...

নাকের পলিপাস থেকে মুক্তি মিলবে তিন উপায়ে

কীভাবে বুঝবেন নাকে পলিপ হয়েছে? নাকের পলিপ সম্পর্কে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্ন : নাকের পলিপ- এই রোগের নাম আমদের কাছে খুব পরিচিত। নাকের পলিপ বলতে আমরা কী বুঝি?
প্রশ্ন : একজন রোগী কীভাবে বুঝবেন তাঁর নাকে পলিপ হয়েছে?
প্রশ্ন : পলিপের কি কোনো ভাগ আছে?
প্রশ্ন : এই রোগ নিয়ে আসলে কীভাবে আপনারা রোগ নির্ণয় করেন? এবং চিকিৎসা শুরু করেন কিসের ভিত্তিতে?
প্রশ্ন : তার মানে আমরা যে দেখছি যত্রতত্র বিনা অস্ত্রোপচারে পলিপের চিকিৎসা সেটির আসলে ব্যাখ্যা নেই?
প্রশ্ন : এই অস্ত্রোপচারকে অনেকে ভয় পান। আপনারা রোগীদের আশ্বস্ত করেন কীভাবে?
প্রশ্ন : অস্ত্রোপচারের মধ্যে কতক্ষণের মধ্যে সে স্বাভাবিক জীবনে চলে আসতে পারবে?
প্রশ্ন : আরেকটি ধারণা সবার মধ্যে কাজ করে, একবার অস্ত্রোপচার করলে আবার পলিপ হয় কি না? তখন বারবার অস্ত্রোপচার করতে হয় কি না?
প্রশ্ন : সময় মতো যদি সঠিক চিকিৎসা নেওয়া না হয় তাহলে কী জটিলতা হতে পারে?
প্রশ্ন : রোগটি প্রতিরোধের কোনো উপায় রয়েছে কি না?
প্রশ্ন : নাকের যেন বিভিন্ন সমস্যা না হয় এই জন্য এর যত্ন কীভাবে নিতে হবে?
নাকের পলিপ প্রচলিত একটি রোগ। এলার্জির কারণে সাধারণত নাকের পলিপ হয়। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না নিলে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

প্রশ্ন : নাকের পলিপ- এই রোগের নাম আমদের কাছে খুব পরিচিত। নাকের পলিপ বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : নাকের পলিপ হলো দীর্ঘ মেয়াদি এলার্জি। নাকের যদি এলার্জি হয় বা সংক্রমণ হয়, এটি হতে হতে নাকের যে ঝিল্লি আছে, মিউকাস মেমব্রেন আমরা বলি, এর মধ্যে পানি জমে যায়। পানি হয়ে অনেকটা আঙ্গুর ফলের মতো ফুলে যায়। ফুলে নাকের ভেতরে চলে আসে।একে বলা হয় নাকের পলিপ।

তবে নাকের পাশে তিনটি মাংসের পিণ্ড রয়েছে। একটিকে বলি ইনফিরিয়র টার্মিনেট, অন্য দুটিকে মিডেল টার্মিনেট ও সুপিরিয়র টার্মিনেট বলি। ইনফিরিয়র টার্মিনেট দুই পাশে বড়। এই ইনফিরিয়র টার্মিনেটকে পলিপ বলে বিভিন্ন অপচিকিৎসা করা হয়। একটি স্বাভাবিক অংশকে পলিপ হিসেবে ধরে নেয়। তবে পলিপ আসলে সেটি নয়।

প্রশ্ন : একজন রোগী কীভাবে বুঝবেন তাঁর নাকে পলিপ হয়েছে?
উত্তর : তার নাক বন্ধ থাকবে। তার দীর্ঘমেয়াদি নাক দিয়ে পানি আসবে। নাকে এলার্জি থাকবে বা নাকে সংক্রমণ থাকবে। ক্রমান্বয়ে নাক বন্ধ থাকবে। একদিকে অথবা দুই দিকেই নাক বন্ধ হয়ে যাবে। মাথা ব্যথা করবে। সেটি অনেকদিন ধরে হতে পারে। তখনই নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের কাছে এলে সেটি তিনি দেখবেন।

পড়ুন  কিডনি রোগের ১০ লক্ষণ, জানেন কি?

প্রশ্ন : পলিপের কি কোনো ভাগ আছে?
উত্তর : পলিপের দুই রকম ভাগ আছে। একটি হলো ইথময়েডাল পলিপ। আরেকটি হলো, অ্যানথ্রোকরনাল পলিপ। নাকের দুই পাশে যে সাইনাস আছে। ইথময়েডাল সাইনাসে দেখা যায়, নাকের ওপর থেকে উঠে নিচের দিকে পলিপগুলো আসে এবং এলার্জি যাদের বেশি তাদের বেশি হয়। দুই পাশে অনেকগুলো হয়।

সাধারণত বয়স্ক লোকদের এসব বেশি হয়। আর অ্যানথ্রোকরনাল যেটা, মেক্সিলারি সাইনাস থেকে নাকে ডান বা বাম পাশে উঠে নাকের পেছনে চলে যায়। এটা একদিকে হয় এবং একটাই হয়। এটা তরুণ বয়সেও হতে পারে।

প্রশ্ন : এই রোগ নিয়ে আসলে কীভাবে আপনারা রোগ নির্ণয় করেন? এবং চিকিৎসা শুরু করেন কিসের ভিত্তিতে?
উত্তর : এটি আসলে দেখলেই বোঝা যায়। পলিপটা হবে সাদা, আঙ্গুর ফলের মতো। এটা যদি আমরা কিছু দিয়ে স্পর্শ করি এর কোনো সেন্স থাকবে না। টার্মিনেট হবে একটু লালচে, এটা লেটারাল ওয়ালের সাথে লাগানো থাকবে। আর পলিপের চারপাশে দেখা যায় ঝুলন্ত।

আর টার্মিনেট স্পর্শ করলে সাথে সাথে হাঁচি উঠবে। এটা পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায়। পাশাপাশি এক্স-রে রয়েছে। আজকাল এন্ডোস্কোপি করা হয়। আমরা কম্পিউটারের মাধ্যমে দেখতে পাই। এমনকি রোগীকে দেখিয়ে দেই। পলিপ হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার লাগবে। পলিপ হওয়া মানে অস্ত্রোপচার করতে হবে। এটা আর ওষুধে যাবে না।

প্রশ্ন : তার মানে আমরা যে দেখছি যত্রতত্র বিনা অস্ত্রোপচারে পলিপের চিকিৎসা সেটির আসলে ব্যাখ্যা নেই?
উত্তর : হ্যাঁ, এই ধারণা ঠিক নয়। ওষুধ দিয়ে এলার্জি দূর হবে। সংক্রমণের চিকিৎসা হবে। তবে পলিপ যদি হয়ে যায় এটি বের করতে হবে।

প্রশ্ন : এই অস্ত্রোপচারকে অনেকে ভয় পান। আপনারা রোগীদের আশ্বস্ত করেন কীভাবে?
উত্তর : আমরা তখন কাউন্সিলিং করি। একজন রোগী যখন দেখল তার নাকে পলিপ, তখন সে সম্মত হয়। আমরা বুঝাই, আগে তো কাটতে হতো, এখন কাটতে হয় না। এখন ফাংশনাল এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি হচ্ছে নিয়মিত।

আমাদের দেশে এটি নিয়মিত হচ্ছে। এগুলো বুঝালে রোগীরা বুঝে যায়। পাশাপাশি যেহেতু নাক বন্ধ থাকার কারণে তার কষ্ট হয়। এটি বের করে ফেললে কষ্টটাও কম হয়। পলিপ অস্ত্রোপচার করলে সাথে সাথে সে ফল পাচ্ছে।

পড়ুন  দ্রুত ওজন কমাতে লেবুর ৪ টি ব্যবহার

প্রশ্ন : অস্ত্রোপচারের মধ্যে কতক্ষণের মধ্যে সে স্বাভাবিক জীবনে চলে আসতে পারবে?
উত্তর : পরের দিনই সে স্বাভাবিক জীবনে যেতে পারবে। নিরাময় হতে পাঁচ সাত দিন লাগবে। তবে কর্মক্ষেত্রে পরের দিনই যেতে পারবে।

প্রশ্ন : আরেকটি ধারণা সবার মধ্যে কাজ করে, একবার অস্ত্রোপচার করলে আবার পলিপ হয় কি না? তখন বারবার অস্ত্রোপচার করতে হয় কি না?
উত্তর : এই প্রশ্নটি নাকের বেলায় সবাই করে। যেকোনো রোগী একবার অস্ত্রোপচার করার পর আবার করতে হতে পারে। পলিপ আবার হতে পারে। যেকোনো রোগও আবার হতে পারে। জ্বর হলেও আবার হতে পারে। মাথা ব্যথা হলেও আবার হতে পারে।

ডায়রিয়া হলেও আবার হতে পারে। স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হলেও আবার হতে পারে। প্রতিটা রোগই তো আবার হতে পারে। তাই নাকের বেলায়ও হতে পারে। পলিপ হলে অস্ত্রোপচার করে ফেলতে হবে। আবার কখন হবে এর জন্য আমরা কী বসে থাকব?

প্রশ্ন : সময় মতো যদি সঠিক চিকিৎসা নেওয়া না হয় তাহলে কী জটিলতা হতে পারে?
উত্তর : পলিপ হলে খাবারের সময় স্বাদ পাবে না। এটি মস্তিস্কের দিকে যেতে পারে। সংক্রমণ হতে পারে। মস্তিস্কে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। অনেক সময় নাকের পেছন দিয়ে তালুর পেছনে, গলায় ঝুলতে পারে। তখন খেতে অসুবিধা হয়।

প্রশ্ন : রোগটি প্রতিরোধের কোনো উপায় রয়েছে কি না?
উত্তর : প্রতিরোধ হলো অ্যালার্জি যাদের আছে, তাদের এটি এড়িয়ে যেতে হবে। কী কারণে এলার্জি হচ্ছে, সেটি এড়িয়ে যেতে হবে। আর এলার্জি যদি বেশি হয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এর চিকিৎসা নিতে হবে।

স্টেরয়েড স্প্রে আছে, মন্টিলুকাস আছে-এগুলো দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। যাদের তীব্র এলার্জি আছে, তাদের নাকে যেন সংক্রমণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে আর পলিপ হবে না।

প্রশ্ন : নাকের যেন বিভিন্ন সমস্যা না হয় এই জন্য এর যত্ন কীভাবে নিতে হবে?
উত্তর : প্রথমত নাক পরিষ্কার করা ভালো। তবে খুব জোরে নয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় নাকটা পরিষ্কার হয়ে যায়। কাজ করার পর হাতমুখ ধুয়ে নেব, নাকও পরিষ্কার করে নেব। এলার্জি যাদের আছে, তাদের আগে বুঝতে হবে কিসে এলার্জি হচ্ছে।

ঘরের ধুলাবালি, বাইরের ধুলাবালি, খাবার, সিনথেটিক কাপড়, পারফিউম, ফুলের রেণু, কসমেটিক, পরিবেশ দূষণ এগুলো থেকে এলার্জি হতে পারে। সেই দিকটি অবশ্যই মাথায় রেখে সেভাবেই সতর্ক হয়ে চলতে হবে।

পড়ুন  ওজন বাড়ানো সহজ ঘরোয়া কিছু উপায়

নাকের পলিপাস সমস্যাটি নিয়ে অনেকেই ভুগে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে সর্দি, কাশি বা এলার্জির কারণে বিনা চিকিৎসায় থাকলে পলিপাস হতে পারে।

পলিপাস মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে- ইটময়রেল ও মেক্সিলারি এন্ট্রোকনাল পলিপ। প্রথমটি নাকের উপরের সেতু হিসেবে কাজ করে। অনেকগুলো কোষের সমন্বয়ে তৈরি একটি ঝিল্লি। যেহেতু কোষের দেয়ালগুলো পাতলা থাকে তাই এগুলোতে পানি জমে ফুলে যায়। যার ফলে নাক প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই পলিপটি হওয়ার জন্য দায়ী মূলত এলার্জি।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় পলিপটি অ্যালার্জির মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। এনট্রোকনাল পলিপ সাধারণত নাকের পেছনের দিকে এরপর গলায় গিয়ে বাড়তে থাকে। এর ফলে পুরো নাক বন্ধ হয়ে যায়। এই পলিপগুলো বৃদ্ধি পাওয়ায় একসময় অস্ত্রোপচার করতে হয়। তবে প্রাথমিকভাবে নাকের পলিপাস শনাক্ত হলে ঘরোয়া তিন উপায়েই তার সমাধান করতে পারেন। জেনে নিন কীভাবে-

হলুদ
হলদে রঙা এই মশলাটিই পারে পলিপাসের সমস্যার সমাধান ঘটাতে। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমূহ। যা শারীরিক বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। এক গবেষণার তথ্যমতে, হলুদ এলার্জির সমস্যা সমাধান করতে পারে। এজন্য প্রতিদিনের খাবারে এক থেকে দুই চা চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খান। এর পাশাপাশি হলুদের চা ও পান করতে পারেন। এছাড়াও হলুদের গুঁড়া পানিতে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে অতঃপর মধু দিয়ে পান করুন।

রসুন
এই ছোট্ট উপাদানে রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। গবেষণায় দেখা গেছে, পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও কাজ করে রসুন। যে কোনো ধরনের প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে এটি। নাকের পলিপাসের সমস্যায় এটি বেশ কার্যকরী এক উপাদান। রান্নায় রসুন ব্যবহারের পাশাপাশি প্রতিদিন কাঁচা খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন। রসুনের গুঁড়া হালকা গরম পানিতে মিশিয়েও প্রতিদিন পান করতে পারেন।

আদা
রসুনের মতো আদাতেও উপকারী সব উপাদান রয়েছে। ‘এসএ ২০১৩’ এর গবেষণায় জানা যায়, আদায় রয়েছে অ্যান্টিমাক্রোবিয়াল ও সংক্রমণবিরোধী উপদানসমূহ। নাকের পলিপাস সমস্যার সমাধানে রান্নায় নিয়মিত আদার গুঁড়া ব্যবহার করুন। এছাড়াও আদার চা পান করুন প্রতিদিন।

সূত্র: হেলথলাইন

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.