...

বক্ষ বন্ধনী প্রচলিত হলো কীভাবে ?

bra
বক্ষ বন্ধনী প্রচলিত হলো কীভাবে ?

বিবর্তনের মানসিকতায় দেখা যায় পুরুষ ও নারী অপর লিঙ্গের শারীরিক গঠনের ওপর আগ্রহবোধ করে। নারীর শারীরিক গড়নের একটি আকর্ষণীয় অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় স্তনযুগলকে স্তন নারীত্ব এবং উর্বরতার প্রতীকও!

তবে ইতিহাসগত ভাবে স্তনের সৌন্দর্য উপলব্ধির ঘটনা খুব বেশি পুরোনো নয়। প্রাচীনকালে স্তনকে সৌন্দর্য ও যৌনতার বাহক হিসেবে মোটেও গণ্য করা হতো না। এমনকি তা আড়াল করার চেষ্টাও খুব একটা করা হতো না। আদিম মানব-মানবী যখন রং দিয়ে শরীর রাঙাত তখনো বুকের চেয়ে মুখই প্রাধান্য পেত বেশি। যেকোনো প্রাচীন চিত্রে নারীর স্তন উন্মুক্তই দেখা যায়। এমনকি খ্রীষ্টিয় সময়ের প্রথম দিকে যেসব ছবি ও ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছিল, তাতেও নারীর বক্ষ প্রায় অনাবৃত। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় অবশ্য নারীস্তনে প্রসাধনী ও গন্ধদ্রব্য ব্যবহারের চল ছিল এবং স্তন ঢাকা পরতো অলংকারে। ভারতীয় উপমহাদেশেও বক্ষ বন্ধনী করার জন্য কাপড়ের প্রচলন হয় অনেক পরে। লম্বা মালায় ঢেকে থাকত স্তনযুগল।

মোটকথা, প্রাচীন কোনো সামাজিক বা সাংস্কৃতিক তথ্য নেই যার উপর ভিত্তি করে আজকের নরনারীর মনে স্তনের যৌন ও সৌন্দর্যবোধ জেগে ওঠে। মূলত ভিক্টোরীয় যুগে যখন মেয়েদের সাংস্কৃতিক অবদমন শুরু হয়, তার আগে পর্যন্ত নারীস্তনকে ঘিরে সৌন্দর্যবোধ ও যৌনতার কোনো প্রত্যক্ষ যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মূলত তখন থেকেই স্তনকে সৌন্দর্য-অঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা শুরু হয় এবং এখান থেকেই বক্ষ বন্ধনী সূত্রপাত।

বক্ষ বন্ধনী বা কাঁচুলি নারীদের এমন এক ধরনের অভ্যন্তরীণ পোশাক, যা স্তনকে আবৃত ও সঠিক স্থানে রাখতে সাহায্য করে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী বক্ষ বন্ধনী স্তন সুডৌল ও আকর্ষণীয় করতে সাহায্য করে এবং স্তনযুগলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। যদিও এ ধারণা যথেষ্ট বিতর্কিত! আধুনিক গবেষণামতে, বক্ষ বন্ধনী কোনো উপকারে আসে না, বরং তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। বক্ষ বন্ধনী একটানা ব্যবহার করলে স্তন টিউমার ও স্তন ক্যানসারের অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন।

পড়ুন  মানব দেহের ২৪ ঘন্টার কার্যক্রম সম্পর্কে জেনে নিন

উনিশ শতকের শেষের দিকে বক্ষ বন্ধনী প্রচলিত হয়। এ সময় ইউরোপের মেয়েরা কর্সেট নামে এক ধরনের অন্তর্বাস পরতেন। এটা এত আঁটসাঁট ছিল যে তাঁরা বাঁকা পর্যন্ত হতে পারতেন না! এই সময়ে ‘কৃত্রিম স্তন’- এর প্রচলন হয়। লেদার, কুইল্টেড স্যাটিন, ইন্ডিয়া রাবার ইত্যাদির তৈরি এসব স্তনকে ইচ্ছেমতো ফোলানো যেত!

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কর্সেটের নিচে লেস যোগ করা হলো। কিন্তু জনমত যেতে লাগল এর বিরুদ্ধে। নর্তকী ইসাডোরা ডানকান এবং লোই ফুলার কোমর পর্যন্ত কর্সেটকে করে ফেলেন বুকের নিচ পর্যন্ত এবং এতে ব্যবহার করেন প্রাচীন গ্রিকদের মতো আকারহীন ঝোলা কাপড়।

এরপর বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার মাদলিন ভিয়োনেঁ কর্সেট কেটেছেঁটে পরিধানকারীকে নড়াচড়া করার স্বাধীনতা দিলেন।

১৯১৩ সালে মারি ফেলপস জেকব নামের এক আমেরিকান যুবতী নতুন এক ধরনের বক্ষবন্ধনীর উদ্ভাবন করলেন। এটি নরম, ছোট এবং এমনভাবে বানানো যা দুই স্তনকে আলাদাভাবে এবং স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ঢাকল। মারি পরে তাঁর পেটেন্ট ওয়ার্নার কোম্পানিকে বিক্রি করে দেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কর্সেটের প্রচলন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল। মেয়েরা স্তন ছোট রাখে এমন বক্ষবন্ধনী ও ঢিলেঢালা সেমিজের দিকে ঝুঁকে পড়ল। মূলত এসময়েই ‘ফ্ল্যাট চেস্ট’-এর যুগ শুরু হয়।

পড়ুন  বিশ্বের ৭৩ টি ভাষায় “আমি তোমাকে ভালোবাসি ”

তিরিশের দশকে ডানলপ কোম্পানি ল্যাটেক্স রাবার আর অ্যামোনিয়া মিশিয়ে ল্যাসটেক্স নামের নরম ইলাস্টিক সুতার তৈরি করে। এই সুতা দিয়ে তৈরি করা হতো এক ধরনের অন্তর্বাস, যা মোজার পরে নেয়া যেত। পরে এর ভেতরে প্যাড ও তারের ব্যবহার শুরু হলো।

পঞ্চাশের দশকে এমনভাবে বক্ষবন্ধনী তৈরি করা শুরু হলো, যাতে স্তনকে বর্ধিত দেখায় এবং নারীত্ব বৃদ্ধি করে। এসময় জেন রাসেলের জন্য বিশেষ বক্ষ বন্ধনী ‘এয়ারোডাইনামিক ব্রা’ তৈরি করা হয়, যেটা বিখ্যাত সিনেমা ‘The Outlaw’তে দেখানো হয়েছিল।

ষাটের দশকে বক্ষবন্ধনীর বিরুদ্ধে প্রকাশিত হলো আক্রোশ! ফেমিনিস্ট আন্দোলনে পোড়ানো শুরু হলো বক্ষবন্ধনী। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে বেশি সময় লাগল না। স্তনযুগলকে সামলানোর জন্য আবার ফিরে এলো বক্ষ বন্ধনী । এবার শুরু হলো আকার-আকৃতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্যাড ও তারের ব্যবহার।

বক্ষ বন্ধনী নারীদের অত্যন্ত গোপনীয় একটি পোশাক হলেও এটা নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই! এমনকি এতে যুক্ত করা হচ্ছে প্রযুক্তিও! জাপানী অন্তর্বাস নির্মাতা কোম্পানি ট্রায়াম্প ২০০৫ সালে বাজারে এমন এক ধরনের বক্ষ বন্ধনী ছেড়েছিল, যেটা মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে গরম করে ঘর উষ্ণ রাখার কাজে ব্যবহার করা যেত। এটি শীতের দিনে ঘর গরম করার বাড়তি খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল।

২০০৬ সালে এই ট্রায়াম্প কোম্পানিই বাজারে এনেছিল ব্যাগযুক্ত বক্ষ বন্ধনী । এর কাপের ভেতর ভাঁজ করে লুকিয়ে রাখা হতো ব্যাগ, যা শপিং ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা যেত। কোম্পানির দাবি ছিল যে, এমন অন্তর্বাস পলিথিন ব্যাগ ক্রয়ে নারীদের নিরুত্‍সাহিত করবে। একই কোম্পানি বছর দুয়েক আগে তৈরি করেছিল ‘ম্যারেজ হান্টিং ব্রা’! বিয়ের পোশাকের মতো দেখতে এ বক্ষ বন্ধনীতে একটি লেড ডিসপ্লে ছিল, যেখানে ব্যবহারকারী কতদিন ধরে স্বামী খুঁজছেন তা দেখা যাবে।

পড়ুন  ফেসবুক এ কেমন ছবি দেবেন?

গত বছর অতিরিক্ত গরম থেকে নারীদের রেহাই দেবার জন্য ট্রায়াম্প তৈরি করেছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বক্ষবন্ধনী। এতে ছিল রেফ্রিজারেটর জেল প্যাড, যা বিশেষ প্রক্রিয়ায় শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দিত।
সম্প্রতি ধর্ষণ ঠেকাতে নারীদের জন্য একটি বিশেষ ধরনের বক্ষ বন্ধনী তৈরি করেছেন ভারতের তিন শিক্ষার্থী। এই অন্তর্বাস পরিহিত কেউ আক্রান্ত হলে সাথে সাথে বার্তা চলে যাবে পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের কাছে। এছাড়া এতে রয়েছে একটি শক প্রযুক্তি যা হামলাকারীকে ৩৮০০ কিলোভোল্টের শক দিতে পারবে। তাও এক বা দুবার নয়, ৮২ বার! এই অন্তর্বাসের ভেতরে থাকবে বিশেষ পলিমার যাতে পরিহিত ব্যক্তিকে শক না লাগে।

সুপ্রাচীনকালে স্তনযুগলকে আবদ্ধ করে রাখার জন্য ব্যবহার করা হতো কাপড়ের টুকরো। বর্তমানে এ কাজটি করে দেয় বক্ষ বন্ধনী । তাই পোশাকী সৌজন্যতা বা নারীসুলভ ব্যক্তিত্ব প্রকাশে বক্ষবন্ধনীর আবেদন অপরিসীম। চিকিত্‍সাবিজ্ঞানের যুক্তিতর্ক যা-ই বলুক না কেন, মেয়েরা খুব সহজে বক্ষ বন্ধনীর ব্যবহার বন্ধ করবে বলে মনে হয় না।

বিভিন্ন অজানা তথ্র ও স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস পেতে নিয়মিত আপনার ডক্টর হেল্থ সাইটের সাথে থাকবেন।ধণ্যবাদ

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.