোমের

ক্রোমোজোমের ভূমিকা

আমাদের দেহ তৈরি অসংখ্য কোষ বা cell দ্বারা। এই কোষগুলোতে থাকে নিউক্লিয়াস, নিউক্লিয়াসে থাকে ক্রোমোজোম। মানুষের দেহে এগুলো ২৩ জোড়া। যার মধ্যে ১ জোড়ার কাজ ভ্রুণ গঠনের সময় লিঙ্গ নির্ধারণ, বাকি ২২ জোড়ার কাজ ভ্রুণ গঠনের সময় থেকে শুরু করে সারা জীবন ধরে বিভিন্ন দৈহিক বৈশিষ্ট্যের উন্মেষ অব্যাহত রাখা। Sex Chromosome- যদি XY হয় তাহলে পুরুষ আর যদি XX হয় তাহলে নারী। এই হলো আমাদের সাদামাটা জ্ঞান।

জেনে নিন ক্রোমোজোম কি? এর কাজ কি?

প্রায়শই মানুষ না জেনেই এই ভুল ধারনা পোষণ করে যে একজন মানুষ পুরুষ না কি নারী হবে তা নির্ভর করে কেবলমাত্র Y ক্রোমোজোমের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর।

 

SRY (১৯৮৯ সালে আবিস্কৃত) একটি ছোট্ট জীন Y ক্রোমোজোমের short arm এর মাথার দিকে থাকে যা সাধারনত পুরুষ হিসেবে development এর ক্ষেত্রে ভ্রুণকে (embryo) পুরূষ হবার পথে (masculine pathway) চালিত করে। এছাড়া এটা করে কি? আসলে, অন্যান্য জীনগুলোর মতো এটিও কোন প্রোটিন সংশ্লেষনের নীলনকশা হিসেবে কাজ করে (act as a blueprint ) এবং DNA-তে অন্যসকল জিনের মতো সাদামাটা কাজগুলোই করে এর সাথে সাথে তাহলে, এই জীনটা কেন “লিঙ্গ নির্ধারণী” (sex determining) জীন হিসেবে পরিচিত হলো?

 

পড়ুন  ও বেশিক্ষণ থাকতে পারে না লজ্জ্বার কথা কাউকে বলাও যায় না,ওর সাথে থাকেতেও আমার সমস্যা হচ্ছে...

জীনতত্ত্বের জগতে এমন ধারনার কারণ হলো কিছু দূর্দান্ত কিছু ইঁদুর। ইংল্যান্ডের গবেষকরা ইদুরের এটি মেয়ে (XX) ভ্রুণের মধ্যে তার বৃদ্ধির প্রাথমিক দশায় (early stage of development) এই জীনটি (SRY) কৃত্তিমভাবে প্রবেশ করান। এর ফলে ইদুরটি মেয়ে হিসেবে নয় বরং পুরুষ হিসেবে জন্ম নেয়। যেহেতু, ইদুরটি XX ক্রোমোজোমবিশিষ্ট নারী হিসেবে জন্মগ্রহণ করার কথা কিন্তু SRY জিনের উপস্থিতি একে পুরুষে রুপান্তরিত করেছে আর এই জীনটি যেহেতু Y ক্রোমোজোমে পাওয়া যায়, সুতরাং Y ক্রোমোজোমই পুরুষ হবার জন্য দায়ী; অর্থাৎ Y ক্রোমোজোম থাকলে হবে পুরুষ না থাকলে হবে মেয়ে, ঠিক তো?

 

তা না-ও হতে পারে। উক্ত গবেষণার কয়েক বছর পর, একই ধরনের জিনের দেখা মেলে মানুষের ১৭ নং ক্রোমোজোমে। যখন এই জীনটাকে একটি মেয়ে ভ্রুণে (ইদুরের) স্থাপন করা হয়। দেখা যায়, ফলাফল একই- এক পুরুষ ইঁদুরের জন্ম।

এখন আমাদের হাতে আছে দুই দুইটি জীন, যাদের উপস্থিতি নারীকে পুরুষে রুপান্তরিত করতে সক্ষম। এদের একটির অবস্থান Y ক্রোমোজোমে, অন্যটির নয়। তা কীভাবে সম্ভব? এ থেকে বোঝা যায়, SRY সম্ভবত শুধুই একটা facilitator (ভাল বাংলা পাচ্ছি না) যা কোন অপেক্ষাকৃত জটিল জীন (বা জীনসমূহ) – কে তার বিপরীত কোন factor-কে ব্লক করার মাধ্যমে কার্যক্ষম করে তোলে- যার ফলশ্রুতিতে জন্ম হয় পুরুষ প্রাণির। জীনতত্ত্বের ম্যাজিক কি এর বিপরীত কি এর বিপরীত কাজ করতে পারে? পুরুষকে (XY ক্রোমোজোম বিশিষ্ট) নারীতে পরিনত করতে পারে?

পড়ুন  মেয়েদের বির্যপাত হয়না, তাহলে কি ভাবে বুঝব সঙ্গিনীর তৃপ্তি বা অর্গ্যাজম হয়েছে কি না?

 

অবশ্যই পারে। X ক্রোমোজোমে (তথাকথিত নারীসূলভ বৈশিষ্ট্য বহনকারী) অবস্থিত DAX1 নামের জীনটির একজোড়া যদি কোন পুরুষ ইদুরে (XY) প্রবেশ করানো হয় বা থাকে, তবে Y ক্রোমোজোমের উপস্থিতি সত্ত্বেও সেটি নারী ইদুর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

এখন, আমাদের কাছে Y-ক্রোমোজোমে অবস্থিত এমন এক জীন আছে যা XX ক্রোমোজোমবিশিষ্ট নারীকে পুরুষে পরিনত করতে এবং X-ক্রোমোজোমে অবস্থিত এমন এক জীন আছে যা XY ক্রোমোজোমবিশিষ্ট পুরুষকে নারীতে পরিনত করতে সক্ষম। সুতরাং বলা যায়, X বা Y ক্রোমোজোমের উপস্থিতির কারণে maleness বা femaleness নির্ধারিত হয় না – কারণ এ বা একাধিক জীনের কার্যক্রম পুরো প্রক্রিয়া উল্টিয়ে দিতে পারে।

 

এবার একটি পরিসংখ্যান দেখা যেতে পারে- প্রায় প্রতি ২০,০০০ জন পুরুষের মধ্যে ১ জনের কোন Y ক্রোমোজোম থাকে না। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, বাংলাদেশের অন্তত ৪,০০০ জন পুরুষ Y-ক্রোমোজোম বিহীন। একই অর্থ দাঁড়াচ্ছে নারীদের ক্ষেত্রেও। এর ফলে প্রায় ৮,০০০ বাংলাদেশীর ক্ষেত্রে হয়ত (গোটা দুনিয়ায় কত জন?) ক্রোমোজোমের তথাকথিত XX, XY গঠন অপ্রাসঙ্গিক। সত্যি কথা বলতে কি, X বা Y ক্রোমোজোমের চেয়েও বেশী কিছু রয়েছে যা পুরুষ বা নারী বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। তারা পুরুষ না নারী বা তারও উপরে কেমন ব্যক্তি তা নির্ভর করছে তাদের পুরো জেনেটিক অবকাঠামো ও তার সাথে সাথে দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক অবস্থানের উপর। এ কথা আমার বা আপনার বেলায়ও সমভাবে প্রযোজ্য। সবোর্পরি, জীনসমূহের কার্যক্রম ছাড়াও একজন ব্যক্তির লৈঙ্গিক গঠন পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের উপরেও নির্ভর করে (যেখানে ভ্রুণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় সেই মাতৃদেহের জরায়ুর পরিবেশও বিবেচ্য)।

পড়ুন  স্ত্রীর দুধ পান করা হালাল না হারাম?

 

Dr. Charmian Quigley এমন অন্তত ৩০টি জীন খুঁজে পেয়েছেন যেগুলো মানুষের ও ইঁদুরের দেহে লিঙ্গ নির্ধারনে অবদান রাখে যার মধ্যে মাত্র তিনটির অবস্থান X-ক্রোমোজোমে, ১টি থাকে Y-ক্রোমোজোমে আর বাঁকি গুলো তথাকথিত Autosome-এ (ক্রোমোজোম নং ১, ২, ৩, ৪, ৭, ৮, ৯. ১০, ১১, ১২, ১৭ ও ১৯ এ)।

 

উপরের আলোচনার আলোকে বলা যায়, লিঙ্গ নির্ধারণ আমাদের কোন নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের কাজ নয় বরং আমাদের পুরো Genetic make-up বা জীনগত গঠন ও জীনগুলোর কার্যকারিতার ফসল। আর Y ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকলে ছেলে আর না থাকলে মেয়ে হবে, একথাটা বলাটা বোধহয় বিজ্ঞান সম্মত হবে না – রীতিমত হাস্যকর ঠেকবে।

তথ্যসূত্রঃ
১। WikiPedia
২। ISNA
৩। BrainPickings

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.