...

হাঁপানি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

হাঁপানি একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যার মূল লক্ষণ হল শ্বাস কষ্ট ও সাঁসাঁ শব্দে নিঃশ্বাস ফেলা। হাঁপানি আক্রমণের সময় শ্বাসনালীর আস্তরণ ফুলে যায়, যার ফলে শ্বাসনালী এতটাই সংকীর্ণ হয়ে যায় যে প্রশ্বাস ও নি:শ্বাসে শ্বাসবায়ুর গতি অনেকটাই কমে যায়। হাঁপানির কারণ এখনো পুরোটা বোঝা যায়নি।

তবুও, অ্যালার্জি, তামাকের ধোঁয়া ও রাসায়নিক উত্তেজক পদার্থে হাঁপানি ক্রমশ: বৃদ্ধি পায় ও এগুলোকে হাঁপানি রোগের মূল কারণ হিসেবে ধারা হয়। হাঁপানির পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নয়, কিন্তু যথাযথ পরিচালনায় এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। উন্নত মানের সুস্থ জীবন যাপনের জন্য সঠিক পরিচালনার প্রয়োজন।

হাঁপানির উপসর্গ

যেসব লক্ষণের ভিত্তিতে হাঁপানি রোগ চেনা যায় :

ঘুরেফিরে ঘন ঘন সাঁসাঁ শব্দে নিঃশ্বাস ফেলা
শ্বাসকষ্ট
বুকে টান ধরা
কাশি
কাশির ফলে ফুসফুস থেকে থুতু উৎপন্ন হতে পারে। রাতে ও ভোরের দিকে অথবা এলার্জির ফলে উপসর্গগুলো খারাপের দিকে এগোয়।

আরো অন্যান্য শারীরিক অবস্থা যা হাঁপানির সঙ্গে জড়িয়ে আছে :

গ্যাস্ট্রো এসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জি ই আর ডি)
রিনোসাইনাসাইটিস
ঘুমে ব্যাঘাত

হাঁপানির কারণ

হাঁপানির প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে, নির্দিষ্ট কতগুলো ঝুঁকির কারণ হাঁপানির সঙ্গে সংযুক্ত এবং নিম্নলিখিত বিষয়গুলো এদের মধ্যে পড়ে :

এলার্জি বৃদ্ধির বংশগত প্রবণতা, যাকে অ্যাটোপি বলা হয় (অ্যাট-ও-পে)
বাবা-মা’র হাঁপানি থাকলে (বংশগত)
ধূলো,পশুর লোম, আরশোলা, ফুলের রেণু, ঘাস থেকেও এলার্জি হতে পারে।
উত্তেজক বা প্রাদাহ্জনক সিগারেটের ধোঁয়া, বায়ু দূষণ, কাজের জায়গায় রাসায়নিক বা ধূলোবালি এবং স্প্রে (যেমন, চুলের স্প্রে)
অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ অথবা অন্য কোনো অ্যান্টি স্টেরয়েড কিংবা ব্যথা কমানোর ওষুধ এবং ননসিলেক্টিভ বিটা ব্লকার।
খাদ্য ও পানীয়ে সালফাইটের প্রভাব।
ভাইরাসঘটিত শ্বাস-প্রশ্বাসসংক্রান্ত সংক্রমণ যেমন,-ঠান্ডা লাগা
ব্যায়াম সহ শারীরিক কাজকর্ম
শৈশবে বায়ুবাহিত অ্যালার্জি বা ভাইরাসঘটিত সংক্রমণের সংস্পর্শ অথবা শৈশবের গোড়াতে যখন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা(অনাক্রমতা)সদ্য বিকাশের পথে

পড়ুন  শীতে শিশুর হাঁপানি হলে করণীয়

রোগ নির্ণয়

চিকিৎসা সম্পর্কিত ইতিহাস : নিম্নলিখিত সম্পর্কিত বিষয়গুলো ডাক্তারবাবু জিজ্ঞেস করতে পারেন :

এলার্জি সম্পর্কিত তথ্য, হাঁপানি অথবা অন্য কোনো রোগ সম্পর্কীয় তথ্য সহ চিকিৎসার নথি ও ইতিহাস
যদি কারুর বুকজ্বালা করে বা মুখ টক হয়ে থাকে, তবে তা গ্যাস্ট্রো এসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জি ই আর ডি)-র লক্ষণ হতে পারে।
যদি ঠান্ডা লাগে বা সর্দি-জ্বর হয়
যদি কেউ ধূমপান করেন অথবা ধূমপানরত কারুর কাছে থাকেন

শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা : কফ-কাশি সম্পর্কিত কোনো সমস্যার লক্ষণ জানতে স্টেথোস্কোপ দিয়ে আপনার ডাক্তার আপনার ফুসফুসের শব্দ শুনবেন এবং যদি সাঁসাঁ শব্দে নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ (শ্বাস ফেলার সময় বাঁশি বাজার মতো বা চিঁ-চিঁ শব্দ) অথবা অন্য কোনো অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পান তবে হাঁপানির সম্ভাবনা থাকে।অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যে পড়ে :

Loading...

বুকের এক্স-রে : বুকের এক্স-রে ফুসফুস ও হৃৎপিন্ডের ছবি নেয় এবং এটি ফুসফুস-প্রদাহ ও ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
ফুসফুসের কার্যকারিতার পরীক্ষা : এই পরীক্ষাগুলো পরিমাপ করতে পারে কতোটা পরিমাণ শ্বাসবায়ু আপনি নেন ও ছেড়ে দেন, কত দ্রুত আপনি শ্বাস ছাড়েন এবং কতোটা ভালোভাবে আপনার ফুসফুস রক্তের মধ্যে অক্সিজেন প্রদান করে। ফুসফুসের কার্যকারিতার পরীক্ষা হাঁপানি রোগ নির্ণয় করতে ও সম্পর্কিত কারণ সন্ধানে যথেষ্ট প্রয়োজনীয়।
সাইনাসের এক্স-রে : সাইনাস-সংক্রমণ নির্ণয় করতে এটি র প্রয়োজন।

পড়ুন  ওজন কমানোর উপায়

চিকিৎসা /ওষুধ প্রয়োগ :

হাঁপানির ওষুধ সাধারণত: ইনহেলারের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিষেধক বা আরোগ্য-সহায়ক হিসেবে ইনহেলার ব্যবহৃত হয় । হাঁপানির ক্ষেত্রে প্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে ওষুধ গ্রহন যথেষ্ট কার্যকরী, যেহেতু এটি সরাসরি ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছোয় ও খুব সামান্যই শরীরের অন্যত্র গিয়ে মেশে।

আরোগ্য-সহায়ক (উপশম) ইনহেলার : ইনহেলারের মধ্যে সাধারণত: স্বল্প-কার্যকরী বিটা ২-অ্যাগোনিস্ট থাকে। এটি সংকীর্ণ শ্বাসপথ ঘিরে থাকা পেশীকে শিথিল করতে সাহায্য করে। হাঁপানি উপশমের অষুধের মধ্যে পড়ে সালবুটামোল ও টারবুটালিন জাতীয় ওষুধ।

প্রতিষেধক (নিবারক) ইনহেলার :এটি ব্যথা ও শ্বাসটান কমাতে সাহায্য করে। এটি হাঁপানি প্রতিরোধ করে। প্রতিষেধক (নিবারক) ইনহেলারের মধ্যে পড়ে বেকলোমেটাসোন , বিউডাসোনাইড, ফ্লুটিকাসোন ও মোমেটাসোন জাতীয় ওষুধ।

ঝুঁকি

হাঁপানির উপসর্গগুলো ঘুম, কাজ ও বিনোদনের মাঝখানে বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
স্থায়ীভাবে শ্বাসনালীকে সংকীর্ণ (শ্বাসপথের পুনর্গঠন) করে আপনার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতকে বাধা দেয়।
হাঁপানি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে স্কুলে বা কাজে যাওয়া অসুবিধে হয়ে যায়।
দীর্ঘ দিন হাঁপানির ওষুধ ব্যবহার করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

আসুন জেনে নিই কী করবেন?

১. হাঁপানি সমস্যায় খেতে পারেন মধু। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ১ চামচ মধুর সঙ্গে সামান্য দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়ে খেতে পারলে শ্বাসকষ্ট অনেকটাই কমে যাবে। হাঁপানি ছাড়া সর্দি-কাশিতেও এই মিশ্রণ খুবই উপকারী।

পড়ুন  প্রতিদিন মাত্র ১টি কলা খেয়ে, দূর করুন এই ১২টি স্বাস্থ্য সমস্যা খুব সহজেই

২. এক টুকরো আদা পানিতে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। এর পর ঠাণ্ডা করে খেয়ে নিন। শুধু হাঁপানি নয়, সর্দি-কাশির সমস্যাও উপকার পাবেন।

৩. এক কাপ দুধের মধ্যে ৪ কোয়া রসুন ফেলে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে খেয়ে নিন। ফুসফুসের যে কোনো রোগ তা খুবই উপকারী।

৪. পাতিলেবুর রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এক গ্লাস পানির মধ্যে একটা গোটা পাতিলেবুর রস আর সামান্য চিনি দিয়ে প্রতিদিন খেলে হাঁপানির কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে।
৫. পেঁয়াজ আমাদের নাসাপথকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। শ্বাসকষ্ট দূর করতে কাটা পেঁয়াজ খেয়ে দেখতে পারেন।

৬. হাঁপানি সমস্যায় ল্যাভেন্ডার তেল খুবই কার্যকরী। ১ কাপ গরম পানির মধ্যে ৫-৬ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল ফেলে ধীরে ধীরে ভেপার (ভাপ) নিন। দ্রুত উপকার পাবেন।

ঘরোয়া এসব উপাদান আপনাকে এই সমস্যা থেকে সাময়িকভাবে মুক্তি দিতে পারে। সমস্যা জটিল হলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।

তথ্যসূত্র: জিনিউজ

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.