...

শাড়ি পরার সহজ উপায় শিখে নিন

উপমহাদেশের নারীরা শাড়ি পরতে ভালোবাসেন। কিন্তু অনেকেই সুন্দর ও সাবলীলভাবে শাড়ি পরতে জানেন না। আবার শরীয়াহ মতে শাড়ি পরা জানেন না দেখে অনেকেই এড়িয়ে চলেন প্রিয় শাড়ি।
অনেকে বলে থাকেন শাড়ি মুসলিম মহিলাদের পড়া উচিত নয়। তারা বলে থাকেন, বাংলাদেশের অনেক মেয়ে শাড়ি পরেন যাদের শাড়ি পড়ার ধরণটা ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী হয় না।
কিন্তু অধিকাংশ ইসলামী বিশেষজ্ঞ শাড়ি পড়াকে অগ্রহণযোগ্য বলেননি। তবে শর্ত হলো শাড়ি কোনভাবে পাতলা হতে পারবে না ও ব্লাউজটা হতে হবে ফুল হাতা এবং মাথা, বুক, পিঠ ও পেট ঢেকে রাখতে হবে।
তবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে শাড়ি পরাও এখন কঠিন কিছু নয়, শাড়ির সঙ্গে মিল রেখে ওড়না-হিজাব রক্ষা করে শালীনতা। শাড়ি পরেও ইসলামের নীতিমালা মেনে শরীর ঢেকে রাখা যায় বা শালীনভাবে শাড়ি পরা যায়।

https://youtu.be/s61g2uTSpbA

শাড়িএমন একটি পোষাক যা ঐতিহ্যগত হওয়ার পাশাপাশি আপনাকে হট লুকও দিতে পারে৷ ঠিক ভাবে শাড়ি পরলে এতে আপনার শরীরের গঠন যেমন সুন্দর হবে তেমনই আপনার চেহারের কিছু খামতিও ঢেকে যাবে৷ এছাড়াও শাড়ি পরা এক ধরণের শিল্প যেখানে একটু ভুল হওয়া মানেই আপনার গোটা লুক বরবাদ হয়ে যেতে পারে৷ শাড়ি বাঙালি নারীদের জীবনের সঙ্গে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে যতই আধুনিক হোক না কেন শাড়ির প্রতি তার আলাদা কিছু দুর্বলতা থাকবেই। আর সে কারণে নানা অনুষ্ঠানে রঙবেরঙের শাড়ি ছোট-বড় সব নারীর শরীরে শোভা পায়। শাড়ি বাঙালি নারীদেরকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। কিন্তু অনেকেই এখনও হয়ত সুন্দরভাবে শাড়ি পরার কৌশল রপ্ত করতে পারেন নি। সেক্ষেত্রে অনেক সময় হাতের কাছে পরিয়ে দেয়ার মানুষ না পেলে পছন্দের শাড়িটি আকাঙ্খিত অনুষ্ঠানে পরতে পারেন না অনেকেই। তখন শুকনো মুখে অন্য কোন ড্রেস পরে অনুষ্ঠানে গিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। আর তাই সেইসব পাঠকদের জন্য এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
এই লেখাটিতে মেয়েদের শাড়ি পরার পদ্ধতি সম্পর্কে একটু আইডিয়া দেয়ার চেষ্টা করা হলো।

পড়ুন  শাড়ি পরার সময় যে বিষয়গুলো অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত

প্রথমে নির্বাচন করতে হবে পছন্দের শাড়িটির সাথে কোন জুতা পরব। জুতা নির্বাচন করাটা প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা জুতার হিলের ওপর নির্ভর করবে শাড়ির লেন্থ কত টুকুতে পৌঁছাবে। শাড়ি পরার আগে এর সঙ্গে মানাসসই পেটিকোট পরতে হবে আর শাড়ির লেন্থের সাথে মিল রেখে পেটিকোটের লেন্থ রাখতে হবে।

কোমরের চারপাশে শাড়ি গুঁজতে হবে :

প্রথমেই শাড়ির আঁচলের অপর প্রান্ত কোমরের সাথে জড়াতে হবে। এমনভাবে করতে হবে যেন শাড়ির আঁচল বাইরের দিকে থাকে। চেষ্টা করতে হবে একবারে গুঁজে ফেলতে, তা না হলে শাড়ি পরাটা অগোছালো দেখাবে। এইভাবে পুরো কোমরে একবার শাড়ি জড়িয়ে নিতে হবে।

কুঁচি দেয়ার পালা :

দ্বিতীয়ত আরেকবার শাড়িটি নাভির বাম পাশ দিয়ে কোমরের সাথে পেঁচিয়ে নেয়া। কিন্তু নাভির ডান পাশে এসে থেমে যাবে। এবার বাম হাতের তালু দিয়ে শাড়ি ধরতে হবে এবং একটি একটি কুচি দিতে হবে। এভাবে ৫-৬টি প্লিট দিতে হবে। তারপর সব গুলো প্লিটের মাথা এক সাথে নিয়ে একবারে পেটিকোটের ভিতর গুঁজে ফেলতে হবে।

প্লিটগুলো গুছিয়ে নিন :

তৃতীয়ত সবগুলো প্লিট একসাথে করে সেফটিপিন দিয়ে পিন করলে সুন্দর ভাজ হয়ে থাকবে। অবশ্যই নাভি থেকে ২০ সেন্টিমিটার দূরে পিন লাগাতে হবে।।
আঁচল ঠিক করুন :

সবশেষে বাকি শাড়িটা বাম কাঁধের উপর ছড়িয়ে দিয়ে সুন্দর ব্রুজ কিংবা পিন লাগিয়ে দিতে হবে।

3.সব কিছুই প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে। এভাবে বেশ কয়েকবার নিয়ম অনুযায়ী শাড়ি পরতে হবে। তবেই দেখবেন ধীরে ধীরে আপনি এটাতে দক্ষ হয়ে উঠেছেন। তখন নিজের শাড়ি নিজে তো পরবেনই সাথে অন্যদেরও পরিয়ে দিতে পারবেন।

আর ও কয়েকটি নিয়ম

নিভি স্টাইলঃ

এর পর সব চেয়ে কমন হল নিভি স্টাইল। নিভি নাম কেন হল জানি না । শাড়ি পরতে গেলে পেটিকোট আর ব্লাউজ পরতে হয় সেটা তো বলার দরকার নাই । আর এই ভাবে শাড়ি পরার জন্য প্রথম ধাপে মাজার উপর একবার বাম দিক থেকে ডান দিকে শাড়ি পেচিয়ে নিতে হবে । এই পর্বে ঠিক করে নিতে হবে শাড়ির ঝুল বা নিচের প্রান্ত কত লম্বা হবে । মাটি ছুতে যত টুকু দরকার তত টুকু ঝুল রেখে মাজার দিকের শাড়ির প্রান্ত পেটিকোটের ভিতর সব পাশ ঘুরিয়ে গুজে দিতে হবে । দ্বিতীয় ধাপে পেটিকোটের ভিতর শাড়ি গুজে যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে শুরু করে ৫ ইঞ্চি মত ধরে ৭ থেকে ১০ টি কুচি বানাতে হবে। কুচি বানানো হয়ে গেলে সব গুলো কুচি একসাথে ধরে নাভির উপর পেটিকোটের ভেতর গুজে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে নিচের ঝুল যেন ঠিক থাকে। কুচি গোজা শেষ হলে শাড়ির বাকী অংশর প্রথম কয়েক ইঞ্চি আবার পেটিকোটের ভেতর গুজে বাকী অংশ বাম দিক দিয়ে পেছন দিক ঘুরিয়ে সামনে আনতে হবে । এরপর যে অংশ সামনে আসলো সেটাই আঁচল । এবার আঁচলটা আড়াআড়ি করে কাধের উপর ফেলতে হবে। আঁচলের শেষ অংশ কাধের উপর দিয়ে পেছনে থাকবে । কতটুকু আঁচলের অংশ পেছনে থাকবে সেটার পরিমাপ ও আগে থেকে ধারনা করে নিতে হবে ।
বাঙ্গালি স্টাইলঃ

পড়ুন  মন ভালো করার সহজ ৮টি উপায়

বাঙ্গালি স্টাইল টা খুবি মনহর। আমাদের দেশ সহ সারা ভারতে খুবি পপুলার। এটাকে দেবদাস স্টাইল ও বলা হয় ।আর এই ভাবে শাড়ি পরার জন্য প্রথম ধাপে কোমর বরাবর নাভির সামনে থেকে শুরু করে বামে যেয়ে একটি ৩৬০ ডিগ্রী বৃত্তাকারে কোমরের চারিদিকে ঘুরিয়ে পেটিকোটে শাড়ি গুজতে গুঁজতে আবার ডান দিক দিয়ে নাভির সামনে পযন্ত নিয়ে আসতে হবে । এই পর্যায় আবার উল্টা দিকে মানে আবার ডান দিকে গুঁজতে গুঁজতে পেছন পযন্ত আসতে হবে ।

পেছনে আসার পর শাড়ির যে অংশ টি পেছনে মাঝামাঝি পেটিকোটের ভেতর গোজার কথা সেখানে শাড়ীতে একটা গিট বানাতে হবে। এবং ওই গিট টা পেছনে মাঝামাঝি বা একটু বাম ঘেসে পেটিকোটের ভেতর গুজে দিতে হবে। এবার বাকি শাড়ি আড়াআড়ি করে বাম কাধের উপর হাতের উপর দিয়ে ঘুরিয়ে আবার ডান হাতের নিচ দিয়ে আঁচল সামনে এনে আবার বাম বা ডান কাধে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শাড়ি যেন প্যাচ না পড়ে যায় এবং নিচের প্রান্ত যেন সব সময় ফ্রি থাকে ।

পড়ুন  বোরকা ও কামিজের সাথে মানানসই সুন্দর একটি হিজাব স্টাইল শিখে নিন

গুজরাটি স্টাইল ( উল্টা আঁচল )

এটাতে প্রাথমিক সব কিছু নিভি স্টাইলের মত হবে কিন্তু কুচি গোজার পর বাম হাতের নিচ দিয়ে পেছন ঘুরিয়ে সামনে না এনে ডান কাধের উপর দিয়ে পেছন থেকে সামনে আনতে হবে। মানে বাম হাতের নিচ দিয়ে পেছন দিক দিয়ে আড়াআড়ি ডান কাধে উঠে যাবে এবং আঁচলটা পেছন দিকে না ঝুলে সামনে ঝুলবে। একদম শেয ধাপ হল ঝুলন্ত আচলের নিচের কোনা টেনে নিয়ে কোনাকুনি ভাবে ডান সাইডে শাড়ির সাথে সেফটিপিন দিয়ে আটকে দিতে হবে। আর একটা কোনা ফ্রি থাকবে।
শ্রীলঙ্কান ( ক্যান্ডিয়ান স্টাইল )

এই শাড়ি পরার স্টাইল টা ও খুবি ইউনিক। অন্য সব স্টাইলে শাড়ি পরার সময় প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শাড়ীটি কোমর থেকে পরে আঁচলটি আটকিয়ে নেয়া হয়. কিন্তু শ্রীলঙ্কান রীতিতে আঁচল প্রথমে আটকিয়ে পরে কোমরে পরা হয়। প্রথমে আঁচল এর অংশ আড়াআড়ি কুচি করে বাম কাধে ফেলতে হবে এবং সুন্দর করে সেট করে নাভি পযন্ত এনে একটা আলাদা কাপড়ের বেল্ট দিয়ে ভাজটাকে ভেতরে রেখে কাপড়ের বেল্ট টা কোমরে বাঁধতে হয়। এরপর শাড়ির যে অংশ নিচে অবশিষ্ট আছে তা ডান দিকে প্যাচ দিয়ে মাজায় পরে সামনে এনে ৪/৫ টি কুচি করা হয় ।কুচির উপরের অংশ আগে যে বেল্ট পরা হয়েছে তার ভেতর ঢুকিয়ে সামনের দিকে কুচির মাথা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আরও বাকি যে অংশ থাকে সেটুকু আবারও ডান দিকে প্যাচ দিয়ে মাজায় পরে কোনাটা মাজায় গুজে দেওয়া হয়। তামিল(পিনকসু) স্টাইল এর মত কুচির ঝুল কোমরের প্যাচ এর নিচে থাকবে শুধু কুচির মাথা দেখা যাবে।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.