...

ওজন বাড়ানো সহজ ঘরোয়া কিছু উপায়

যদিও অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা অনেকের একটি বিরাট সমস্যা কিন্তু আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যাদের ওজন কম। অনেক চেষ্টা করেও তাদের আদর্শ ওজনে যেতে পারছেন না। তবে একটা কথা বলে রাখা ভালো, ওজন বাড়ানোর মানেই দেহের চর্বির পরিমান বাড়ানো নয়। স্বাস্থ্যকর চর্বির পরিমান বাড়াতে হবে, পেশীকে শক্তিশালী করতে হবে। তাই ওজন বাড়ানোর মানেই যা ইচ্ছে খাওয়া যাবে তা ঠিক না। এবার এটাও মনে করা ঠিক না যে খুব কম সময়ে খুব সহজেই ওজন বাড়ানো যায়। ওজন কমাতে যেমন সময় দেয়া প্রয়োজন ঠিক তেমনি ওজন বাড়াতেও সময় দিতে হবে। তাই প্রথমেই জানতে হবে কম ওজন বা ক্ষীণকায় হওয়ার কারন কি।ওজন

ওজন বাড়ানো সহজ ঘরোয়া কিছু উপায়

দেহের কম ওজনের কারন:

– অপর্যাপ্ত খাবার, বিপাকক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটা, খাবার দেরি করে খাওয়া, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, খাবার নির্বাচনে ভুল, কাজের চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার না খাওয়া ইত্যাদির ফলে দেহে শক্তির স্বল্পতা হতে পারে।
– অপর্যাপ্ত বা ভ্রান্ত ঘুমানোর অভ্যাস, খাবারের কোনো সঠিক নিয়ম না জানা, পুষ্টির অভাব, বংশগত কারন, প্রয়োজনীয় ব্যায়াম না করা বা অতিরিক্ত করা, হজমে সমস্যা, উচ্চ বিপাক ক্রিয়া থাকলে, জীবনযাত্রায় অসংলগ্নতা বা অপুষ্টি।
– শারীরবৃত্তীয় কারন যেমন মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা।
– কিছু রোগের কারনে যেমন ক্যান্সার, যক্ষ্মা রোগ, ডায়াবেটিস, হরমোনের অসামঞ্জস্যতা, থাইরয়েড সমস্যা, HIV/Aids, হাইপো থাইপোরোইডিজম, ইটিং ডিসঅর্ডার ইত্যাদি।
– এছাড়া রক্ত শূন্যতা, হার্টের সমস্যা বা দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্যও দেহের ওজন কম থাকতে পারে।

ওজন কমাতে যে নিয়ম গুলো মেনে চলা খুবই জরুরি:

– প্রতিদিন ৩ বেলা খাবার ও ২ বেলা নাস্তা অবশ্যই খেতে হবে।
– সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার বা রাতের খাবারের কোনটাই বাদ দেয়া যাবে না এবং সেই সাথে ২ বার নাস্তা।
– ওজন বাড়াতে অবশ্যই একটু পর পর কম কম করে কিছু খেতে হবে। খাবার গুলো হতে হবে লো ফ্যাট কিন্তু হাই ক্যালরি যেমন শর্করা সমৃদ্ধ সবজি, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের বীজ ইত্যাদি।
– ওজন বাড়াতেও প্রক্রিয়াজাত করা খাবার এবং চিনি কমই খেতে হবে।

পড়ুন  আপনার ঠোঁটের অবস্থা আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে যা বলে

ওজন বাড়াতে সহায়ক কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানাচ্ছি:

আম দুধ
প্রতিদিন ১-২টি করে পাকা আম খান এবং এরপর এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ খান। আবার দিনে ১ বা ২ গ্লাস আম আর দুধ মিলিয়ে শেক বানিয়েও খেতে পারেন। মাস খানেকের মাঝেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়বে।

কিশমিশ ও শুকনো ডুমুর ফল
কিশমিশ ও শুকনো ডুমুর ফল উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন। ৬টি শুকনো ডুমুর ফল এবং ৩০ গ্রাম কিশমিশ পানি বা দুধে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সেই পানিসহ ফল গুলো দুইবারে খাবেন। ২০-৩০ দিনের মাঝে ভালো উপকার পাবেন।

ঘি আর চিনির মিশ্রণ
১ টেবিল চামচ ঘি এবং ১ টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে প্রতিবেলা খাবার আধা ঘণ্টা আগে খালি পেটে খান। এক মাস খাবার পরেই লক্ষণীয় পরিবর্তন চোখে পড়বে।

পিনাট বাটার
পিনাট বাটারে রয়েছে অনেক বেশি ক্যালরি। তাই এটাও হতে পারে ওজন বাড়ানোর চমৎকার একটি উপায়। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পিনাট বাটার রাখুন।

আলু
প্রচুর শর্করাতে ভরপুর আলু। তাই নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় নিয়মিত আলু খেলে ওজন বাড়বেই। আলু তরকারিতে দিয়ে, ভাজি করে, গ্রীল করে বাটার মিশিয়ে বা ভালো মানের তেল দিয়ে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই করে নিয়মিত খান।

তাজা ও শুকনো ফল এবং বাদাম

– দুধের সাথে খেজুর, বাদাম, বাঙ্গি, আম ইত্যাদি খাওয়ার পরিমান বাড়াতে পারে। এগুলো দুধ ছাড়া শুধু শুধুও খেতে পারেন।
– দিনে ২-৩ বার বাঙ্গি খান ৩০-৪০ দিন একটানা
– ২ টি কাঠবাদাম, ২টি খেজুর, ১টি শুকনো ডুমুর ফল দুধের মাঝে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে দুধসহ সেইগুলো একটানা ৩০-৪০ খেলে বেশ ভালো উপকার পাবেন।
– খাবার তালিকায় নিয়মিত বিভিন্ন ডেজার্ট যেমন কিশমিশ ও শুকনো ফল দেয়া গাজরের হালুয়া, ক্ষীর, সেমাই রাখুন।

পড়ুন  লেবুর শরবত কখন খাব?

ফলের জুস
প্রতিদিনের খাবার তালিকায় উচ্চ কালরিযুক্ত ফলের জুস রাখুন যেমন আম, আঙ্গুর ইত্যাদি। এসব ফলের জুস দেহের ওজন বাড়াতে স্বাস্থ্যকর ক্যালরি প্রদান করবে।

কলা ও দুধ
কলা ওজন বাড়ানোর জন্য চমৎকার একটি খাবার। প্রতিদিন ১-২টি পাকা কলা ও সাথে এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন নাস্তায়। এছাড়া প্রতিবার ভারী খাবার খাওয়ার পর একটি কলা খেতে পারেন যা হজমক্রিয়াকে উন্নত করে। এছাড়া কলা আর দুধ দিয়ে কলার শেক বানিয়েও খেতে পারেন।

দুগ্ধ জাতীয় খাবার
দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার যেমন দুধ, মিষ্টি দই, পনির ইত্যাদি খাওয়ার পরিমান বাড়িয়ে দিন। তবে অবশ্যই কোনো কিছু অতিরিক্ত মাত্রায় খাবেন না। কারন আর ফলে বদজমের, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাটার এবং ঘি নিয়মিত খান।

পানি
প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করুন। দেহের কোনো পরিবর্তন চাইলে দেহকে আর্দ্র রাখা খুবই জরুরি।

মাছ এবং মুরগিসহ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান
যেসব খাবার উচ্চ ক্যালরি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ সেসব খাবার খান। মাছ, মুরগি এগুলো প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখুন। খেতে পেরেন টুনা মাছও।

নুডুলস ও পাস্তা
আজকাল অনেকেরই নুডুলস ও পাস্তা খুব পছন্দের। সহজে রান্না করার পাশা পাশি রান্নার সময় ও বাঁচায়। তাই বেশি করে সবজি ও মুরগির মাংস দিয়ে রান্না করুন নুডুলস ও পাস্তা যা হবে উচ্চ ক্যালরির এবং সেই সাথে পুষ্টিকর খাবার। কারন নুডুলস ও পাস্তাতে রয়েছে অনেক শর্করা এবং এর সাথে সবজি ও মুরগির মাংস দিলে তা থেকে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ, পুষ্টি উপাদান এবং প্রোটিন পাওয়া যায়।

পড়ুন  ম্যালেরিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

একসাথে বেশি খাবার নয়
যাদের ওজন কম তাদের মাঝে অনেকেই আছেন বেশি খেতে পারেন না। তাই একসাথে বেশি খাবার প্রয়োজন ও নেই। তাই কম কম করে খান ২-৩ ঘণ্টা পর পর। ফল, জুস, সালাদ ইত্যাদিও খান। অনেকেই ভেবে থাকেন ওজন বাড়াতে তেল মশলার ভারী খাবার খেতে হবে। সেই ধারনা ঠিক না। চিপস, তৈলাক্ত নাস্তা, জাঙ্ক ফুড, গ্যাস ড্রিঙ্কস ও না খাওয়াই ভালো। খেতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার স্বাস্থ্যকর উপায়ে।

পর্যাপ্ত ঘুম
যদি সম্ভব হয় দুপুরে ৩০মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ঘুমান। রাতে দেরি না করে আগে ঘুমিয়ে পড়ুন। এবং দিনে কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ক্ষুধা বাড়াতে এবং শরীরকে ফিট রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করুন। অনেকেই হয়তো ভাবেন ওজন বাড়াতে হয়তো কোন ব্যায়ামের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ব্যায়াম আসলে প্রয়োজন শরীরকে ফিট রাখতে। হাঁটতে পারেন বা জগিং বা ওয়েট নিয়ে ব্যায়াম করতে পারেন। এছাড়া সাঁতার কাটতে পারেন, ইয়োগা করতে পারেন বা যেকোনো আউটডোর খেলায় অংশগ্রহন করতে পারেন।

দেহের ওজন বাড়াতে খাবার তালিকায় এমন খাবার রাখতে হবে যেগুলো উচ্চ ক্যালরিযুক্ত। কিন্তু এই বাড়তি ক্যালরিগুলো অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে নিতে হবে।যে খাবার গুলো প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ সেই খাবার গুলোই খাবার তালিকায় রাখতে হবে।এই খাবারগুলো আপনার দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে এবং ওজন বৃদ্ধির জন্য আপনার দেহকে তৈরি করবে এবং শারীরিক ব্যায়াম আপনার শরীরের সুস্থতা নিশ্চিত করবে।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About পূর্ণিমা তরফদার

আমি পূর্ণিমা তরফদার আপনার ডক্টরের নতুন রাইটার। আশাকরি আপনার ডক্টরের নিয়ামিত পাঠকরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করবেন ও আমার পোষ্টগুলো পড়বেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.