...

আদনান সামি যেভাবে ২৩০ থেকে ৮৫ কেজি হলেন জেনে নিন তার ওজন কমানোর সেই রহস্য

আদনান সামীর ওজন কমানোর সেই রহস্য জেনে নিনঃ আদনান সামী (উর্দু: عدنان) হলেন একজন ভারতীয় গায়ক, সুরকার, পিয়ানোবাদক, অভিনেতা ও সুরকার।এছাড়াও তিনি ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয়/অর্ধ-শাস্ত্রীয় উল্লেখযোগ্য, জাজ, রক ও পপ সঙ্গীত ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। আদনান নওরীন এবং আরশাদ সামী খানের ঘরে লন্ডন, যুক্তরাজ্য জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত একজন কানাডিয়ান নাগরিক এবং বর্তমানে তিনি তার কাজের জন্য ভারতের মুম্বাই শহরে বসবাস করছেন।

আদনান সামি

দিনটি ছিল ২০০৬ সালের ৬ জুন। বেশ বড় এক টুকরো চিজ কেক, সেদ্ধ আলু আর মাখনে মোড়া বিফ স্টেক খেয়ে পণ করলেন আদনান সামি, ‘এই শেষ, এখন থেকে শুরু হলো নতুন অধ্যায়।’ সেদিন থেকেই ২৩০ কেজি ওজনের আদনান সামি যাত্রা করেন নতুন মানুষ হওয়ার পথে। ওজন কমাতে শুরু করেন স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন এবং পরিমিত খাবার। পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ভারতীয় সংগীতশিল্পী আদনান সামির অস্বাভাবিক স্থূল থেকে নিয়ন্ত্রিত দেহগড়ন পাওয়ার পথটা সহজ ছিল না। সেই পথের কিছু বাঁকের কথা জেনে নেওয়া যাক আজ।

২০০৬ সালে কিছুটা অসুস্থ বোধ করেন আদনান সামি। চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা বলেন, যদি শরীরের বাড়তি ওজন সামি না কমান তাহলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে খুব ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে তাঁর। নিজের জীবনের সেই সময়ের কথা মনে করে সামি বলেন, ‘ওই সময়টা ছিল “ডু অর ডাইয়ের” মতো। হয় আমার ওজন কমাতে হবে, কিংবা মরতে হবে।’

পড়ুন  কোমরে এই চিহ্ন কিসের প্রতীক?

২০০৬ সালের ৭ জুন থেকে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হয়ে লো কার্ব হাইপ্রোটিন (অল্প শর্করা বেশি আমিষ) ডায়েট শুরু করেন আদনান সামি। সেই সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়ামও করতে থাকেন তিনি।

সাধারণত কম সময়ে ওজন কমাতে হলে অনেকে ব্যায়াম আর ডায়েটের পাশাপাশি ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি করেন। এর মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু কম সময়ে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সামি নাকি এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেননি। তিনি শুধুই ডায়েট আর ব্যায়াম নির্ভর ছিলেন।

সে সময়ের খাদ্য তালিকা –
ডায়েট শুরুর পর থেকে আদনান সামি তাঁর সঙ্গে সব সময় একজন ডায়েটিশিয়ান রাখতেন। তাঁর পুষ্টিবিদ ও ডায়েটিশিয়ান তাঁকে ‘ইমোশনাল ইটার’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ সামির খাওয়ার পরিমাণ বেশির ভাগ সময়ই তাঁর মানসিক অবস্থার ওপর নির্ভর করত। মন ভালো কিংবা খারাপ হলে সামি অনিয়ন্ত্রিতভাবে খাওয়া শুরু করতেন। সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতেই নিজের সঙ্গে ডায়েটিশিয়ান রাখতেন সামি।

Loading...

সাদা ভাত, রুটি, চিনি ও ডাল—একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল আদনান সামির জন্য। শাকসবজি, তেল আর বাটার ছাড়া পপ কর্ন, তেল ছাড়া পোড়ানো মাছ আর ডাল সেদ্ধ ছিল তাঁর রোজকার খাবার। অ্যালকোহল কিংবা চিনি আছে এমন পানীয় তাঁর ছোঁয়াও বারণ ছিল।

পড়ুন  শুধু মুখের দিকে তাকিয়েই একটি মেয়ের সব জানা যায় কীভাবে জেনে নিন?

চিনি ছাড়া এক কাপ চা খেয়ে শুরু হতো আদনান সামির দিন। দুপুরের খাবারে তাঁর জন্য থাকত ভেজিটেবল সালাদ ও মাছ। রাতে তেল-মসলা ছাড়া সেদ্ধ ডাল খেয়ে ঘুমাতে হতো তাঁকে।
মাঝেমধ্যে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শে মাছের বদলে সেদ্ধ মুরগি খেতে পারতেন সামি। তবে তাঁর কাছে নাকি মাছটাই বেশি ভালো লাগত।

ব্যায়ামের নিয়ম কানুন –
ভোজনরসিক সামির কাছে ‘ব্যায়াম’ ছিল ছেলেবেলায় শোনা কোনো রূপকথার মতো কাল্পনিক বিষয়। প্রথমে তিনি শুধু ডায়েটেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন নিজেকে। ডায়েট-চার্ট অনুসরণ করে তিনি কমিয়েছিলেন ৪০ কেজি ওজন। কিন্তু এরপরও ওজন কমাতে ব্যায়াম করাটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল সামির জন্য।
তাই ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শে প্রশান্ত সাওয়ান্ত নামে একজন ফিটনেস ট্রেইনারের কাছে যান আদনান সামি। প্রশান্ত প্রথমে সামিকে শুধুই লম্বা সময় হাঁটার পরামর্শ দেন।
হাঁটতে হাঁটতে আদনান সামির শরীর কিছুটা ঝরঝরে হলে, ফিটনেস ট্রেইনার তাঁকে ট্রেডমিলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ট্রেডমিলে নিয়ম করে দৌড়াতে শুরু করে সামি। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে ওয়েট আর কার্ডিও ব্যায়ামও শুরু করেন তিনি। এভাবে ডায়েটের পাশাপাশি প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে ব্যায়াম করতেন আদনান সামি। সপ্তাহে এক দিন তিনি বিশ্রাম পেতেন ব্যায়াম থেকে। ব্যায়াম ও ডায়েট সুফল নিয়ে আদনান সামি বলেন, ‘ধীরে ধীরে আমি লক্ষ করলাম ব্যায়াম আর ডায়েটের ফলে খুব ঝরঝরে হয়ে গেছি আমি। নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতাম, লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম, অনেকটা পথ ক্লান্তিহীনভাবে হাঁটতেও পারতাম আমি।’

পড়ুন  কেন আমাদের জেনারেশন, বাবা-মায়েরটা বোরিং

ফলাফল –
এক সাক্ষাৎকারে আদনান সামি বলেন, ‘ডায়েট শুরুর পরের মাস থেকেই আমি দারুণ ফল পেতে শুরু করি। যদিও আমার দ্রুত ওজন কমানোর এই প্রক্রিয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু আমাকে ‘ডু অর ডাই’ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল তাই আমাকে এটা বাধ্য হয়েই করতে হয়েছে।’

১১ মাসে আদনান সামির ওজন ২৩০ কেজি থেকে ৮৫-তে নামিয়ে আনেন। তিনি জানান, গড়ে তাঁর ওজন প্রতি মাসে ১০ কেজি করে কমাতে হয়েছে। এখনো আদনান সামি ডায়েট মেনে খাওয়া-দাওয়া করেন, ব্যায়াম করেন কিন্তু শুরু সময়ের মতো অত ডায়েট নয়। এখন নিজেই বোঝেন পরিমিতিবোধ কতটা জরুরি তাঁর জন্য। সেই সঙ্গে জরুরি নিয়মিত ব্যায়ামটাও।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.