...

হেপাটাইটিস বি (Hvs ag+) রোগ, এর লক্ষণ ও পরিণতি গুলো কি?

হেপাটাইটিস বি একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা যকৃত বা লিভার কে আক্রমণ করে| হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV) এর আক্রমণে এ রোগ হয়| অনেক সময় সংক্রমণের প্রথম দিকে কোন লক্ষন প্রকাশ পায় না। তবে অনেক ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, চামড়া হলুদ হওয়া, ক্লান্তি, পেট ব্যাথা, প্রস্রাব হলুদ হওয়া প্রভৃতি লক্ষন দেখা যায়। সাধারনত এই লক্ষনগুলো কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সংক্রমণের পর রোগের লক্ষন প্রকাশ পেতে ৩০ থেকে ১৮০ দিন সময় লাগতে পারে। জন্মের সময় আক্রান্ত হওয়া রোগীদের প্রায় ৯০% ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হন যেখানে ৫ বছর বয়সের পর আক্রান্ত হওয়া রোগীদের ১০% এরও কম এতে আক্রান্ত হন। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগেরই কোন প্রাথমিক লক্ষন থাকে না। যদিও এক্ষেত্রে এটি ধীরে ধীরে এটি সিরোসিস এবং যকৃতের ক্যান্সার এ রূপ নিতে পারে।

হেপাটাইটিস বি

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সাথে সবাই কমবেশি পরিচিত। এ রোগটি বর্তমান সময়ে খুব মারাত্মক আকার ধারণ করে চলেছে। সংক্ষেপে এটিকে এইচবিএস এজি (Hbs Ag) বলা হয়। এর অর্থ হলো হেপাটাইটিস-বি সারফেস এন্টিজেন যা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের দেহ থেকে নি:সৃত হয়ে থাকে। শুধুমাত্র হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হলেই রক্তের এইচবিএস এজি (Hbs Ag) পরীক্ষা পজিটিভ হয়।

পড়ুন  মাত্র দুই দিনেই ফুসফুসের সব ময়লা পরিষ্কার করে ফেলুন, যেভাবে করবেন দেখুন

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসটি প্রধানত রক্ত ও বিভিন্ন দেহাংশের মাধ্যমে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে প্রবেশ করে।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অত্যন্ত সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবেঃ

১। পরীক্ষা ছাড়া কারো রক্ত নিজের শরীরে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা।
২। অন্যের ব্যবহৃত ইনজেকশনের সুঁচ, সিরিঞ্জ, ক্ষুর, রেজার, ব্রাশ প্রভৃথি ব্যবহার না করা।
৩। হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডেন্টাল ক্লিনিক, বিউটি পার্লার, সেলুন এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।
৪। অবৈধ যেকোনো ধরনের শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা।

Loading...

হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণঃ

এই ভাইরাসটিকে নীরব ঘাতকও বলা হয়। কেননা অধিকাংশক্ষেত্রে কোনোপ্রকার শারীরিক বিচ্যুতি না ঘটিয়েই এটি দিনের পর দিন মানবদেহে বাস করতে থাকে। এটি লিভারে মৃদু ইনফেকশন চালিয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে লিভারের ক্ষতি করতে থাকে। পরবর্তী সময়ে এই ভাইরাসের কারণে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়ানক রোগও হয়ে থাকে।

হেপাটাইটিস বি হলে করনীয় কি? না জােনলে জেনে নিন

পড়ুন  মাশরুম ডায়াবেটিসসহ আরো অনেক রোগের ওষুধ

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসাঃ

এই রোগের সবচাইতে ভালো চিকিৎসা জন্মের সময় শিশুকে হেপাটাইটিস – বি প্রতিষেধক টিকা দেওয়া। তাহলে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না। এইচবিএস এজি পজেটিভ থেকে নেগেটিভ হয় দুই ভাবে। (১) চিকিৎসার মাধ্যমে ও (২) শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে। সাধারণত হেপাটাইটিস বি দ্বারা আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জন রোগীই সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দ্বারা। অবশিষ্ট ১০ জন রোগী শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দ্বারা এ থেকে মুক্ত হতে সক্ষম হন না। তাদেরকে হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। বর্তমানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের দুই ভাবে চিকিৎসা করা হয়। (১) মুখে খাওয়ার ট্যাবলেটের মাধ্যমে ও (২) ইন্টারফেরন ইনজেকশনের মাধ্যমে। চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্য হলো হেপাটাইটিস বি ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় রাখা। যাতে লিভারের ক্ষতি না করতে পারে এবং পরবর্তীতে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার বাসা বাধতে না পারে।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার ধরনের উপর ভিত্তি করে সাধারণত চিকিৎসা করা হয়। এর উপরই নির্ভর করে চিকিৎসা ধরন ও সময়। চিকিৎসা শুরু করার আগে রোগীর লিভারের কার্যকারিতা, রোগীর দেহে অন্য কোনো ভাইরাস আছে কিনা সেসব দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

পড়ুন  বুক ধড়ফড় কেন করে ও বুক ধড়ফড় করার কারণ অাপনার করণীয় জেনে নিন

পূর্বে এই রোগের চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল ছিলো। বর্তমানে আমাদের দেশে কিছু কিছু ওষুধ তৈরি হওয়ার ফলে চিকিৎসা ব্যয় অনেকটা কমে এসেছে। তবে বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের চেয়ে সরকারী হাসপাতাল ও নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে তুলনামূলক কম খরচে এই ভাইরাসের চিকিৎসা করা যায়।

অনেকে এইচবিএস এজি পজেটিভ হলেও এর টিকা নিয়ে থাকেন। এথেকে পজেটিভ কখনোই নেগেটিভ হয় না। তাই এথেকে নিজে ও পরিবারের অন্য সবাইকে রক্ষা করতে হলে শিশু জন্মের সময়ই তাকে হেপাটাইটিস বি এর প্রতিষেধক টিকা এবং যেসব মাধ্যম দ্বারা এটি একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে প্রবেশ করে সেসব বিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.