...

স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা এবং গর্ভাবস্থায় কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা

“আমি তো প্রেগন্যান্ট! ব্যায়াম করতে যাবো কোন দুঃখে!””আরে ব্যায়াম করার জন্য তো সারাজীবনই পড়ে আছে!

বোকা নাকি প্রেগন্যান্সিতে ব্যায়াম করার কথা ভাবছো!”

গর্ভাবস্থা নারীর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর এবং সেইসাথে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং একটি অধ্যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে অনেকেই এটাকে অসুস্থতার মতো ট্রীট করেন। আর কমবেশি সবাই-ই গর্ভবতী নারীটিকে সবজান্তা শমসেরের মত রাজ্যের উপদেশ দিতে থাকেন। এর ফলে অনেক সময়ই দেখা যায় গর্ভবতী নারীটি নিজেকে রোগী মনে করতে থাকে, এবং অনেক ক্ষেত্রে কোন কম্পলিকেশন না থাকা সত্ত্বেও সারাদিন বিছানায় শুয়ে বসে থাকে। ফলে বাড়তি ওজন তো যোগ হয়ই, সেই সাথে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উচ্চ রক্তচাপ (high b.p.), রক্তশূন্যতা (Anaemia), হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের রোগ, গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ (spotting), ফুল নিচের দিকে থাকা (Placenta Previa) থাকলে ব্যায়াম নিষেধ। আগে গর্ভপাত হওয়ার ইতিহাস থাকলেও ঝুঁকি নেবেন না। ডাইভিং, জিমন্যাস্টিক, হকি, টেনিস, কারাতে, সাইক্লিং, হাইকিং জাতীয় পরিশ্রমপূর্ণ কাজ গর্ভাবস্থায় করা যাবে না।

গর্ভাবস্থায় দু’হাতে দুটো ভারী ডাম্বেল তুলে কিন্তু এক্সারসাইজ করতে বলছি না। কিন্তু যদি আপনার প্রেগন্যান্সিতে কোন কম্পলিকেশন না থাকে, এবং আপনার ডাক্তার আপনাকে অনুমতি দিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই গর্ভাবস্থায় করা হালকা ব্যায়াম আপনার শরীর আর মন দুটোকেই ভালো রাখবে।

পড়ুন  কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে চা ও কফি কি সত্যিই উপকারী?

গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের উপকারিতাঃ

১. স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় ফিটনেসের যোগান দিতে পারে হালকা ব্যায়াম।
২. প্রসবের পর দ্রুত পূর্বের স্বাভাবিক ওজনে ফিরে যেতে সহায়তা করে।
৩. ঘুমের সমস্যা এবং স্ট্রেস কিছুটা হলেও দূর করে।
৪. মন ভালো রাখে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৫. গর্ভকালীন শারীরিক কিছু জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে। যেমন – গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং ব্লাড প্রেশারজনিত সমস্যাকে দূরে রাখে ব্যায়াম।
৬. শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা, শারীরিক অস্বস্তি আর মর্নিং সিকনেসকে ও অনেকটাই দূরে রাখা যায় নিয়মিত টুকটাক হালকা ব্যায়াম করলে।

কী ধরণের ব্যায়াম করবো গর্ভাবস্থায়? খুব ভারী কিছু না।

দিনে আধা ঘণ্টা হাঁটতে পারেন।
সাঁতার জানা থাকলে সাঁতার কাটতে পারেন।
ইয়োগা ইন্সট্রাকটরের সহায়তা নিয়ে প্রিন্যাটাল ইয়োগা (পদ্মাসন, ত্রিভুজাসন, ব্রিদিং এক্সারসাইজ ইত্যাদি) করতে পারেন।
সাপোর্ট সহকারে স্কোয়াটস (কয়েকটি বালিশ রেখে তাতে বসা এবং উঠে দাঁড়ানো, রিপিট করা)
কেগেল ব্যায়াম (Kegel Exercises) করতে পারেন।

Loading...

কেগেল ব্যায়ামের বিস্তারিত

প্রস্রাবের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং শ্রোণী এলাকা (পেলভিস) অর্থাৎ তলপেটের নিম্নভাগের মাংশপেশীর সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে। কেগেল ব্যায়াম শ্রোর্ণী মেঝের পেশীকে দৃঢ এবং শক্তিশালী করে যা জরায়ু, মূত্রথলি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। আপনি প্রায় যে কোনো সময়ে শুয়ে বা বসে কেগেল ব্যায়াম করতে পারেন।

পড়ুন  নবজাতকের নাভি বিষয়ক কিছু তথ্য

কেগেল ব্যায়ামের বিস্তারিত

প্রথমে পেশী খুঁজে নিতে হবে। যোনির ভিতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে পার্শ্ববর্তী পেশীগুলো সংকোচন করার চেষ্টা করুন। আপনার যোনি আঁটা এবং আপনার শ্রোর্ণী মেঝের পেশীগুলো ঊর্ধ্বাভিমুখী মনে হবে। তারপর পেশী শিথিল করে দিন। দেখবেন শ্রোণীপেশীগুলো আবার আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে।

প্রস্রাব করার সময় দু-একবার প্রস্রাব করার প্রবাহ বন্ধ করে দিন। সফল হলে বুঝলেন প্রাথমিক ধাপটা পার হতে পারছেন। (প্রস্রাব করার প্রবাহ বন্ধ করাটা বার বার বা অভ্যসে পরিণত করবেন না।) মূত্রথলি পরিপূর্ণ অবস্থায় বা প্রস্রাব করার সময় কেগেল ব্যায়াম করবেন না। এতে পেশী আরো শিথিল হয়ে যাবে বা প্রস্রাব করা অপূর্ণ থেকে যাবে যা মূত্রনালিতে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

এবার পূর্ণ পদ্ধতি। শ্রোণী এলাকা (পেলভিস) অর্থাৎ তলপেটের নিম্নভাগের মাংশপেশীর অবস্থান নির্ণয় করা হয়ে গেলে বা বুঝতে পারার পর মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি করবেন। তারপর চেয়ারে বসে বা মেঝে/বিছানায় শুয়ে পড়বেন। পেলভিস মাসল সংকোচন স করুন। ৫ সেকেণ্ড ধরে রাখুন। ৫ সেকেণ্ড পরে শিথিল করে দিন। এভাবে একটানা ৪/৫ বার করুন।

এভাবে ধীরে ধীরে ৫ সেকেণ্ডের জায়গায় ১০ সেকেণ্ড করে করার চেষ্টা করুন।

পড়ুন  গর্ভবতী মায়ের কোমর ব্যথার কারণ ও প্রতিকার

ব্যায়ামটি ১০ বার পুনরাবৃত্তি করে ৩ টি সেট করবেন এবং দিনে ৩ বার করার চেষ্টা করবেন।

নিচের যে কোন একটা উপসর্গ দেখা মাত্র ব্যায়াম বন্ধ করুন এবং এসব সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

মাথা ঘোরানো বা জ্ঞান হারানো
মাংশপেশীর দুর্বলতা
মাথা ব্যথা
বুকে ব্যথা
খিঁচুনি
যোনি থেকে রক্তক্ষরণ
যোনি থেকে তরল নির্গমন
গর্ভস্থ সন্তানের নড়াচড়া কমে যাওয়া
স্থির হয়ে বসার পরও হার্টবিট/হৃদস্পন্দন না কমা
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

ছবি – উইকি হাও ডট কম, পিন্টারেস্ট ডট কম

লিখেছেন – ফারহানা প্রীতি

ফেসবুক কমেন্ট

comments

About সাদিয়া প্রভা

সাদিয়া প্রভা , ইন্ডিয়ার Apex Group of Institutions এর BBA এর ছাত্রী ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিয়সক তথ্য নিয়ে লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.