...

ত্বক ও চুলের ম্যাজিক ডায়েট!

এক মাথা চুল আর ঝকঝকে স্কিন! ওএমজি, সে তো স্বপ্ন পুরো! আরে বাছা, স্বপ্নও তো পূরণ হয় নাকি? তার জন্য শুধু খেতে হবে। ইয়েস, আর সেই জন্যই ত্বক আর চুল ভাল রাখার ম্যাজিক ডায়েট নিয়ে হাজির ১৯ ২০
যা-ইচ্ছে তাই খাও, তবে যাচ্ছেতাই খেয়ো না। খেতে ভাল লাগে বলেই রোজ যদি চাউমিন দিয়ে ব্রেকফাস্ট আর বিরিয়ানি, রোল, বার্গার দিয়ে ডিনার সারো, তা হলে ত্বক আর চুল দু’য়েরই বারোটা বাজবে। জানতে হবে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতে আর চুলের গোছ আর গ্রোথ বাড়াতে কোন খাবারগুলো বেশি ভাল। মুখে বা চুলে ফ্রুট প্যাক মাখার চেয়ে, দু’চারটে ফল পেটে গেলে বেশি কাজে দেয়। খাবার শরীরের ভিতর থেকে পুষ্টি যোগায়। কসমেটিক বা ফেসিয়ালের এফেক্ট বড়জোর কয়েকঘণ্টা থেকে কয়েকদিন থাকে। কিন্তু খাবারের এফেক্ট শরীরের উপর অনেক বছর থাকে। তাই লং টার্মে ভাল ফল পেতে অবশ্যই রোজকার ডায়েটে নজর দিতে হবে।
ত্বকের খাবার

ত্বক ও চুলের যত্ন

ত্বক ও চুলের ম্যাজিক ডায়েট!

গাজর
খুব সহজেই এই খাবারটা পাওয়া যায়। রোজ সকালে একটা গাজর লেবুর রস আর নুন দিয়ে খেয়ে ফেলতে পারো। কাঁচা খেতে ইচ্ছে না করলে একটু সেদ্ধ করে নিতে পারো। স্যালাডে বা স্যান্ডউইচে গাজরটা বেশি করে ভরে নাও। গাজরে থাকে বিটা ক্যারোটিন যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে। ফলে ত্বকের কোষকে ভিতর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং কড়া রোদ থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়।

 

ফল ও সবজি
পেয়ারা, আনারস, পেঁপে, মুসাম্বি ইত্যাদি ফল টিফিনবক্স ভরে নিয়ে নাও। এই ফলগুলোতে রয়েছে ভিটামিন সি, এতেও রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ত্বককে ডিহাইড্রেটেড রাখে। ত্বক টাইট রাখে, ফলে চামড়া টানটান ও মসৃণ থাকে। কখনও ফল খাওয়া না হলে ভিটামিন সি-এর জন্য টমেটো, পালং শাক, কাঁচা লংকা খেতে পার কচকচ করে। তবে ফল বা সবজির যে-কোনও একটা রোজকার ডায়েটে মাস্ট।

ঘরোয়া হেয়ার মাস্ক ড্যামেজ ফ্রি, হেলদি , স্মুথ ও সাইনি চুলের জন্য

টক দই
টক দই অল্প নুন আর মিষ্টি দিয়ে বা টুকরো ফলের সঙ্গে খাওয়াই যায়। রোজ এক বাটি টক দই ক্লিনার হিসেবে কাজ করে। ভিতর থেকে বডি পরিষ্কার করে, লিভার ভাল রাখে এবং বাইরের গরম আবহাওয়ায় ত্বককে ঠান্ডা রাখে। ফলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে, অনেক ফ্রেশ দেখায়। এবার তুমিই ভেবে দ্যাখো খাবে কিনা!

পড়ুন  শীতে ত্বকের যত্ন নেয়ার কিছু সহজ উপায় জেনে নিন

চুলের যত্ন

সিল্কি চুলের গোপন রহস্য কি? জেনে নিন

কুমড়োর বীজ
কুমড়ো খেতে ভাল না লাগলেও ক্ষতি নেই, কুমড়োর বীজ তো খাওয়াই যায়। কুমড়োর বীজে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে। জিঙ্ক ত্বকের কোলাজেন ধরে রাখে, সেল মেমব্রেন রক্ষা করে এবং ত্বককে রেজুভিনেট করে। ফলে বয়সের ছাপ ত্বকে পড়তে তো দেয়ই না বরং ত্বকের গ্লো বাড়ে। কুমড়োর বীজ রোদে শুকিয়ে এমনিই খাওয়া যায়, বিকেলে টুকটাক মুখ চালানোর অপশন হিসেবে মন্দ নয়। টক দইতে মিশিয়েও খেতে পার।

 

মাছ
প্রতিদিন খাবার যে-কোনওরকমের একটা মাছ রাখতেই হবে। মাছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাট থাকে, এটা ত্বকের কোষের গঠন ঠিক করে, সানবার্ন থেকে ত্বককে রক্ষা করে। তা ছাড়া মাছের ফ্যাট ত্বকের জন্য হেলদি ফ্যাট, এই ফ্যাট ত্বকের জেল্লা বাড়ায় আর জল ও খাবারের পুষ্টি ত্বকের ভিতরে গিয়ে টক্সিন বের করে দেয়। তবে, বেশি ভাজা মাছে এই ফ্যাটের গুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেক বা গ্রিল করার মাছ অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। টানা একমাস মাছ খেয়ে দ্যাখো, ত্বক কেমন জ্লজল করবে!

 

টুকরো টিপ্স
খাবার খাওয়ার সময় ভাববে, এই তো ভিটামিন সি খাচ্ছি, এবার ওমেগা ফ্যাট, এরকম ভেবে-ভেবে যদি খেতে পার, দেখবে হেব্বি কাজে দেবে। একটা কোনও কমপোনেন্ট অর্থাত্ ফ্যাট, প্রোটিন বা ভিটামিন সি বাদ পড়লেই তোমার নিজেরই সারাদিন সেটা বিরক্ত করবে। একটু পাগলাটে কনসেপ্ট বটে, কিন্তু তুখোর কাজে দেয়।
প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। অন্ততপক্ষে তিন-চার লিটার জল রোজ মাস্ট। জল শরীরের টক্সিন বের করে দেয়।
লাঞ্চ ও ডিনারের পরে কখনও চা বা কফি পান করবে না। এটা শরীরের পি এইচ ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় এবং ভিটামিন সি-এর কার্যকারিতাও নষ্ট করে দেয়।
ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার রোজ খাবে। মনে রাখবে ভিটামিন সি ত্বকের মেলানিন হালকা করে, ফলে ত্বকের শাইন বাড়ে।

পাকা চুলের যন্ত্রণা দূর করুন কলপ ছাড়াই

সবজি ওভারকুক করে খাবে না।
ফল কাঁচা ও খোসাসমেত খাওয়ার চেষ্টা করবে।
বাইরের তেলে ভাজা খাবার খাওয়া কমাতে হবে। সপ্তাহে এক-দু’বার খাওয়া যেতে পারে বাইরে। কিন্তু রোজ নয়।

Loading...

 

চুলের খাবার
রুক্ষ চুল? পড়ে যাচ্ছে? চুল বাড়ছে না? উফ! ঠিক মনে হচ্ছে বাজারচলতি হেয়ার প্রডাক্টের বিজ্ঞাপন! কিন্তু সত্যিই তো আমাদের চুলের অবস্থা এরকমই ভয়ংকর। কিন্তু তার জন্য আমরা কী করি? সেই বাজারচলতি একগাদা তেল আর শ্যাম্পু রোজ ব্যবহার করে যাচ্ছি। না হলে বিউটি পার্লারে হেয়ার স্পা, হেয়ার প্যাক। কিন্তু তাতেই কি চুলের পুষ্টি যথেষ্ট পরিমাণে হয়? সোজা উত্তর, হয় না। গাছ যেমন শিকড় দিয়ে মাটি থেকে জল শুষে তাদের খাবার পায়, চুলও তেমন চুলের গোড়া থেকে তার খাবার পায়। আমরা যদি ভাল খাই, তবেই আমাদের চুল সেই পুষ্টি পাবে। চুলে হেয়ার প্যাক লাগানোর সঙ্গে-সঙ্গে আমাদের ডায়েট প্যাকও ভাল করতে হবে। চুলের গ্রোথের জন্য প্রোটিন, ফ্যাট, জিঙ্ক, ভিটামিন সি ইত্যাদি খুব দরকার। সুতরাং এমন খাবার খেতে হবে, যাতে এই উপাদান থাকে। চলো দেখে নিই, রোজ কী-কী খাব।

পড়ুন  সময়ের আগেই বুড়িয়ে যাচ্ছেন, HIV নয়তো?

 

প্রোটিন
চুলের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কমপোনেন্ট হচ্ছে প্রোটিন। তাই আমাদের রোজকার খাবারে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখতেই হবে। যেমন মাছ, মাংস, ডিম, সয়াবিন, বাদাম ইত্যাদি রোজ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খাবে। এই খাবারগুলো চুলের কেরাটিন গঠনেও সাহায্য করে। ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয়, চুল পড়া কমে যায়।

 

ডাল
মসুর, রাজমা, ছোলা ইত্যাদি ডালও রোজ খেতেই হবে বস। কারণ ডালও কিন্তু প্রোটিনের খুব ভাল সোর্স। ডালের প্রোটিন খুব সহজেই শরীরে অ্যাবজ়র্ব হয় এবং এই প্রোটিন কেরাটিন গঠনে সাহায্য করে। চুলের গঠনে কেরাটিনই আসল। এ ছাড়া ডালে আয়রনও থাকে যা চুলের গোড়ায় গিয়ে পুষ্টি যোগায় ও চুলের গোড়া মজবুত করে।

 

ফ্যাট
সবরকম ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য ভাল নয়, যেমন স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড, হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাট একদমই খাওয়া উচিত নয়, এই ফ্যাট আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। বরং ওমেগা থ্রি ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য ভাল। এই ফ্যাট আমাদের শরীরে ভিটামিন ও খনিজের কার্যকারিতা বাড়ায়। তাই ওমেগা থ্রি ফ্যাটের জন্য মাছের তেল খেতে পার বা বি-কমপ্লেক্স ট্যাবলেটও রোজ একটা করে খেতে পার। এটা হেয়ার ফলিক্লের গ্রোথ বাড়ায় এবং চুলের জেল্লাও বজায় রাখে। তবে যে-কোনও ক্যাপসুল বা মেডিসিন খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিও।

চুলের যত্নে কয়েকটি ঘরোয়া টিপস অবশ্যই দেখবেন

আয়রন ও জিঙ্ক
চুলের গঠনে আয়রন আর জিঙ্কও খুব দরকারি উপাদান। আয়রন আমাদের রক্তে ও কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফলে শরীরের রক্তসঞ্চালন ঠিকঠাক থাকে। তাই রোজ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার অর্থাত্ ডাল, রাজমা, ছোলা, মাংস ইত্যাদি খেতে হবে। জিঙ্ক টিসু রিপেয়ার করে এবং অয়েল গ্ল্যান্ড থেকে তেল নিসৃত করতে সাহায্য করে। এই তেল আমাদের চুলের রুক্ষতা দূর করে। কুমড়ো বা কুমড়োর বীজে প্রচুর জিঙ্ক থাকে।

পড়ুন  জেনে নি কিভাবে ডিমের খোসা এর এই ৭টি ভিন্নধর্মী ব্যবহার

 

ফল ও সবজি
প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ফলের রস খেতে হবে, বিশেষ করে সিট্রাস ফল (মুসাম্বি, কমলালেবু), পালং শাক, লংকা ইত্যাদি। কারণ এইসব ফল ও সবজিতে ভিটামিন সি থাকে, যা কোলাজেন তৈরি করতে পারে এবং শরীরে আয়রন অ্যাবজ়র্ব করতেও সাহায্য করে। তাই ভিটামিন সি আছে, এমন খাবার রোজ খাবে।

 

ডিম
ডিম খাওয়ার কথা আলাদা করে নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। ডিম তো আমাদের সক্কলের প্রিয়। ব্যস! রোজ একটা ডিম খেয়ে নাও এবার! কারণ ডিমে আছে বায়োটিন। এই বায়োটিন চুলের ফাটা ডগা রিপেয়ার করে, গোড়ায় গিয়ে চুলের পুষ্টি যোগায়। জেনে নিন শীতকালে চুলের যত্নে দারুণ টিপস।

 

বাদাম

বাদামের সরবত খাবে নাকি হে! খেতেই পার, চুল হবে ঝলমলে। হুম! কাজু, পেস্তা, আমন্ড বা আখরোট যে-কোনও বাদামই রাখতে পার তোমার রোজকার ডায়েটে। বাদাম জিঙ্কের খুব ভাল সোর্স। তাই বাদাম খেলে চুল পড়া কমে আর বাদামের ফ্যাট চুলের জেল্লা বাড়ায়।

চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করবেন যে পাঁচটি উপায়ে

টুকরো টিপ্স
খাওয়াদাওয়া তো হল পেট পুড়ে। কিন্তু তারপর যদি চুলে চালাও আয়রন আর কালার স্প্রে, তা হলে বস আমি আর রক্ষা করতে পারলুম না। কালার, স্ট্রেটনিং ইত্যাদি যত পারবে কম করবে। একেবারে বাদ দিতে পারলে সবচেয়ে ভাল।
হেয়ার স্পা করার আগে দেখে নাও আদৌ তোমার চুলে হেয়ার স্পা করার দরকার আছে কিনা। রুক্ষ চুলে হেয়ার স্পা ভাল কাজে দেয়। কিন্তু অয়েলি হেয়ারে যদি হেয়ার স্পা করো, তা হলে আরও চুল পড়বে।
রাস্তায় বেরনোর আগে চুল বড় হলে বেঁধে বেরবে। না হলে ধুলোময়লা, রোদে চুল খুব নষ্ট হয়।
সপসপে ভিজে চুল খুলে কখনওই রাস্তায় বেরবে না। ভিজে চুলে ধুলোময়লা বেশি তাড়াতাড়ি জড়ো হয়।
দ্যাখো, বারবার কিন্তু বলে দিলুম ত্বক আর চুলের ভাল খাবার কী-কী। এর পরও যদি ওইসব হাবিজাবি চর্ব্যচোষ্য খেয়ে ঘেউ করে ঢেকুর তুলে আফসোস করো, তা হলে কিন্তু আমি নেই। নিজের চুলের মুঠি ধরে এবার একটু ঝাঁকিয়ে নাও। দেখবে সুবুদ্ধিগুলো তাড়াতাড়ি মাথায় ঢুকে যাবে।

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.