...

রোজায় ফরজ গোসল করতে হবে কীভাবে ?

রোজা রাখার পূর্বে ফরজ গোসল করার প্রয়োজন হলে অবশ্যই ফরজ গোসল করতে হবে। প্রিয় পাঠক, আপনার প্রশ্নটির বিশদ ব্যাখ্যা জানুন নিচের আলোচনাটুকু পড়ে।

ফরজ গোসল

রোজায় ফরজ গোসল করতে হবে কীভাবে

বিভিন্ন কারণে গোসল ফরজ হয়। আর ফরজ গোসল ইসলামি জীব বিধানের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ হলো কারো ওপর গোসল ফরজ হলে সঠিক-শুদ্ধ পদ্ধতিতে গোসল আদঅয না করা পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি নাপাক থাকবেন। আর এই নাপাকি অবস্থায় তার কোনো প্রকারের কোনো ইবাদত-বন্দেগি করার অনুমতি নেই। সুতরাং সঠিক-শুদ্ধভাবে আমল করার জন্য শারীরীকভাবে পবিত্র থাকার উদ্দেশ্য গোসল ফরজ হওয়ার কারণ, ফরজ গোসলের ফরজ, সুন্নাত ও মুস্তাহাব আমরসহ ফরজ গোসল করার পদ্ধতি সবার জানা থাকা একান্ত জরুরি।

 

গোসল ফরজ হওয়ার কারণসমূহ হলো-
১. জাগ্রত বা নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত হওয়া। কিন্তু নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার অনুভব না হলেও গোসল করা ফরজ। কেননা নিদ্রা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে মানুষ অনেক সময় তা বুঝতে পারে না। মোট কথা গোসল ফরজ হওয়ার জন্য বীর্যপাত শর্ত তাতে উত্তেজনা থাকুক আর না থাকুক সেটা কোনো বিষয় নয়।

২. স্ত্রী সহবাস করার দ্বারা গোসল ফরজ হয়। সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গের সর্বনিম্ন আগাটুকু (সুপারি পরিমাণ আংশ) প্রবেশ করালেই গোসল ফরজ হয়ে যাবে । কেননা এ ব্যাপারে নবি [সা.] বলেন, পানি নির্গত হলেই পানি ঢালতে হবে। [মুসলিম, অধ্যায় : হায়েজ, অনুচ্ছেদ : পানি নির্গত হলেই পানি ঢালা। হা/ ৩৪৩।] অর্থাৎ বীর্যের পানি নির্গত হলেই গোসল করতে হবে।

নবি [সা.] আরো বলেন, স্ত্রীর চার শাখার (দুই হাত দুই পায়ের) মাঝে বসে, তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হলেই গোসল ফরজ হবে। [বুখারি, অধ্যায় : গোসল, অনুচ্ছেদ : উভয় লিঙ্গ মিলিত হলে করণীয়, হা/ ২৯১। মুসলিম, অধ্যায় : হায়েয, অনুচ্ছেদ : পানি ঢালার সম্পর্ক পানি নির্গত হওয়ার সাথে। হা/ ৩৪৮।] এখানে বীর্যপাতের কোনো কথা বলা হয়নি। এর দ্বারা বুঝা যায় এই এইভাবে স্ত্রী সহবারে যদিও বীর্যপাত না হয় তবুও গোসল ফরজ হবে। এ বিষয়টি অনেক মানুষের জানা নেই। অনেক লোক স্ত্রী সহবাসে বীর্যপাত না করলে অজ্ঞতা বশত সপ্তাহ মাস কাটিয়ে দেয় গোসল করে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন ভুল থেকে বাচার নেক তাওফিক দান করুন। আমিন। এটি একটি মারাত্মক ধরণের ভুল। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শরীয়তের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরজ। অতএব উল্লেখিত হাদিসের ভিত্তিতে সহবাস করে বীর্যপাত না হলেও গোসল করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর ফরজ।

পড়ুন  প্রত্যেকবার সেক্স করার পর প্রমিজ করি অার করবোনা কিন্তু সুযোগ পেলে .....

৩. নারীদের ঋতু (হায়েজ-মিনস) বা নেফাস (সন্তান প্রসোবত্তোর স্রাব) হওয়া। ঋতুবতী নারীর স্রাব বন্ধ হলে গোসলের মাধ্যমে তাকে পবিত্র হতে হবে। এই গোসলও ফরজ গোসলের অন্তর্ভূক্ত। কেননা আল্লাহ বলেন অর্থাৎ তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েজ সম্পর্কে । বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে তখন গমন করো তাদের কাছে। যেভাবে আল্লাহ্ আমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)

নবি [সা.] ইস্তেহাজা বিশিষ্ট নারীকে নির্দেশ দিয়েছেন, ঋতুর নির্দিষ্ট দিনসমূহ সে বিরত থাকবে তারপর গোসল করবে। নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার ক্ষেত্রেও অনুরূপ বিধান। তার উপরও গোসল করা ফরজ। হায়েয ও নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য ফরজ গোসল করার পদ্ধতি নাপাকি থেকে গোসল করার পদ্ধতির অনুরূপ। তবে কোনো ইসলামি পণ্ডিতরা ঋতুবতীর গোসলের সময় বরই পাতা ব্যবহার করা মুস্তাহাব বলেছেন। কেননা এতে অধিক পরিস্কার ও পবিত্র হওয়া যায়। বরই পাতার বদলে সাবান বা শ্যম্পু ব্যবহার করলেও উক্ত উদ্দেশ্য হাসিল হয়।

Loading...
পড়ুন  ইয়াবা কি? ইয়াবা কি আসলেই যৌন বর্ধক ?

৪. আবার কেউ কেউ মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ফরজ বলে উল্লেখ করেছেন। এই কথার দলীল হচ্ছে, নবি [সা.] -এর কন্যা যয়নবকে যারা গোসল দিচ্ছিলেন, তিনি তাদেরকে বললেন, যয়নবকে তিনবার গোসল করাও, অথবা পাঁচবার অথবা সাতবার অথবা এর চাইতে অধিকবার- যদি তোমরা তা মনে কর। [বুখারি, অধ্যায় : জানাযা, অনুচ্ছেদ : মৃতকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দেয়া ও অজু করানো। হা/১২৫৩। মুসলিম, অধ্যায় : জানাযা, অনুচ্ছেদ : মৃতকে গোসল দেয়া, হা/৯৩৯।] তাছাড়া বিদায় হজে আরাফা দিবসে জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় বাহন থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু বরণ করলে নবি [সা.] বলেন, তোমরা তাকে পানি ও বরই পাতা দ্বারা গোসল দাও এবং পরিহিত দু’টি কাপড়েই কাফন পরাও। [বুখারি, অধ্যায় : জানাযা, অনুচ্ছেদ : ইহরামকারী মৃত ব্যক্তিকে কিভাবে কাফন পরাতে হয়। হা/ ১২৬৭। মুসলিম, অধ্যায় : হজ, অনুচ্ছেদ : ইহরামকারী মৃত্যুবরণ করলে কি করতে হবে। হা/১২০৬।]

মৃত্যু ব্যক্তিকে গোসল করানো ফরজ। কিন্তু এটা জীবিতের সাথে সম্পর্কিত। কেননা মৃত্যু বরণ করার কারণে উক্ত ব্যক্তির উপর শরীয়তের বাধ্যবাধকতা শেষ হয়ে গেছে। তাই জীবিতদের উপর ফরজ হচ্ছে, তাকে গোসল করিয়ে দাফন করা। কেননা নবি [সা.] এ সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন।

ফরজ গোসলের ফরজসমূহ হলো-
গোসলের ফরজ মোট তিনটি। এই তিনটির কোনো একটি বাদ পরলে ফরজ গোসল আদায় হবে না। তাই ফরজ গোসলের সময় এই তিনটি কাজ খুব সর্তকতার সাথে আদায় করা উচিত।
১. গড়গড়া কুলি করা।
২. নাকে পানি দেওয়া।
৩. এরপর সারা দেহে পানি ঢালা ও ভালোভাবে গোসল করা।

ফরজ গোসলের সুন্নাত আমলগুলো হলো-
১. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গোসল করার নিয়ত করা।
২. ফরজ কাজগুলোর মাঝে ক্রম বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
৩. প্রথমে ওজু করা।
৪. দুই হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়া।
৫. শরীরে কোনো নাপাকি থাকলে তা দুর করা।
৬. মেছওয়াক করা।
৭. সারা দেহে তিন বার পানি ঢালা।

পড়ুন  বাচ্চা নষ্ট করা আইনানুসারে বাচ্চা খুন করা - ডাঃ তারাকী হাসান মেহেদী

ফরজ গোসলের মুস্তাহাবসমূহ হলো-
১. উচু স্থানে বসে গোসল করা যাতে পনি গড়িয়ে যায় ও গায়ে ছিটা না লাগে।
২. পানির অপচয় না করা।
৩. বসে বসে গোসল করা।
৪. লোক সমাগমের স্থানে গোসল না করা।
৫. পাক জায়গায় গোসল করা।
৬. ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা।

ফরজ গোসলের সঠিক-শুদ্ধ নিয়ম-পদ্ধতি
১. গোসলের জন্য মনে মনে নিয়ত করতে হবে। বাড়তি মুখে কোন আরবি শব্দ উচ্চারণ করে নিয়ত করাতেই হবে এমনটা ভাবা বা জরুরি মনে করা বিদআত।
২. প্রথমে দুই হাতে কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধুয়ে নেওয়া।
৩. এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বামহাত দিয়ে লজ্জাস্থান এবং তার আশপাশ ভালো করে ধৌত করা এবং শরীরের অন্য কোন জায়গায় বীর্য বা নাপাকি লেগে থাকলে সেটাও ধুয়ে পরিস্কার করা।
৪. এবার বাম হাতকে ভালো করে ধুয়ে ফেলা।
৫. এরপর অজু করতে হবে তবে দুই পা ধোয়া যাবে না।
৬. ওজু শেষে মাথায় তিনবার পানি ঢালতে হবে।
৭. এরপর সমস্ত শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে ৩ বার ডানে তারপরে ৩ বার বামে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুতে হবে, যেন শরীরের কোন অংশই বা কোন লোমও শুকনো না থাকে। নাভি, বগল ও অন্যান্য কুঁচকানো জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে।
৮. সবার শেষে একটু অন্য জায়গায় সরে গিয়ে দুই পা ৩ বার ভালোভাবে ধুতে হবে।

ফরজ গোসল  করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে
১. ফরজ গোসলে পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল ভালোভাবে ভিজতে হবে।
২. এই নিয়মে গোসলের পর নতুন করে আর ওজুর দরকার নাই, যদি ওজু না ভাঙ্গে।

মূল : মুফতি শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন (রহ.)
ভাষান্তর : মাওলানা মিরাজ রহমান

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.