...

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো সহজ করার ১০টি টিপস জেনে নিন

রূপঘরের আজকের পোষ্ট মা ও শিশুর জন্য। অনেক শিশু মায়ের বুকের দুধ ঠিকমত পান করে না।তাই বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো (Breastfeeding) সহজ করার ১০টি টিপস নিয়ে আজ অিামাদের পোষ্ট।  শিশুর যথাযথ পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধের কোন বিকল্প নেই।শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা,বুদ্ধি- বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য মায়ের দুধ হচ্ছে শিশুর (baby) শ্রেষ্ঠ খাদ্য।তাছাড়া বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মা ও শিশুর মধ্যে গড়ে উঠে এক স্বর্গীয় নিবিড় সম্পর্ক। শিশুকে দুধ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে মা তার মাতৃত্ব পুরোপুরি উপভোগ করেন।

শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য দুধ পানের সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা একান্ত জরুরি। মা শিশুকে নিয়ে কীভাবে বসেছেন, কী পদ্ধতিতে খাওয়াচ্ছেন তা সঠিক হওয়া দরকার।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি

শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য চাই মাতৃদুগ্ধ। শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য দুধ পানের (drink milk) সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা একান্ত দরকার। যেসব পদ্ধতি সমূহ অবলম্বন করা উচিত:

১. মায়ের আরামদায়ক অবস্থান
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মাকে কোন আরামদায়ক স্থানে বসা উচিত। ঘরে যদি কোনো সোফা-কুশন না থাকে, তবে কোনো চৌকি বা ইজি চেয়ারে বসেও মা দুধ শিশুকে দুধ খাওয়ানোর Breastfeeding ব্যবস্থা করতে পারেন। এছাড়া দেয়ালে বা বালিশে হেলান দিয়ে বসে অথবা শুয়ে বুকের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।যদি মা বসা অবস্থায় থাকেন, তাহলে পিঠ সোজা রাখতে হবে, কাঁধ উঁচু করে রাখা যাবে না। মায়ের আরাম নিশ্চিত হলে এক ধরনের শিথিলতা আসে যাতে দুধ নিঃসরণে সুবিধা হয়।

২. বসে দুধ খাওয়ানোর সঠিক নিয়মঃ

মা যদি বসে শিশুকে দুধ খাওয়াতে চান, তাহলে মাকে সোজা হয়ে পিঠের পেছনে একটি বালিশ দিয়ে বসলে ভালো হয় যাতে কোমর বাঁকা না হয় । হাতের নিচে একটি বালিশ দিলে হাত ঝুলে থাকবে না। যদি বালিশ পিছনে না রাখা হয়, তাহলে মা বেশিক্ষণ সঠিকভাবে বসে থাকতে পারবেন না, তাতে দুধ দেওয়া বাধা প্রাপ্ত হতে পারে। সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে শিশু সম্পূর্ণ দুধ খেতে পারে। কারণ দুধ থেকে গেলে পরবর্তী দুধ জমতে বাধা প্রাপ্ত হয়।

পড়ুন  ভবিষ্যতে গর্ভধারণের ইচ্ছা থাকলে প্রতিটি নারীর যে ৩ অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত

৩. দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রাখা:
মা শিশুকে যে পদ্ধতিতে বা ভঙ্গিতে দুধ খাওয়ান না কেন, সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশুর দৃষ্টি মায়ের মুখের দিকে থাকে। শিশুর ঘাড় যেন গুঁজে না থাকে। মায়ের দিকে শিশুকে এমনভাবে রাখতে হবে যেন স্তনের বোঁটার দিকে শিশুর মুখ থাকে। শিশুর মাথাটি (babies head) থাকতে হবে মায়ের হাতের ভাঁজের উপর। শিশুর শরীর ও মায়ের বুকের মাঝে কোনো ফাঁক যেন না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিশুর শরীর যেন মায়ের বুকের সঙ্গে মিশে থাকে । শিশু সবসময় যেন মায়ের শরীরের ঘনিষ্ঠ ছোঁয়া পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। শিশু যদি খাওয়ার সময় ঘনিষ্ঠ ছোঁয়া পায়, তাহলে মা-শিশু দু-জনেরই খুব আরাম ও আনন্দ হয়। শিশু নিজেকে খুব নিরাপদ মনে করতে থাকে।

৪. পর্যায় ক্রম অনুসরণ করা

দু’দিকের স্তন (breasts ) থেকেই শিশুকে পর্যায়ক্রমে দুধ খাওয়ানো দরকার। কোন কোন মায়েদের যে কোন একদিকের (ডান বা বাম) দুধ খাওয়াতে সুবিধা মনে হয়। তাই একদিকের দুধ বেশি খাওয়ান। অপরদিকে স্তন থেকে কম খাওয়ানোর ফলে সেটিতে দুধ তৈরি ও সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং শিশুটিও একদিকের দুধ খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে প্রতিবারে দু’দিকের স্তন থেকে দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন নাও হতে পারে। একদিকের স্তন থেকে শিশুর পেট ভরে গেলে অপরটি পরবর্তী সময়ে খাওয়াতে হয়। শিশুর পেট ভরেছে কিনা বোঝার উপায় হলো : পেট ভরে গেলে শিশু আপনা আপনি দুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়, তাছাড়া অপর বুকে দেয়ার পরেও শিশু আর খেতে চায় না।

Loading...

৫. শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের পোশাক যেমন হওয়া উচিত:
শিশুকে দুধ খাওয়ানোর in time of Breastfeeding সময় মাকে তার পোশাকের ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি রাখা উচিত। টাইট, ভারি পোশাক এড়িয়ে চলাই উচিত। এসময়টা শিশুকে বুকের দুধ খওয়ানোর বিষয়টা মাথায় রেখে মাকে হালকা, কম ঘাম হয়,আরামদায়ক কাপড় (যেমন: নাইট গাউন, বোতাম দেয়া শার্ট,সুতির গ্যাঞ্জি, নার্সিং ব্রা ইত্যাদি) পোশাক পড়া উচিত। মায়ের এমন পোশাক পড়া উচিত নয় যাতে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে কষ্ট হয়। সামনে খোলা রাখা যায় এমন জামা পরলে দুধ খাওয়াতে মায়ের সুবিধা হয় সে কথা মাথায় রেখেই জামা কাপড় পছন্দ করা উচিত।

পড়ুন  সবার সামনে বুকের দুধ খাওয়াবো না কেন?

৬ . কর্মজীবী মায়েদের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো:

কর্মজীবী মাকে সন্তান প্রসবের কিছুদিন পরেই কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে হয়। সেসব মায়েদের পক্ষে সময়মত বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো সম্ভব হয়ে উঠে না। তারা ব্রেস্ট পাম্পের সাহায্যে বুকের দুধ সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। পরবর্তীতে বাড়ির অন্য কোন সদস্য ফিডারের সাহায্যে বাচ্চাকে সেই দুধ খাওয়াতে পারেন।এই দুধ ৬-৮ ঘণ্টা ভাল থাকে আর যদি ফ্রীজে রাখেন তবে ২৪ ঘণ্টা ভাল থাকবে। যদি বিশেষ সুবিধা থাকে তবে কর্মক্ষেত্রে শিশুকে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন।

৭ . প্রচুর পানি পান করা:

বাচ্চাকে বুকের খাওয়ালে মায়ের ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য মাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ লিটার পানি পান করা (drink water) উচিত।এতে বুকের দুধের পরিমান বাড়ে এবং দুধের সরবরাহ নিয়মিত থাকে। এছাড়া ও মাকে পানি বা তরল জাতীয় জিনিস, ঝোল জাতীয় জিনিস, দুধ ইত্যাদি ও বেশি পরিমানে খেতে হবে। ফলে বাচ্চা অনায়াসে বুকে দুধ পাবে।

৮. ঘড়ির দিকে না তাকিয়ে বাচ্চার দিকে নজর দিনঃ

অসংখ্য তথ্যের ভিড়ে আজকাল অনেক মা-ই ভুল করেন। অনেকেই মনে করেন যে ঘড়ি ধরে মেপে মেপে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ালেই বাচ্চা ছোট বেলা থেকেই একটা নিয়মের মাঝে গেঁথে যাবে-যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ঘড়ির দিকে নজর না দিয়ে বাচ্চার সুবিধা-অসুবিধার প্রতি যত্নবান হন।সময় ও পরিস্থিতিই আপনার ও বাচ্চার জীবনের ছন্দ তৈরি করে দিবে।

পড়ুন  শিশুকে ঘুম পাড়ানোর ১০টি সহজ উপায়

৯।  দুধ খাওয়ানো নিয়ে ধৈর্য রাখুনঃ

শিশু যদি মায়ের দুধ খেতে অনীহা দেখায় তবে জোরাজুরি করবেন না, নিরিবিলিতে শিশুকে নিয়ে বসে বাচ্চাকে গান শুনাতে শুনাতে মাথায় হাত বুলিয়ে খাওয়াতে চেষ্টা করুন।অনেক সময় মায়ের বুকে দুধ বেশি জমে গেলে স্তন ভারী হয়ে শক্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে চেপে দুধ বের করতে হবে এবং নরম হয়ে আসলে বাচ্চাকে দুধ দিতে চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া ঠাণ্ডা বা গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে সেক নিলেও উপকার পাওয়া যাবে।

১০। পর্যাপ্ত ঘুম এবং সুষম খাবার:

মায়ের পর্যাপ্ত ঘুম এবং সুষম খাবার  food শিশুর পর্যাপ্ত বুকের দুধ পেতে সাহায্য করে। প্রচুর খাওয়ার দরকার নেই। আপনার শরীরের চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখুন এবং খিদে লাগলে খান। তবে স্বাস্থ্যকর খাবার খান। প্রচুর শাকসবজি vegetable, ফলমূল, মাছ (সামুদ্রিক মাছ নয়), এবং উপকারি চর্বিযুক্ত খাবার খান। আপনার শিশু ঘন ঘন বুকের দুধ খেলেও আপনি বাড়তি ক্যালরির চাহিদা একটা কলা বা আপেল অথবা পিনাট বাটার দিয়ে এক স্লাইস রুটি খেয়েও মেটাতে পারেন।

বুকের দুধ খাওয়ানো পোষ্টের পরিশিষ্ট:

বুকের দুধ খাওয়াতে চাইলেই যে সব মা প্রথমেই সহজে সফলভাবে তা করতে পারবেন সেটা নাও হতে পারে। এ ব্যাপারে প্রয়োজন মায়ের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস, বুকের দুধ খাওয়ানোর Breastfeeding ইচ্ছা, কখন কী করতে হবে তা জানা।

মায়ের দুধে রয়েছে শিশুর জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মা ও শিশুর মাঝে গড়ে ওঠে নিবিড় সম্পর্ক। অতএব শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে মা তার মাতৃত্ব পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেন।

রূপঘরের আজকের বাচ্চাদের জন্য মায়েদের দুধ খাওয়ানো বিষয়ে পোষ্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে নিচে রূপঘরের ফেসবুক ফ্যান পেজে লাইক দিয়ে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.