...

কোলেস্টেরল কমিয়ে সুস্থ থাকার উপায়

হৃদরোগের অন্যতম কারণ উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল। একারণে বিশেষজ্ঞরা সবসময় কোলেষ্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার পারামর্শ দেন। উচ্চ মাত্রার এবং খারাপ কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে নিয়ম মেনে চললে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা শরীর সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুষম খাদ্য তালিকা, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ওজন , সর্বোপরি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন খারাপ কোলেস্টেরল প্রতিরোধ করে। ঘরোয়াভাবে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার কিছু উপায় রয়েছে। জেনে নিন উপায়গুলো।কোলেস্টেরল

কোলেস্টেরল কমিয়ে সুস্থ থাকার উপায়

লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: কোলেস্টেরল কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে ঠিক কী পরিমাণ বাড়তি কোলেস্টেরল জমে আছে শরীরে। এরপরই ঠিক ওইটুকু বাড়তি কোলেস্টেরল কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাছাড়া শরীরের বিভিন্ন অবস্থা যেমন- ওবেসিটি, হৃদরোগ, বর্তমান কোলেস্টেরল মাত্রা, ধূমপানের অভ্যাস ইত্যাদির উপর নির্ভর করবে এই প্রক্রিয়া।

পরিশ্রম বাড়াতে হবে: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট বরাদ্দ রাখতে হবে ব্যায়ামের জন্য। কোলেস্টেরল কমাতে সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম শরীরচর্চা। তাছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, হজমে সাহায্য করে, ক্যালরি কমায় এবং শরীর সুস্থ রাখে। ডায়বেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ব্যায়ামের জুরি নেই।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তা ‘ওবেসিটি’র কারণে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। বাড়তি ওজন স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায় বহুগুণ। তবে ওজন কমানোর জন্য তাড়াহুড়া করা একেবারেই উচিত হবে না। এজন্য খাদ্যাভ্যাসে লাগাম টানা জরুরি। তারমানে এই নয় যে না খেয়ে থাকতে হবে। ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস ওজন কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

পড়ুন  জেনে নিন পিঠের মেদ কমাতে কী করবেন

শুঁটিজাতীয় খাবার: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুণ উপযোগী হল শুঁটিজাতীয় খাবার। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চারবার এ ধরনের খাবারগুলো রাখতে হবে তালিকায়। ওই উপাদানগুলোতে থাকা জলীয় উপাদান এবং আঁশ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

নিয়মিত হাঁটুন: সময় বের করে ব্যায়াম করা না হলে দিনে একটি সময় বরাদ্দ রাখতে হবে হাঁটার জন্য। যে কোনো ব্যায়ামের মধ্যে সবচাইতে আদর্শ হল হাঁটা। এজন্য আলাদা কোনো খরচও হয় না পাশাপাশি বেশ উপকারি। নিয়মিত ২০ থকে ৪০ মিনিট হাঁটলে প্রায় ৮.৩ শতাংশ কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব।

ডিম খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন: যাদের কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ডিম শত্রুই বটে। তবে ডিম স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তাই খাবারের তালিকায় ডিম রাখলেও খেয়াল রাখতে হবে তা যেন পরিমাণে বেশি না হয়ে যায়। তাছাড়া যেদিন ডিম খাওয়া হবে সেদিন অন্যান্য ভারি খাবার খাওয়ার পরিমাণে লাগাম টানতে হবে।

Loading...

চর্বি ছাড়া মাংস খান: কলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে অবশ্যই মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। আর খেলেও অবশ্যই চর্বিহীন মাংস বেছে নিতে হবে, তাও পরিমাণ মতো।

পড়ুন  বুকে ব্যথা হলেই হার্ট অ্যাটাক নয়

প্রচুর সবজি খান: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসের জুরি নেই। তাছাড়া খাবারের তালিকায় সবজির পরিমাণ বেশি হলে তা স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এতে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ উপাদান পাবে।

মাছ খান: সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন বার মাছ খাওয়া উচিত। এর মধ্যে স্যামন এবং টুনা মাছ সব থেকে বেশি উপযোগী। কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে এই উপাদান। তাছাড়া মাছের তেল থেকে তৈরি ক্যাপসুলেও প্রচুর ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।

অ্যালকোহল পরিহার: অ্যালকোহল গ্রহণ শরীরের জন্য অনেকভাবেই ক্ষতিকর। তাছাড়া হৃদপিণ্ডে কোলেস্টেরল জমে গেলে, সেক্ষেত্রে অ্যালকোহল গ্রহণ আরও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে অ্যালকোহল দায়ী।

হাতাশা দূর করুন: মানসিক চাপ শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে শরীরে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয় যা রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং পরে হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবারহ কমিয়ে ফেলে। তাই মানসিক চাপ দূর করার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুম: শরীরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমের বিকল্প নেই। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে রাতে পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি।

পড়ুন  fat komanor tips - ফ্যাট কমানোর টিপস

পুষ্টিকর নাস্তা: দিনের শুরুতে অনেকেই নাস্তা বাদ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দিনের শুরুতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি।

বিকালের কম চর্বিযুক্ত নাস্তা: দুপুরের খাবার খাওয়ার পর বিকালে হালকা ক্ষুধা অনুভূত হওয়া খুব স্বাভাবিক। এ সময় চর্বি ছাড়া যে কোনো হালকা খাবার খাওয়া উচিত। গাজর, শসা, তাজা ফল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন: ক্যাফেইন গ্রহণ এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধির মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে দিনে এক কাপের বেশি কফি পান করা উচিত নয়। আর সুস্থ থাকতে চাইলে ক্যাফেইন গ্রহণের পরিমান কমিয়ে আনা উচিত।

ধূমপান এড়িয়ে চলুন: দিনে একটি সিগারেট গ্রহণের ফলে তা শরীরের উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে আনে। তাই ধূমপান এড়িয়ে চলুন।

রসুন খান: রসুনে রয়েছে প্রচুর অর্গানো সালফার। রক্তের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে এই উপাদান। তবে দিনে দুই থেকে তিন কোয়ার বেশি রসুন খাওয়া উচিত নয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করুন: সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো জীবনধারা অনুসরণ করা জরুরি। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আর শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিজের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About পূর্ণিমা তরফদার

আমি পূর্ণিমা তরফদার আপনার ডক্টরের নতুন রাইটার। আশাকরি আপনার ডক্টরের নিয়ামিত পাঠকরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করবেন ও আমার পোষ্টগুলো পড়বেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.