...

ওরাল সেক্স বা মুখমেহন সম্পর্কে ইসলাম ধর্ম কি বলে?

ওরাল
ওরাল সেক্স বা মুখমেহন সম্পর্কে ইসলাম ধর্ম কি বলে?

মুখমেহন বা ওরাল সেক্স ইসলাম ধর্মে একটা বিতর্কিত বিষয়, কোন কোন বিদ্ব্যান এটাকে সমর্থন করেছেন আবার কেউ করেন নি, মোটামুটি ভাবে বলা যায় যে বিষয়কে কোরানে ‘হারাম’ অথবা হাদিসে নিষিদ্ধ বলে চিহ্নিত করে হয়নি তা বৈধ। আর এই নীতিকে ভিত্তি করলে মুখ মেহন বা ওরাল সেক্স একটি গ্রহনযোগ্য পদ্ধতি, এবং তা যদি বৈধ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রয়োগ হয় তবে এটা অন্যান্য যৌনপ্রনালীর মতই বৈধ। ইসলাম ধর্মে শুধু দূটো ব্যাতিক্রমের কথা পরিস্কার উল্ল্যেখ আছে, ১) পায়ুগমন বা মৈথুন ২) স্ত্রীর মাসিক বা রজঃস্রাব চলাকালীন সময়ে যৌন ক্রীড়ায় মত্ত হওয়া।

ওরাল সেক্স বা মুখমেহন ধারনাটি হুদাইবিয়া চুক্তির মতন একটা ঐতিহাসিক বিষয়ের সমসাময়িক, সহি বুখারী শরীফে এক উল্ল্যেখ আছে, এতে বোঝা যায় রাসুল সাঃ’র সাহাবীরা এই সমন্ধে ওয়াকিবহাল ছিলেন।

হুদাইয়বিয়া চুক্তি চলাকালিন সময়ে আবু বকর ‘উরোয়া বিন মাসুর থাকাফি’ কে বলেছিলেন “লা’ত র ক্লিটোরিস চোষ” ( লা’ত সেই সমকালীন একজন দেবীর নাম) পাকিস্তানী একদলের মতে মুখমেহন অবৈধ নয় কিন্তু পছন্দনীয় ও নয়। আল তাবারি হ’তে উদ্ধৃতিঃ

وكان عبد مناة بن كنانة تزوج هند بنت بكر بن وائل …… أبو بكر امصص بظر اللات واللات طاغية …
تاريخ الطبري – الطبري ج 2-
“Suck the clitoris/vagina of Laat”

ডঃ কারাদাই, এক সুন্নী মতবাদে বিশ্বাসী বিদ্বান এক ফতোয়াতে ‘কিছু সর্তাধীন’ ভাবে ওরাল সেক্স বা মুখমেহনকে বৈধতা দেন। সিয়া ইমাম আল-খোয়েই বলেন, ” স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ওরাল সেক্স বা মুখমেহন অবৈধ নয় (হারাম নয়)। সালাফী মতাবলম্বী বিদ্বানদের মতে “মুখমেহন সম্পূর্ন বৈধ কারন, আল্লাহর রাসুল স্ত্রীর সাথে পূর্বরাগ (ফোরপ্লে) উতসাহিত করেছেন, বলেছেন এতে করে দুজনের মধ্যে প্রেম ভালবাসা সমঝোতা বৃদ্ধি পায়”। ডঃ হেবা কোতব, মিশরীয় টেলিভিশনে যৌন বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলেন, ” ওরাল সেক্স বা মুখমেহন বৈধ কারন, এটাকে অবৈধ ঘোষনা করে কোন দলিল নেই”।
স্ত্রীর স্তন ও যোনী লেহন/চোষনঃ

ইসলামে এর বিরোধী কিছু বলা হয়নি, সুতরাং এটা স্বামী ও স্ত্রীর ব্যাক্তিগত পছন্দ অপছন্দের উপর নির্ভর করছে যে, ওরা এটা করবে কি না। স্বামী তার স্ত্রীর স্তন দলাই মলাই করতে পারেন, তার স্তনবৃন্ত (নিপল) ও স্তন চুষতে পারেন।

মালিকি মতাবলম্বীরা যোনী লেহন অনুমোদন করেন। কারন এটা হারাম নয় আর ‘মাকরুহ’ ও নয়। ইমাম মালিকি বলেছেন ‘জিভ দিয়ে যোনী লেহন হারাম নয়’ বলা হয় যখন কেঊ প্রশ্ন করেছিলেন, ‘স্ত্রীর যোনীদেশে চুমু খাওয়া ভাবে কি’? তখন তিনি বলেছিলেন, ‘কোন সমস্য নেই’।
নারীদের যোনি চোষার বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নিন

পড়ুন  ছেলে ও মেয়ে দেহের যৌনস্পর্শকাতর অঙ্গ গুলো কি কি?

পুরুষাংগ ছোয়া বিষয়েঃ

‘যদি ছোয়া যায় তাহলে পরিস্কার থাকলে চুমুও খাওয়া যায়’। এই বিষয়ে ইমাম আল মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে কেউ কেউ এই বিষয়ে তর্ক করেছেন যে, যৌনাংকে নাপাক বলা যাবে না কারন এটা শরীরেই অন্যান্য অংগের মত একটা অংগ, এটা ছুইলে অযু ভংগ হয় না’।

যখন এক সাহাবী তাকে প্রশ্ন করেছিলেন ‘শিষ্ম স্পর্শ করলে অযু করতে হবে কি? হযরত বলেন ‘না এটা শরীরেরই একটা অংশ”। হানাফী মতানুসারী্রা দাবী করেন ‘লিংগ স্পর্শ করা লজ্জাজনক কিছু নয়” সহি হাদিস। আল মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ যুক্তি দেখান “এটা নাপাক নয়” আর এই বিষয়ে জোর দেন যে, যদি নাপাক হয় তবে তাকে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে দিতে হবে’। এটা দাবী করে যে, লিংগ শরীরের অন্যান্য অংগের মত একটা অংগ। মোহাম্মাদ বিন আল হাসান আল সাইবানী’র মতে বিদ্বানরা হযরত আবু হানিফার মতবাদকে উল্ল্যেখ করেছেন, হামাদ বিন ইব্রাহিম ও হযরত আলি বিন আবু তালেব’র উদ্ধৃতি দিয়েছেন, “এটাতে কোন ক্ষতি নাই, আমি স্পর্শ করি, না হয় এটা আমার নাকে উপর’ (এটা একটা রূপক কথা, তিনি যে মিথ্যা বলেন নি এটাকে জোর দেবার জন্যা এই কথার অবতারনা) আবু হানিফা বলেন, হামদ বিন ইব্রাহিমের উদ্ধৃতিতে ইবন মাসুদ জিজ্ঞেস করেছিলেন। ‘লিংগ স্পর্শ করার ফলে উযু করতে হবে কি’? তিনি জবাব দিলেন ‘যদি নাজায়েয হয় তবে কেটে ফেল’ তার মানে কোন ক্ষতি নেই। আবু হানিফা আরো বলেন এবার হামাদ বিন ইব্রাহিম ও সাদ আবু ওয়াক্কাস’র উদ্ধৃতি ‘দেখলাম এক ব্যাক্তি তার লিংগ ধৌত করছে, বল্লাম ‘তুমি কি করছ? এটার দরকার নেই’। তবে ইমাম হানিফা প্রশ্রাব করার পর লিংগ ধৌত করার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। তালক বিন আলি (বিন আল মুন্ধির বিন কায়েস) একবার হযরতের উদ্ধৃতিতে বন, একবার আমরা হযরতের সামনে ছিলাম এক বেদুইন এসে তাকে প্রশ্ন করলেন ‘ ও হযরত যদি কোন মানুষ তার নিজ লিংগ স্পর্শ করে তাতে কি উযু করতে হবে?’ হযরত উত্তর দিলেন ‘এটাতো শরীরেরই একটা অংশ’।
মুখ মেহন ও খতনাঃ
যদি লিংগ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না থাকে তাহলে শাররীক অসুবিধাও হতে পারে, ডাক্তারি কোন সমস্য দেখা দিতে পারে, খত্নাকৃত লিংগকে স্বাস্থ্যসম্মত গন্য করা হয়। ওরাল সেক্স বা মুখমেহনের বেলায় স্ত্রীরাও এটাকে পছন্দ করে। যৌনকেশ মুন্ডন বা সেভ করা ইসলাম ধর্মে তাগিদ করা হয়েছে।

Loading...

মুখমেহন ও পূর্বরাগ (ফোরপ্লে):
জেনে নিন ফোর প্লে কি? যৌন মিলনে ফোর প্লে পদ্ধতির গুরুত্ব

পড়ুন  অধিক সময় ধরে সহবাস করার তিনটি কার্যকরী পদ্ধতি

ওরাল সেক্স বা মুখমেহন কোন যৌন বিকৃতির কারন যেন না হয়’ বলা হয়েছে। এবং স্ত্রীদের অনুমোদন সাপেক্ষেই আর দুজনের চরম পুলকের কথা মনে রেখে করতে উপদেশ দেয়া হয়েছে। ডঃ হেবা কোতব জোর দিয়ে বলেন, “স্ত্রীদেরও যৌনক্রীড়া উপভোগ করা উচিত, মুখমেহন একটি ফোরপ্লে, আর ইসলাম ফোরপ্লেকে জোর দিয়েছে’। হাম্বালী মতাবলম্বীদের কিতাবে আছে, “স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের স্তন মাঝে, অথবা তাদের থাই (পায়ের) মধ্যে নিজ লিংগ ঘষে বীর্যস্খলন করতে পারবে, এটা বৈধ’।

পূর্বরাগ বা ফোরপ্লে পদ্ধতিঃ

উবায়দুল্লাহ বিন যুরায়রা’র একজন বৃদ্ধ প্রতিবেশী ছিল যার একজন যুবতী দাসী ছিল (সে সময় আরব দেশে দাস প্রথা ছালু ছিল, আর দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ক একটা স্বাভাবিক কাজ ছিল) বৃদ্ধা তার দাসীকে যৌন সুখ দিতে পারত না, তখন দাসী তার মালিককে তার যোনীতে আংগুল প্রবেশ করাতে বলত আর এইভাবেই সে চরম পুলক পেত, বৃদ্ধ কাজটি করত কিন্তু তার মন সায় দিত না, একদিন সে উবারদুল্লাহ কে অনুরোধ করল যে, “তুমি দয়া করে ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করবে আমার হয়ে, যে কাজটি ঠিক হচ্ছে কিনা”! উবায়দুল্লাহ ইমাম আলি আর রিজা (আঃ) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন ‘যদি সে নিজ শরীরের যে কোন অংশ ব্যাবহার করে তাহলে কোন ক্ষতি নাই, তবে নিজ শরীরের অংশ ছাড়া অন্য কিছু ব্যাবহার করা যাবে না’।
নবী সাঃ বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের স্ত্রীদের সাথে পশুর মত যৌনাচার করবে না, বরং দুজনের মধ্যে দূত রাখবে’। যখন দূত সমন্ধে ব্যাখ্যা চাওয়া হল তিনি বললেন ‘চুমু খাওয়া আর কথাবার্তা’।
যৌন তৃপ্তি সমন্ধেঃ

পবিত্র কোরান শরীফে সুরা মুমিনুনের আলোকে পাচ থেকে সাতজন বিদ্ব্যান বলেছেন, “স্বামী তার যৌন তৃপ্তির জন্য পায়ূ মৈথুন ছাড়া যে কোন পদ্ধতি ব্যাবহার করতে পারে’। আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের, “প্রিন্সিপ্যাল অফ ইসলামিক জুরিস প্রুডেন্স’ র অধ্যাপক ডঃ আলি জুম’য়া বলেন “যৌন তৃপ্তি লক্ষ্যে পতি-পত্নীদের পরপস্পের যৌনাংগ লেহন (ওরাল সেক্স বা মুখমেহন), চোষন ও চুম্বন বৈধ, এতে করে তাদের অবৈধকাজ (হারাম) কাজ থেকে বিরত রাখবে, যদি স্ত্রীর যোনীলেহনে স্ত্রীর চরম পুলক অর্জন আর স্বামীর লিংগ লেহনে স্বামীর যৌন উত্তেজনা প্রাপ্তি ও লিংগোত্থান হয়, তা বৈধ, স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের চরম পুলক লাভের জন্য সবরকম যৌন কার্য করা যাবে’।
যৌন রস (প্রি-কাম) সমন্ধে ধারনাঃ

স্ত্রীর যোনী থেকে বের হওয়া রস ‘পাক’, এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন হাদিস নেই। তেমনি অনেক বিদ্বান মানেন বীর্য ও ‘পাক’। সাফী মতাবলম্বীদের মতে পুরুষের বীর্যও পবিত্র তবে প্রি ইজাকুলেশন অর্থাত বীর্য বের হবার আগে যে পাতলা পিচ্ছিল রস বের হ্য় তা নাজায়েয; তার মানে সংগী ও সংগিনী হয়তো ওরাল সেক্স বা মুখমেহনের সময় নাজায়েয জিনিষ লেহন করেছে, ফলে ওরাল সেক্স বা মুখমেহন নাজায়েয কিন্তু অবশ্যই ‘হারাম’ নয়। কারন এটা হারাম বলে কোথাও উল্লেখিত হয়নি।

পড়ুন  কীভাবে ওরাল সেক্সকে (oral sex ) নিরাপদ করা যায়?

মুসলিম স্কলারগন মত দিয়েছেন লিংগ চোষনের ফলে যদি বীর্যস্খলন হয় তা মাকরুহ বা নাজায়েয। কিন্তু এটা নিষিদ্ধ করে কোন আয়াত নেই। শরীরের এই অংশ পায়ুর মত নোংরা নয়। যদি স্ত্রী দুজনের চরম পুলক প্রাপ্তির লক্ষ্যে ওরাল সেক্স বা মুখমেহন করে তাহলে কোন বাধা নেই। এই কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমন কোন প্রমান নেই।

নোংরামী ছাড়া যদি ওরাল সেক্স বা মুখমেহন ও যৌনাচার করা যায়, তাহলে কোন বাধা নেই। স্ত্রী ততক্ষন পর্যন্ত স্বামীর লিংগ চোষন বা চুমু খেতে পারবে যতক্ষন না ‘প্রি-কাম’ বা যৌনরস বের হ্য়। সম্ভব হলে লিংগ মুন্ড এড়িয়ে যাওয়া। আর সতর্ক স্বামী কন্ডম ব্যাবহার করতে পারেন। আর স্ত্রীর বেলায় স্বামী স্ত্রীর যোনীদেশ, ক্লিটোরিস চুষতে পারেন (হাম্বালী মতবাদীদের অনেক বইয়ে উল্লেখিত) পরস্পরের চরম পুলক প্রাপ্তি লক্ষ্যে। তবে যৌনাচার শেষে অবশ্যই ভাল করে কুলি করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। কন্ডম ব্যাবহার অথবা বীর্যস্খলনের পূর্বক্ষনে লিংগের গোড়ালী চেপে ধরে মুখমেহন কালীন বীর্যস্খলন রোধ করা যায়।

মুখমেহনের পর গোসল জরুরীঃ

ওরাল সেক্স বা মুখমেহন পূর্বরাগ অথবা যৌনাচার হিসাবে অনুমতি আছে, যদি স্বামী তার স্ত্রীর সাথে মুখ মেহনে অংশ নেয় এবং স্বামীর বীর্যপাত হয় তাহলে ইসলাম ধর্মমতে তার গোসাল করা ফরজ। আর যদি বীর্যপাত না হয় তাহলে উযু করে নিলেই হবে। শ্ত্রীর বেলায় গোসল করার দরকার নেই গায়ে মুখে অথবা জামায় লেগে থাকা বীর্য ধুয়ে ফেলতে হবে। বিদ্ব্যানরা বলেন স্ত্রীর মুখে বীর্যপাত লক্ষ্যে মুখমেহন করা মাকরুহ।

আপনার ডক্টর হেল্থ সাইটে কোন প্রকার অশ্লীল আর্টিকেল দেওয়া হয় না। মূলত যৌন জীবনকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখময় করে তোলার জন্য জানা অজানা অনেক কিছু তুলে ধরা হয়।এরপরও আপনাদের কোর প্রকার অভিযোগ থাকলে Contact Us মেনুতে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন, আমরা আপনাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব। ধণ্যবাদ আপনার ডক্টর হেল্থ সাইটের সাথে থাকার জন্য।
রেফারেন্স ও নোটসঃইমাম বোখারী শরীফ
লা’ত ইসলাম পূর্ব তাকিফ গোত্রের পূজিত একজন দেবী
সহি বুখারী, কিবার আল সারুত, আল সারুত ফিল যিহাদ, হাদিস ২৭৭০
উইকিপিডিয়া

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.