কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সহজ উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্য (constipation) বেশ কষ্টদায়ক একটি সমস্যা।আপনার ডক্টর অনলাইন বাংলা স্বাস্থ্য টিপস পোর্টালের আজকের আর্টিকেলটি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার কারণ, লক্ষ ও প্রতিকার বিষয়ে সাজানো হয়েছে। নিচে একটা রূপক চিত্র ফুটানো হয়েছে।
রহমান সাহেবের বয়স ৪০ বছরের মতো। ভালো একটা চাকরি করেন।বেশ কিছুদিন যাবৎ রহমান সাহেবের শক্ত পায়খানা হচ্ছে। পায়খানায় দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরও মনে হচ্ছে পায়খানা ঠিক ক্লিয়ার হচ্ছে না। রহমান সাহেবকে খুবই বিষণ্ন মনে হচ্ছে। দিন দিন কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছে।রহমান সাহেবের পরীক্ষা করে দেখাগেল তার কোলনে অর্থাৎ অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার।
রহমান সাহেবের যে উপসর্গগুলো তা মূলত কোষ্ঠকাঠিন্যের। কিন্তু এ কোষ্ঠকাঠিন্য কী, কেন হয়? তা আমরা কিভাবে প্রতিরোধ করতে পারি এবং সময়মতো এর চিকিৎসা না করলে কী কী পরিণতি হতে পারে সে বিষয়েই এখন আমরা আলোচনা করব।
কেউ যদি প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও, তখনই একে বলে কোষ্ঠকাঠিন্য (constipation) ।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণঃ
১. আঁশজাতীয় খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূল কম খেলে;
২. পানি কম খেলে;
৩. দুশ্চিন্তা করলে;
৪. কায়িক পরিশ্রম, হাঁটা-চলা কিংবা ব্যায়াম একেবারেই না করলে;
৫. অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে;
৬. ডায়াবেটিস হলে;
৭. মস্তিষ্কে টিউমার হলে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে;
৮. অনেক দিন বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকলে;
৯. বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন, যেমনঃ
ক. ব্যথার ওষুধ;
খ. উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ;
গ. গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ;
ঘ. খিঁচুনির ওষুধ এবং
ঙ. যেসব ওষুধের মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামজাতীয় খনিজ পদার্থ থাকে। তা ছাড়া স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার জন্যও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এর মধ্যে কাঁপুনিজনিত অসুখ, স্নায়ু রজ্জু আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ও থাইরয়েডের সমস্যা উল্লেখযোগ্য।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণঃ
১. শক্ত পায়খানা হওয়া;
২. পায়খানা করতে অধিক সময় লাগা;
৩. পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া;
৪. অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরও পূর্ণতা না আসা;
৫.মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথার অনুভব করা এবং
৬. আঙুল কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে পায়খানা বের করা।
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়ঃ
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে;
২. বেশি করে পানি খেতে হবে;
৩.দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে;
৪. যারা সারাদিন বসে কাজ করেন তাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং
৫. যেসব রোগের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তার চিকিৎসা করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসা না করা হলে যে সমস্যা হতে পারেঃ
১. পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে;
২. পাইলস;
৩. এনালফিশার;
৪. রেকটাল প্রোলাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে;
৫. মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে;
৬. প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে;
৭. খাদ্যনালীতে প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যেতে পারে;
৮. খাদ্যনালীতে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে এবং
৯. কোষ্ঠকাঠিন্য যদি কোলন ক্যান্সার এবং মস্তিষ্কে টিউমারের জন্য হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তবে অকালমৃত্যু হতে পারে।
নারীর অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাব বেরিয়ে যাওয়ার কারণ জেনে নিন
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেকে প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, সিরাপ এবং মলদ্বারের ভেতরে দেয়ার ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, যা মোটেও উচিত নয়। প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার ওষুধ (medicine ) ব্যবহার করলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ফলে মলদ্বারে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা আর থাকে না। তাই বয়স্ক এবং যারা পরিশ্রমের কাজ করেন না, এদের মধ্যে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাদের উচিত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ নির্ণয় করে সে হিসেবে চিকিৎসা নেয়া। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ইসবগুলের ভূসি পানিতে ভিজিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেললে এবং গরু, খাশি ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার যেগুলো মল শক্ত করে তা থেকে দূরে থাকলে অনেকে উপকৃত হতে পারেন।
যে কোন স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের জানান দিতে আপনার ডক্টর রয়েছে আপনাদের পাশে।জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করার জন্য নিয়মিত ভিজিট করুন আপনার ডক্টর health সাইটে।মনে না থাকলে আপনি সাইট আপনার ব্রাউজারে সেভ করে রাখুন।ধন্যবাদ
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২৬ অক্টোবর ২০০৮।