...

বাচ্চা যখন খেতে চায়না

সব শিশুদের মধ্যে একটা সাধারণ সমস্যা দেখা যায়। সেটা হলো খাবার নিয়ে বায়নাক্কা করা! কোনো কোনো শিশু নিজের পছন্দের খাবার ছাড়া আর কিছুই খেতে চায় না। আবার কোনো শিশু সব কিছুতেই নাক সিঁটকায়। কেউ আছে খায় বটে, তবে পুরো খাবার না খেয়েই উঠে পড়ে। মোটকথা, বেশির ভাগ বাচ্চারাই খাবার নিয়ে ঝামেলা করে! বাচ্চাদের খাবার নিয়ে এই সমস্যাটাকে বলে ‘পিকি ইটিং’। সাধারণত ১ থেকে ১০ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে ‘পিকি ইটিং’-এর প্রবণতা দেখা যায়। তবে কোনো এক ধরনের খাবার নিয়ে সমস্যা করাটাকে ‘পিকি ইটিং’ বলা যাবে না। এই রোগ নির্ণয় একমাত্র শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরাই করতে পারেন। তাঁরা সাধারণত বাচ্চার বয়স, ওজন, কী খাবার খায়, কী পরিমাণ খাবার খায়, দিনে কতবার খাবার খেতে মানা করে – এসব লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করেন। যেসব বাচ্চারা পিকি ইটার হয়, তারা সাধারণত খুব কম খাবার খায়। বিশেষ কিছু খাবারের বাইরে আর কিছু খেতে চায় না এবং নতুন কোনো খাবার চেখেও দেখতে চায় না। তবে পিকি ইটার বাচ্চারা সাধারণত ফাস্টফুডের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি বেশি আকৃষ্ট থাকে।বাচ্চা যখন খেতে চায়না

পড়ুন  জেনে নিন কোন কোন প্রসাধনী মা হওয়ার পথে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে

বাচ্চা যখন খেতে চায়না

শিশু না খেতে চাওয়ার কারণ :
অনেক সময় শরীরের জিনঘটিত কারণে কিছু কিছু খাবারের গন্ধ বা স্বাদ বাচ্চারা সহ্য করতে পারে না। এর ফলে তারা সব ধরনের খাবার খেতে চায় না, বেছে বেছে খায়।
হজম প্রক্রিয়াতে সমস্যা থাকায় অনেক বাচ্চার খিদে কম পায় এবং খাবার ইচ্ছা থাকে না। এ কারণেও অনেক বাচ্চা খাবার নিয়ে বায়না করতে পারে।
শিশুর খাবার না খেতে চাওয়ার পেছনে অনেক সময় সাইকোলজিকাল ব্যাপার কাজ করে। যেসব বাচ্চার মা অতিরিক্ত আদর বা শাসন করে, সে বাচ্চাদের মধ্যে খাবার নিয়ে ঝামেলা করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। শিশুর সঠিক খাদ্যাভাস ও পুষ্টির জন্য মায়ের সাথে সুষ্ঠু সম্পর্ক থাকা জরুরি।

যেসব শিশুদের ঘন ঘন মুড পরিবর্তন হয়, তারা খাবার নিয়ে সমস্যা করে বেশি।
নিজের স্বাধীন মেজাজ বোঝানোর জন্য বা বজায় রাখার জন্য অনেক শিশু খাবার নিয়ে বায়না ও জেদ করতে থাকে। খাওয়া নিয়ে শিশুদের এসব বায়নার ফলে বাচ্চার খাদ্যাভাস ঠিক থাকে না। ফলে সামগ্রিকভাবে পুষ্টির ঘাটতি থেকে যায়। পুষ্টির ঘাটতি ফলে অনেক শিশুই ঠিকমতো বেড়ে ওঠে না এবং নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ দেখা দেয়। ছোটবেলায় যদি বাচ্চার পিকি ইটিংয়ের সমস্যা থাকে তাহলে পরবর্তীতে ইটিং ডিজঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। খাবার নিয়ে সমস্যার ফলে পুষ্টির অভাব ছাড়াও শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন – অতিরিক্ত আলস্য, খেলাধুলায় অনিচ্ছা, পড়াশোনায় অনীহা ইত্যাদি। কোনো একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুদের খাবার সংক্রান্ত সমস্যা দূর করা আসলে সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন শিশুর আচরণের কারণ বোঝা এবং শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি সম্পর্কে জানা। তাহলেই শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস তৈরি করা সম্ভব।

পড়ুন  এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ উপায়

এর জন্য প্রয়োজন কিছু খাদ্যবিধি মানা –
শিশুকে তার বয়স অনুযায়ী খাবার খেতে দিন।
খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়াবেন না।
মূল খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে বাচ্চাকে স্ন্যাকস জাতীয় খাবার বেশি খেতে দেবেন না।
বাচ্চাকে সব ধরনের খাবার খেতে উত্‍সাহ দিন। সাধারণ খাবারও সুন্দর করে সাজিয়ে দিলে শিশু খাবার খেতে আগ্রহী হবে।
অনেক সময় বাচ্চারা খাবার খেতে খেতে জামাকাপড় নোংরা করে ফেলে। তাকে মারবেন না বা বকবেন না। শিশুকে তার নিজের মতো করে খেতে দিন।
একটু বড় হয়ে গেলে শিশুকে একা একা খেতে দিন। ফেলে ছড়িয়ে খাবে বটে, তবে অভ্যাস গড়ে উঠবে।
খাওয়ার সময় শিশুর সামনে কোনো খেলনা বা টিভি ছেড়ে রাখবেন না। এতে খাওয়ার মনোযোগ নষ্ট হয়। শিশু যাতে শুধু খাবারেই মনোযোগ দেয়, এমন পরিবেশ তৈরি করুন।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About পূর্ণিমা তরফদার

আমি পূর্ণিমা তরফদার আপনার ডক্টরের নতুন রাইটার। আশাকরি আপনার ডক্টরের নিয়ামিত পাঠকরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করবেন ও আমার পোষ্টগুলো পড়বেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.