
পুরুষদের তুলনায় দেখা যায় মেয়েদের যৌন রোগ সংক্রান্ত সমস্যা গুলি বেশ কষ্টদায়ক। শুধু তাই নয়, সময় মত ট্রিটমেন্ট না নিলে যৌন রোগ গুলি বেশ জটিল আকার ধারণ করে। তাই এ বিষয়ে প্রত্যেক নারীদেরই সচেতন থাকা উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১২ থেকে ২০ বছরের মেয়েদেরকে যুবতী বলা হয়। এই সময়ের মধ্যে মেয়েরা শারীরিক এবং মানসিক পূর্ণতা লাভ করে থাকে। যুবতী মেয়েদের সাধারণ যৌন রোগ সমস্যাগুলো হলো-
ঋতু স্রাব সমস্যা
সাদা স্রাব
তলপেট ও কোমরে ব্যথা
ঋতু স্রাব সমস্যাকে নিম্নের কয়েক ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।
(০১) একবারে মাসিক না হওয়া (০২) অনিয়মিত মাসিক হওয়া (০৩) অতিরিক্ত রক্তস্রাব হওয়া
যেসব যুবতীর মাসিক নিয়মিত হয় বুঝতে হবে তাদের ডিমগুলো সময়মতো ফুটে থাকে। আমাদের দেশে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ জন মহিলার নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে মাসিক আরম্ভ হয় না। আবার অনেক যুবতীর মাঝে মাঝে অথবা কখনো কখনো একটু আধটু রক্তস্রাবের মতো হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে প্রচুর স্রাব হয়ে থাকে। এসব যুবতী ও তাদের মা, খালা এবং অন্যান্য মহিলা আত্মীয় অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় থাকেন। চিকিৎসকেরা মনে করেন এর প্রধান কারণ হলো –
অসচেতনতা এবং অজ্ঞতা
মাসিকের স্থায়িত্বকাল এবং পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে কত তা জানা নেই বলেই এই চিন্তা আরো বেশি হয়। Physiology কারণ ছাড়া অন্যান্য কারণেও প্রচুর পরিমাণ রক্তস্রাব এবং দীর্ঘস্থায়ী স্রাব হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী স্রাবের আরো কারণ হলো এর জরায়ুর মুখে মাংস বেড়ে যাওয়া, যোনিপথে প্রদাহ, ডিম্বের থলিতে টিউমার। এ ছাড়া যদি রক্তের মধ্যে কোনো রোগ থাকে যেমন হেমোফাইলিয়া, পারপুরা তাতেও বেশি স্রাব হতে পারে।
শতকরা ৪০ থেকে ৫০ জনের কোনো প্রকার চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, কেবল উপদেশের মাধ্যমেই আরোগ্য লাভ করে থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এর উপশম করা সম্ভব। কারণ যাই হোক না কেন যুবতী মেয়েদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মাসিকের সময় তলপেট ব্যথা :- শতকরা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন যুবতী মাসিক আরম্ভ হওয়ার আগে অথবা মাসিক চলাকালে তলপেট, কোমরে অথবা উরুতে ব্যথা অনুভব করে থাকে। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে যাদের মাসিক আরম্ভ হওয়ার দু-তিন দিন আগে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে তারা সাধারণত অ্যান্ডোমেট্রিওসিস, পেলভিক অ্যাডিহিসন, জরায়ুতে যক্ষ্মার জন্য হতে পারে। এই ধরনের যুবতীদের অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ এবং চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। হরমোনের তারতম্যের কারণে তলপেট ভারী অনুভব করা, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, খাদ্যে অরুচি হওয়া, মাথাব্যথা করা, খিটখিটে মেজাজ, শরীর ব্যথা, এমনকি হাত পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। এ জন্য কোনো প্রকার চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কেবল চিকিৎসকের পরামর্শ এবং উপদেশ গ্রহণের মাধ্যমেই যুবতীরা উপশম থাকতে পারে।
সাদা স্রাব :- সাদা স্রাব যুবতীদের একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এ জন্য মেয়েদের কোনো প্রকার দুশ্চিন্তার কারণ নেই, কোনো প্রকার কারণ ছাড়াই সাদা স্রাব হতে পারে এবং তবে মাসিক আরম্ভ হওয়ার দুচার দিন আগে এর পরিমাণ একটু বেশি হতে পারে। পুষ্টিহীনতা, যৌনাঙ্গে প্রদাহ, বেশি যৌন উত্তেজনা, হস্তমৈথুন, যৌন কার্যে অভ্যস্ত ইত্যাদির কারণে বেশি সাদা স্রাব হতে পারে। এমনকি জরায়ুর মুখে মাংসপিণ্ড অথবা ঘা হলে সাদা স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। কেবল নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সুফল লাভ করা যায়। কাজ না হলে দেরী না করে যথাযথ ট্রিটমেন্ট নেয়া জরুরি।
মেয়েদের (যুবতী) তলপেট ব্যথা :- বেশি সংখ্যক যুবতী মেয়ে তলপেট ও কোমর ব্যথার কথা বলে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এটা মানসিক অনুভূতি। তবে প্রচণ্ড ও অস্বাভাবিক ব্যথা হলে অবশ্যই এর কারণ নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব কারণে মারাত্মক ব্যথা হতে পারে তা হলো –
Appendicitis (অ্যাপেন্ডিসাইসাটিস)
Ovarian Cyst (ডিমের ভেতর পানি জমে যাওয়া)
হঠাৎ প্রস্রাব বন্ধ হয়ে রক্ত জমে যাওয়া
মাসিকের রাস্তা বন্ধ হয়ে রক্ত জমে যাওয়া
ডিম্বনালী অথবা ডিম্বথলির ভেতরে গর্ভ লাভ করা
Cyst যদি হঠাৎ ফেটে যায় অথবা পেঁচিয়ে যায়
জরায়ুর ভেতর টিউমার হওয়া
যোনিপথে হারপিচ নামক এক প্রকার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়া।
এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে দ্রুত পরামর্শ নিতে হবে। না হলে জীবনের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের দেশে যুবতী মেয়েদের সংখ্যা প্রায় এক-চতুর্থাংশ। যেহেতু মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যেই বেশি হয়ে থাকে তাই তাদের ক্ষেত্রে প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট সচেতন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। বাড়িতে মায়েরাও এ ক্ষেত্রে ভাল ভূমিকা পালন করতে পারেন।
যেকোন যৌন রোগ ও স্বভাবিক রোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য টিপস পেতে আপনার ডক্টর হেল্থ সাইটটির সাথে তাকুন।ধন্যবাদ
সূত্র:বাংলাসেক্সহেল্থ