...

ওষুধ খেয়ে গর্ভপাত করানো কি ইসলামে জায়েজ?

প্রশ্নঃ ওষুধ খেয়ে গর্ভপাত করানো কি ইসলামে জায়েজ?

উত্তরঃ গর্ভপাত করানোর জন্য দুই ধরনের ওষুধ রয়েছে।

গর্ভপাত

১ম প্রকার :

গর্ভপাতকারী ঔষধ গ্রহণ গর্ভস্থ সন্তানকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যে হওয়া। এমতাবস্থায় এই ঔষধের ব্যবহার যদি গর্ভস্থ বাচ্চার মাঝে প্রাণ সঞ্চারিত হওয়ার পর হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং এতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা এটা নিষিদ্ধকৃত আত্মাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার শামিল। কুরআন ও হাদীস এবং মুসলমানদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিষিদ্ধকৃত আত্মাকে হত্যা করা হারাম।

গর্ভপাত রোধ করার জন্য করণীয় কী? জেনে নিন

আর যদি প্রাণ সঞ্চারিত হওয়ার পূর্বে গর্ভপাতের জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে ওলামায়ে কেরামের মাঝে এর বৈধতার প্রশ্নে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ জায়েয বলেছেন, কেউ কেউ নিষেধ করেছেন, আবার কেউ বলেছেন, গর্ভ ধারণের পর থেকে আরম্ভ করে যতক্ষণ পর্যন্ত গর্ভস্থ বস্তু জমাট রক্তের রূপ না নিবে অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত ৪০ দিন অতিবাহিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত গর্ভপাতের জন্য এ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয। ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ আবার এমনও বলেছেন যে, মানুষের আকৃতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত গর্ভপাতের ঔষধ ব্যবহার করতে পারবে। তবে খুব বেশি সাবধানতা অবলম্বনের উদ্দেশ্যে গর্ভপাতের জন্য ঔষধের ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই উত্তম। তবে বিশেষ প্রয়োজন ও অপারগতার সম্মুখীন হলে এ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করতে পারবে। প্রয়োজনীয়তা বলতে যেমন গর্ভধারণকারীনী এমন অসুস্থ যে গর্ভধারণে অক্ষম ইত্যাদি ইত্যাদি। এমতাবস্থায় গর্ভপাত করা জায়েয। কিন্তু গর্ভ ধারণের পর থেকে যদি এই পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, যে সময়ের মধ্যে গর্ভস্থ বাচ্চার মধ্যে মানুষের আকৃতি প্রকাশ পেয়ে থাকে তাহলে ব্যবহার করা হারাম। আল্লাহ তা’আলাই সর্বজ্ঞ।

পড়ুন  আমার পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য ৬.৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ প্রায় ৫ ইঞ্চি, এটা কী আমার সঙ্গীনীর জন্য বেদনাদায়ক হতে পারে

২য় প্রকার :

গর্ভপাতের ঔষধ গ্রহণের দ্বারা গর্ভস্থ আত্মাকে ধ্বংস করা উদ্দেশ্য নয় বরং গর্ভের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রসব আসন্ন এমন সময়ে যদি গর্ভপাতের ঔষধ ব্যবহার করতে চায় তাহলে তা জায়েয আছে। তবে শর্ত হচ্ছে এ ধরনের ঔষধ ব্যবহারের ফলে মা ও বাচ্চার যেন ক্ষতি না হয় এবং ঔষধ ব্যবহার করার কারণে যেন অপারেশন বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা দেখা না দেয়।

যদি ঔষধ ব্যবহারের কারণে অপারেশন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তাহলে এর চার অবস্থা, যা নিম্নে বর্ণিত হলো:

১) মা ও গর্ভস্থ বাচ্চা উভয়েই জীবিত। এমতাবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া অস্ত্রোপচার জায়েয নেই, যেমন প্রসব অত্যন্ত কষ্টকর এবং ঝুকিপূর্ণ হলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। মনে রাখতে হবে একজনের শরীর অপর জনের নিকট আমানত স্বরূপ। সুতরাং বৃহত্তর কোন কল্যাণ সাধনে এমন কোন হস্তক্ষেপ করবে না যা দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া বর্তমান যুগে অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনের পূর্বে মনে করা হয়ে থাকে যে, কোন রকম ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, অথচ অপারেশনের পর ক্ষতি প্রকাশ পেয়ে যায়।

গর্ভপাত কতদিনের মধ্যে হওয়া নিরাপদ? জেনে নিন

২) মা ও গর্ভস্থ বাচ্চা উভয়ই মৃত। এমতাবস্থায় বাচ্চাকে বের করার জন্য অস্ত্রোপচার করা জায়েয নয়। কেননা বের করার মধ্যে কোন লাভ নেই।

পড়ুন  বিয়ের ৩ মাস পরে সঙ্গম মুহূর্তে পুরুষাঙ্গ নেতিয়ে পড়ছে, কি করব?

৩) মা জীবিত কিন্তু গর্ভস্থ বাচ্চা মৃত। তাহলে অস্ত্রোপচার করে বের করা জায়েয আছে। তবে মায়ের কোন প্রকার ক্ষতির যেন আশঙ্কা না থাকে। কেননা বাহ্যিক অবস্থার প্রেক্ষিতে গর্ভস্থ সন্তানকে তো অপারেশন ছাড়া বের করা সম্ভব নয় এবং বাচ্চাকে যদি ভিতরে রেখে দেয়া হয় তাহলে প্রথমতঃ ভবিষ্যতে পেটে সন্তান ধারণ করা সম্ভব হবে না। দ্বিতীয়তঃ এভাবে রেখে দিলে মায়ের জন্য অত্যন্ত কষ্ট ও যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া অনেক সময় স্ত্রীকে স্বামীহীনা-বিধবা হয়ে থাকতে হয় যখন মহিলা পূর্ব স্বামীর ইদ্দতের অবস্থায় থাকে। এসব কারণে অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভস্থ মৃত বাচ্চাকে বের করা জায়েয আছে।

গর্ভপাতের পরে স্তন ঝুলে গেছে স্তন গুলি পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে কি করতে হবে? পড়ুন এখানে

৪) মা মৃত এবং গর্ভস্থ বাচ্চা জীবিত। এমতাবস্থায় গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচানোর সম্ভাবনা যদি না থাকে তাহলে অপারেশন করা জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যদি গর্ভস্থ সন্তানটি বাঁচবে এমন আশা থাকে, সেই অবস্থায় কিছু অংশ যদি বের হয়ে থাকে তাহলে মৃত মার পেট কেটে বাচ্চার বাকী অংশ বের করতে পারবে। আর যদি বাচ্চার কিছুই বের না হয় তাহলে এক্ষেত্রে আমাদের ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, গর্ভস্থ শিশুকে বের করার জন্য মায়ের পেট কাটবে না। কেননা এটা নাক-কান কেটে বিকৃত করার অন্তর্ভুক্ত। তবে সার্বিক সমাধান হচ্ছে এই যে, অপারেশন ছাড়া যদি বের করা সম্ভব না হয় তাহলে অপারেশন করতে পারবে। এ সমাধানটি ইবনে হুবাইরা গ্রহণ করেছেন। তিনি ‘ইনসাফ’ গ্রন্থের ২য় খন্ডের ৫৫৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, এক্ষেত্রে পেট কেটে বাচ্চা বের করাই উত্তম।

পড়ুন  যেসব ক্রীম,শ্যাম্পু ব্যাবহারে সন্তান না হয়ার কারন হতে পারে

বর্তমান কালে এ অবস্থায় অস্ত্রোপচার করা ‘মুসলা’ অর্থাৎ নাক-কান কেটে শাস্তি দেয়া হিসেবে পরিগণিত হবে না। কারণ প্রথমতঃ পেট কেটে পরে আবার সেলাই করে দেয়া হবে। দ্বিতীয়তঃ একটা জীবিত সন্তানের ইজ্জত একজন মৃত ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশী। তৃতীয়তঃ একটা নিষ্পাপ শিশুকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা ওয়াজিব। সুতরাং যেহেতু গর্ভস্থ বাচ্চা জীবিত এবং নিষ্পাপ মানুষ সেহেতু অপারেশনের মাধ্যমে তাকে বের করা ওয়াজিব। আল্লাহ তা’য়ালাই সর্বজ্ঞ।

সতর্কীকরণ :

উপরোল্লিখিত যে সকল অবস্থায় গর্ভপাত করা জায়েয সে সকল অবস্থায় গর্ভপাত করতে চাইলে অবশ্যই গর্ভের মালিক তথা স্বামীর অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.